চলতি জুলাই মাসের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই চলছে ধারাবাহিক সংলাপ। বুধবার (২ জুলাই) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের আলোচনার সূচনায় তিনি এ কথা বলেন। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনা শুরুর আগে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “প্রতিদিন হয়তো বড় কোনো অর্জন হচ্ছে না, তবে আমরা এগোচ্ছি। দলীয় অবস্থান সবারই আছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগে আমরা আশাবাদী। মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।” 

তিনি আরো বলেন, “সংস্কার নিয়ে দেশের মানুষ আশাবাদী। আমরা চাই না কেউ পুরোনো অবস্থানে ফিরে যাক। প্রশ্ন হলো আমরা কেবল নিজেদের স্বার্থ দেখব, নাকি দেশের স্বার্থও বিবেচনায় আনব।” 

বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের সীমা এবং অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রথম দফায় ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু হয়। মূল লক্ষ্য, জুলাই মাসের মধ্যেই একটি ঐকমত্যভিত্তিক ‘জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করা।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “বেশির ভাগ দল নীতিগতভাবে দ্বিকক্ষীয় সংসদের পক্ষে। উচ্চকক্ষ গঠনে প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আসন নির্ধারণে একমত হয়েছে অনেকেই, তবে এখনও কিছু দল আপত্তি করছে।” 

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা আশাবাদী বড় পরিসরে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে এসে এই মাসেই একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে।”

ঢাকা/এএএম/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় সনদ

এছাড়াও পড়ুন:

পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে

বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন।

অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা যায়, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যেখানে বড় বড় পাথর ছিল, সেখানে এখন গর্ত। সব জায়গায় পাথর তুলে নেওয়ার চিহ্ন। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।

বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত রাখা, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

স্থানীয় প্রশাসনও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সম্প্রতি মত দিয়েছে। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। পরে হয় শুরু গণলুট। লুটের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানেও তাঁদের নাম এসেছে। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে গেছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

পাথর উত্তোলনে ‘ঐকমত্য’

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী

উল্লেখ্য, জাফলং (জাফলং-ডাউকি নদী) পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। জাফলংসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ আইনে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইনেও এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। বাকিটা চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ও সিলেট থেকে উত্তোলন করা পাথর দিয়ে।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের আগের অবস্থা। ছবিটি গত ৩০ এপ্রিল তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদে কী কী সংস্কার প্রস্তাব থাকছে
  • জুলাই সনদের খসড়া দলগুলোর কাছে
  • নতুন সংবিধানের দাবি পাশ কাটিয়ে গেছেন অধ্যাপক ইউনূস: আখতার হোসেন
  • সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে বিতর্কিত হতে পারে: বদিউল আলম
  • কাগজের লেখা রাজনৈতিক দলগুলো কতটা মানবে
  • ঐকমত‍্য কমিটি গঠনের পর
  • আইনে যা-ই থাকুক, প্রাধান্য পাবে জুলাই সনদের প্রস্তাব
  • পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে