ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে আজ রোববার শুরু হতে যাচ্ছে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। এতে থাকছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং।

সম্মেলেনে ব্রিকস সদস্যদেশগুলোর নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর বাণিজ্যনীতির সমালোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়ে নিজেদের মধ্যকার বিভাজন দূর করতে এখনো হিমশিম খাচ্ছে ফোরামটি। খবর এএফপি ও আল জাজিরার

উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর এই জোট বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের ৪০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। সম্মেলনের সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে জানাশোনা আছে এমন সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদস্যদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায্য আমদানি শুল্কের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান জানাতে প্রস্তুত।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা আধিপত্য নিয়ে গুরুতর উদ্বেগের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন উন্নয়নশীল দেশের নেতারা।

ব্রিকসের সদস্যদেশগুলো হলো- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই ১১টি উদীয়মান দেশের কূটনীতিকেরা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে যুক্তরাষ্ট্র বা দেশটির প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ করা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এরপরও এটাকে ওয়াশিংটনের প্রতি একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার মিত্র এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়কেই একের পর এক শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে নতুন শুল্কহার ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

থাকছেন না পুতিন ও শি

দুই দশক আগে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর একটি ফোরাম হিসেবে যাত্রা শুরু করা ব্রিকসকে এখন পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে চীনের নেতৃত্বাধীন পাল্টা ক্ষমতার ভারসাম্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের অনুপস্থিতির কারণে এই সম্মেলনের রাজনৈতিক প্রভাব কমে যাবে। চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১২ বছর দায়িত্ব পালনকালে এবারই প্রথম তিনি বার্ষিক এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং সম্মেলনে চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

এই সম্মেলনে থাকছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে ক্রেমলিন জানিয়েছে, সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন তিনি। এই সম্মেলনে থাকছেন না ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এখনো দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

টাঙ্গাইলে সহকারী শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে প্রাথমিকের পরীক্ষার হলে দায়িত্বে অভিভাবকেরা

পরীক্ষার হলে নেই চেনা শিক্ষকেরা, প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকেরা। কোথাও বাবা দায়িত্বে, কোথাও মা হাঁটাহাঁটি করছেন বেঞ্চের ফাঁকে। তিন দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির মধ্যে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ সোমবার এই দৃশ্য দেখা গেছে।

অভিভাবকেরা জানান, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু হলে উপজেলাজুড়ে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের ডাকছেন। আর সেই ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন‘স্কুলে আসার পর স্যাররা বলল আজ পরীক্ষা হবে না’৪৮ মিনিট আগে

শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। কর্মসূচিতে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তাঁরা। আজ সখীপুর উপজেলার ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নতুন সিদ্ধান্ত না আসায় আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকেরা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে বসে আছেন। পরীক্ষার হলগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন অভিভাবকেরা। তবে দু-একটি কক্ষে অভিভাবক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না। পরে প্রধান শিক্ষক আগ্রহী অভিভাবকদের খুঁজে এনে কক্ষের দায়িত্ব দিচ্ছিলেন।

শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।ফারজানা আক্তার, অভিভাবক

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতার। তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকেরা আমাকে কোনো সহযোগিতা করছেন না। এমনকি অভিভাবকদেরও পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছেন।’ তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আফরোজা আক্তার বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার চালাতে কোনো বাধা দিচ্ছি না, তবে সহযোগিতাও করছি না। প্রধান শিক্ষকই আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন না।’

এদিকে পরীক্ষা গ্রহণে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। তাঁরা বিদ্যালয়টির মূল ফটকের সামনে হইচই করে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। ফারজানা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের পরিবর্তে অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা চালানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন।

আরও পড়ুন‘শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, বাজে নজির হয়ে থাকবে’৩ ঘণ্টা আগে

আরেকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন, এটা ভালো কথা। কিন্তু খুদে শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।

এ ছাড়া পরীক্ষার হলে অভিভাবকদের দায়িত্ব পালনের সময় নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ‘যেসব অভিভাবক পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা নিজেদের ও পরিচিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়েছেন।

পরীক্ষা গ্রহণে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সখীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত এক অভিভাবক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।’

আমার বাচ্চা যে কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিল, সে কক্ষে দায়িত্ব পালন করিনি। আমি চেষ্টা করেছি, সহকারী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধেই মূলত এটি করেছি।পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত এক অভিভাবকআরও পড়ুন‘স্কুলে এসে দেখছি পরীক্ষা স্থগিত’৫ ঘণ্টা আগে

উপজেলার দু–একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কালিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সক্রিয় কর্মী মুক্তি মালেক। তিনি বলেন, তবে অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বার্ষিক পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে বিরত ছিলেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক অধিদপ্তর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। তবে কিছু বিদ্যালয়ে অভিভাবকেরা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে শুনেছি ও দেখেছি। তবে আমি মনে করি, সহকারী শিক্ষকদের অন্তত পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করা উচিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ