Samakal:
2025-08-14@11:20:16 GMT

সেবা পেতে গিয়ে ক্লান্ত নাগরিক

Published: 29th, June 2025 GMT

সেবা পেতে গিয়ে ক্লান্ত নাগরিক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা বরখাস্ত। দায়িত্ব পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। নগরবাসীর সঙ্গে তাদের পরিচয় নেই। তাদের দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে প্রত্যাশিত সেবাবঞ্চিত নগরবাসী। বেশি সমস্যা হচ্ছে জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, চারিত্রিক সনদ, অবিবাহিত সনদ ও ওয়ারিশান সনদ পেতে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তারা নগরবাসীকে ভালো করে চেনেন না। সনদপত্রের আবেদন নানাভাবে যাচাই করতে গিয়ে কিছুটা দীর্ঘসূত্রতা হয়। নিজ নিজ দপ্তর সামলে কাউন্সিলর অফিসে বসে সেবা দেওয়া প্রায়ই সম্ভব হয় না।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০২৪ সালের ৯ মার্চ। মেয়রের পাশাপাশি ৩৩টি ওয়ার্ডে নারী সদস্যসহ ৪৫ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ৫ আগস্টের পর ওই পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। ৩৩ ওয়ার্ডের দায়িত্ব বণ্টন করা হয় ১৪ জন সরকারি কর্মকর্তাকে। 
ঘুরতে হয় দফায় দফায়
রিকশাচালক নবাব আলী ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আঙুলের ছাপ না মেলায় টিসিবির কার্ড পাচ্ছেন না। গত ২৭, ২৯ এপ্রিল ও ৪ মে এক সপ্তাহের মধ্যে তিন দফা কাউন্সিলর অফিসে গিয়েও নিজ সমস্যার সমাধান করতে পারেননি।
জন্মনিবন্ধনে ভুল ছিল পুলিশ লাইন এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলামের স্ত্রীর। তাই মেয়ের জন্মনিবন্ধন করাতে পারছিলেন না। গত নভেম্বরে ওই ভুল সংশোধনে আবেদন করেন মফিজুল। দুই মাস দৌড়ঝাঁপের পর জানুয়ারির শেষে কাজ হয়। সময়মতো মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি।
সব ওয়ার্ডের বাসিন্দারাই এমন দুর্ভোগের শিকার। এসব ব্যাপারে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা.

প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, ‘একটি বিভাগীয় অফিসের দায়িত্ব শেষ করে করপোরেশনের দায়িত্ব সামলানো কঠিন। কাউন্সিলর অফিসে কাজ করেন কম্পিউটার অপারেটররা।’ 
কাউন্সিলর অফিসে বসেন না কর্মকর্তা
৬ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন আলীর ছেলের পাসপোর্ট করতে নাগরিক সনদ দরকার। ২০ এপ্রিল থেকে এ জন্য কাউন্সিলর অফিসে ঘুরছেন তিনি। ২৮ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে হোসেন আলী বলছিলেন, ‘কাউন্সিলর থাকলে এটা সহজে নিতে পারতাম। অফিসে এলে দেখি, তালা দেওয়া থাকে। পাশের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলে, এখানে কোনো অফিসার আসেন না। কম্পিউটার অপারেটর নাকি আসেন মাঝেমধ্যে।’
সব ওয়ার্ডের চিত্রই মোটামুটি এমন। ৩, ৫ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক লুৎফুন নাহারকে ২৮ এপ্রিল দুপুর ৩টার দিকে কাউন্সিলর অফিসে পাওয়া যায়নি।
হতাশ হয়ে ফিরে যান দু-তিনজন সেবাপ্রার্থী। স্থানীয় পান দোকানি মনজুরুল হক জানান, অফিসে একজন অপারেটর আসেন। কোনো কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত আসেননি। লুৎফুন নাহার বলেন, ‘জরুরি কাজ থাকলে আমি করে দিই। একজন অফিস স্টাফ আছেন, তিনি প্রয়োজনীয় সই নিয়ে যান।’
গত সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন সওজ বিভাগের (ময়মনসিংহ সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাশেদুল আলম। গত ১৫ মে দুপুর আড়াইটার দিকে সড়ক ভবনের কার্যালয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘নিজ নিজ দপ্তরেই অনেক ব্যস্ততা; তবুও সরকার দায়িত্ব দিয়েছে– তাই পালন করতে হয়। আমরা যেহেতু এই এলাকার বাসিন্দা নই, তাই ওয়ারিশ সনদ দিতে একটু ঝামেলা হয়। মাঝেমধ্যে দু-একজন লোক আসেন আমার অফিসে।’
কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় নেই নগরবাসীর
নওমহল এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম হতাশার সুরে বলেন, আগে কাউন্সিলরদের কাছে বারবার ঘুরে হলেও সেবা পাওয়া যেত। এখন তাও মেলে না। 
এসব স্বীকার করেন ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজিয়া উদ্দিন। তাঁর ভাষ্য, নাগরিক সেবা জনপ্রতিনিধির কাজ। তবু সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তিনি।
কাউন্সিলররা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় জনগণের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সেই যোগাযোগ নেই– এটিই সেবা না পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় কারণ বলে মনে করেন ১৮ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহসিন মিয়া। তিনি বলেন, ‘অফিস শেষ করে কাউন্সিলর অফিসে বসতে হয়। আমি চাহিদামতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
বন্ধ হয়নি হয়রানি
৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনিসুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগের মতোই টাকা দিলে সেবা মেলে, না দিলে ঘুরতে হয়। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মচারী মুরাদের কাছে ভুল সংশোধনের জন্য গেলে হয়রানি করেন। অতিরিক্ত টাকা দিলেই কাজ করে দেন।
৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অফিসে কর্মচারীদের কাছে তাঁর সিল দেওয়া আছে। যাদের কাগজপত্র দরকার হয়, তারাই সিল মেরে দিয়ে দেয়।
কী বলছেন তারা
১০, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের চারবারের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর রোকশানা শিরিন বলেন, ‘সরকার আমাদের বাদ দিয়ে কর্মকর্তাদের বসিয়েছে। এখন জনগণ সেবা পাচ্ছে না। আমার একটি ওয়ার্ডে ৪ হাজার টিসিবির কার্ড ছিল, এখন পাঁচশতে নামানো হয়েছে।’ প্রতিটি ওয়ার্ডবাসীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি সইয়ের জন্য ১৫-৩০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাকিবুল ইসলাম বলেন, নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। সরকার পতনের পর বন্ধ হয়ে গেছে, এমন প্রকল্প পুনরায় দরপত্র দিয়ে শেষ করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, কাউন্সিলরদের সরিয়ে সিটি করপোরেশন সাজানো দেখে মনে হচ্ছে, নাগরিকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে অথবা বিশিষ্ট নাগরিকদের দায়িত্বে বসালে সমাধান হতে পারে।
এ সিটির প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। ওয়ার্ডের দায়িত্ব এত বড় কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে যে, তারা নিজ অফিস সামলে বাসিন্দাদের সময় দিতে পারেন না। এসব দায়িত্ব আরেকটু কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের দেওয়া হলে সেবার মান আরও বাড়বে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র নগরব স র চ লক র অফ স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ডলার কাছে নিতেই আর কিছু মনে নেই, ব্যবসায়ীর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লুট

চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া পথেরহাটের ভারতেশ্বরী প্লাজা মার্কেটের আবুধাবি স্টোরের দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা নানা পণ্য বিক্রি হয়। দোকানের মালিক ওয়াহিদুল আলম নিজেই ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে দুই বিদেশি ও বাংলাদেশি ক্রেতা আসেন দোকানে। ৫০ ডলারের একটি নোট দিয়ে বিনিময়ে বাংলাদেশি মুদ্রা চান তাঁরা। ওয়াহিদুল নোট নিয়ে ভালো করে দেখার জন্য চোখের কাছে নেন। এরপর তাঁর আর কিছু মনে নেই। পুরোপুরি যখন চেতনা ফিরে পেলেন, তখন দেখলেন তাঁর দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে লুট হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

দোকানের পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, টাকা নিয়ে খুব দ্রুত চলে যাচ্ছেন দেশি ও বিদেশি দুই প্রতারক। তবে আবুধাবি স্টোর নামের দোকানটিতে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় ভেতরে কী ঘটেছে তা দেখা যায়নি।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ধারণা, ডলারের মধ্যে ‘শয়তানের নিশ্বাস’ নামের রাসায়নিক ছিল। তার প্রভাবে তিনি সবকিছু ভুলে গেছেন। প্রতারকেরা ওই রাসায়নিক শুকিয়ে তাঁর টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এর আগেও ‘শয়তানের নিশ্বাস’ প্রয়োগ করে প্রতারণার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন ঘেঁটে জানা যাচ্ছে মূলত স্কোপোলামিন নামের একটি রাসায়নিক প্রয়োগ করে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে আসছে প্রতারকেরা। এই রাসায়নিকের প্রভাবে ক্ষণিকের জন্য মানুষের স্মৃতি, বিচারশক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে লোপ পায়। ওয়াহিদুল আলমের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছিল।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ৫০ ডলারের একটি নোট ভাঙানোর জন্য তাঁর দোকানে আসেন একজন বিদেশি ক্রেতা। তাঁর সঙ্গে একজন বাংলাদেশিও ছিলেন। নোটটি তিনি তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে ভালো করে দেখতে গিয়ে চেতনা হারান। প্রতারকেরা তাঁর ক্যাশ বাক্স থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টাক নিয়ে যায়।

জানতে চাইলে এক কিলোমিটার দূরে থাকা নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই ধরনের ঘটনার কোনো অভিযোগ তাঁদের কেউ জানায়নি। অভিযোগ দিলে তাঁরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখে প্রতারক চক্রকে খুঁজে বের করার জন্য কাজ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টের স্টেগেনের ‘দীর্ঘমেয়াদি চোট’, গার্সিয়াকে নিবন্ধন করাতে পারবে বার্সা
  • ধূমকেতুর জন্য রাজের প্রতীক্ষা শেষ
  • কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ৪ অভিযোগ
  • গণ–অভ্যুত্থানের সময় চানখাঁরপুলে পুলিশের পোশাকে লোকেরা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল
  • কেবিসির মঞ্চে সোফিয়া-ব্যোমিকারা, শুরু বিতর্ক
  • দয়া করে গাজায় যান: পোপ লিওর প্রতি ম্যাডোনার আহ্বান
  • পিএসজিকে বিদায় দোন্নারুম্মার, এনরিকে বললেন ‘আমি দায়ী’
  • গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল
  • কবর ভেঙে ফেলার আহ্বান ইসরায়েলি মন্ত্রীর
  • ডলার কাছে নিতেই আর কিছু মনে নেই, ব্যবসায়ীর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লুট