Samakal:
2025-07-08@23:33:51 GMT

লুভর মিউজিয়াম

Published: 8th, July 2025 GMT

লুভর মিউজিয়াম

প্যারিস– নামটি উচ্চারণ করলেই যেন এক মোহময় ধ্বনি বয়ে যায় হৃদয়ের ভেতর দিয়ে। এ শহর প্রেমের, শিল্পের, সভ্যতার। প্যারিসের ঠিক মধ্যখানে দাঁড়িয়ে আছে এক ইতিহাসের পাহারাদার– লুভর মিউজিয়াম। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ও বৃহৎ জাদুঘর এটি। যার প্রতিটি প্রাচীর যেন সময়ের পাতায় অক্ষরে অক্ষরে লেখা একেকটি গল্প। সেই গল্পের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে আমি যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম কয়েক শতাব্দী পেছনের কোনো পৃথিবীতে। লিখেছেন অনিন্দ্য মামুন

সময়টা গ্রীষ্মকাল। তবে প্যারিসের আবহাওয়া তখন না গরম না ঠান্ডা। সেদিন প্যারিসের আকাশ ছিল নীলচে ধূসর। হালকা ঠান্ডা বাতাসে ভেসে আসছিল একটা অলৌকিক আমন্ত্রণ– চলো সময়কে ছুঁয়ে দেখা যাক। সে আমন্ত্রণেই প্যারিসের মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা মেট্রো ধরে ছুটে চলা। কখনও হেঁটে, কখনও-বা মেট্রোতে চলার দারুণ অনুভূতি সামনে এসে দাঁড়ালাম লুভর পিরামিডের কাচ দিয়ে নির্মিত সেই জ্যামিতিক অলংকারের সামনে। যেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া আর প্রাচীনতার বিশালতা একসঙ্গে মিলেমিশে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞান সৃষ্টি করেছে। পিরামিডের নিচের প্রবেশপথ দিয়ে যখন মিউজিয়ামের ভেতরে ঢুকি, মনে হয় কোনো সুড়ঙ্গপথে ঢুকেছি; যা আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল অতীতের মহাকাব্যে।

লুভর মিউজিয়াম যেন বহু শতাব্দীর বিবর্তনের গল্প। ১১৯০ সালে রাজা ফিলিপ অগাস্টাস এটি নির্মাণ করেন একটি সামরিক দুর্গ হিসেবে, প্যারিস শহরকে বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে। তখন শহরের সীমানা ছিল অনেক ছোট আর লুভর ছিল সেই প্রাচীরঘেরা শহরের রক্ষাকবচ। ১৫৪৬ সালে রাজা ফ্রাঁসোয়া প্রথম এ দুর্গকে রূপান্তর করেন রাজপ্রাসাদে। তিনিই প্রথম শুরু করেন শিল্প সংগ্রহ। ঠিক সেখান থেকেই জন্ম নেয় লুভরের ভবিষ্যৎ পরিচয়। এ রাজাই লিওনার্দো দা ভিঞ্চিকে ফ্রান্সে আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করেন মোনালিসা। পরে ১৭৯৩ সালে ফরাসি বিপ্লবের উত্তাল সময়ে লুভর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তখন এর সংগ্রহ ছিল মাত্র ৫০০টির মতো; যা আজ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজারেরও বেশি শিল্পকর্মে।
ভেতরে ঢুকেই চোখ ছানাবড়া। চারপাশে শুধু ছবি, মূর্তি, দেয়ালচিত্র, শিল্পকর্ম। মিসরের শবাধার, গ্রিক দেবতাদের ভাস্কর্য, রেনেসাঁ যুগের চিত্রকর্ম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ভারতীয় মূর্তি– পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের শিল্প যেন এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
যেদিন দা ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’র সামনে দাঁড়ালাম, মনে হলো আমি সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। ওই রহস্যময় হাসি আমাকে চুপ করিয়ে দিল। শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়ার পরও যে ছবি লাখো-কোটি দর্শককে একসঙ্গে স্তব্ধ করে দিতে পারে– তা তো কেবল মোনালিসাই। 

মোনালিসার পাশে হেঁটে গেলে আপনি দেখতে পাবেন আরেক বিস্ময়– ভেনাস দে মিলো। দুই হাত ভাঙা, তবু অপূর্ব নারীত্বে পূর্ণ এই গ্রিক দেবীর মূর্তি যেন এক শাশ্বত সৌন্দর্যের চিহ্ন। আবার সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে ‘উইংড ভিক্টরি অব সামোথ্রেস’, ডানাওয়ালা এক দেবী, যিনি যেন বিজয়ের অঙ্গভঙ্গিতে হাঁটছেন সময়ের বুকে।
একটি হলঘরে দেখলাম মিসরের এক ফেরাউনের মমি সংরক্ষিত আছে। তার চোখ দুটো বন্ধ, অথচ মনে হলো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। পাশেই এক প্রাচীন স্ফিংক্স– মিসরের মরুভূমি পেরিয়ে এসে যেন এখানে বসে আছে ক্লান্ত হয়ে।

আরেক করিডোরে দেখি জ্যাক-লুই ডেভিডের বিশাল ক্যানভাস– ‘দ্য করোনেশন অব নেপোলিয়ন’, যেখানে সম্রাট নিজেই নিজের মুকুট পরাচ্ছেন। এ ছবির প্রতিটি চরিত্র যেন জীবন্ত, প্রতিটি দৃষ্টির ভঙ্গিতে গল্প।
লুভরের সবচেয়ে মোহময় দিকটি ছিল এর স্থাপত্য। দৃষ্টিনন্দন দেয়াল, উঁচু ছাদ, ধ্রুপদি কারুকাজে পূর্ণ প্রতিটি করিডোর– প্রতিটি কোণেই যেন একেকটা জীবন্ত উপন্যাস। মিউজিয়ামের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই যেন ইতিহাসের নানা চরিত্র সামনে এসে দাঁড়ায়। কারও হাতে রংতুলি, কেউ বর্ম পরে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে, কেউবা চুপচাপ বসে জীবনের দুর্বোধ্যতা আঁকছে ক্যানভাসে।
এই জাদুঘর শুধু জ্ঞান নয়, এক গভীর আবেগের আধার। শিল্পের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা এখানে এসে যেন আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে শুরু করে আধুনিক বিমূর্ত চিত্র পর্যন্ত– সবকিছুই মানুষ রেখে গেছে ভবিষ্যতের জন্য। 

লুভরে হাঁটতে হাঁটতে একটা অদ্ভুত বিষণ্নতা গ্রাস করেছিল আমাকে। কারণ এত সৌন্দর্য, এত ইতিহাস দেখে প্রশ্ন জাগে– আমরা কী রেখে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য? এই বিশ্ব কি এখনও শিল্পের প্রতি ততটাই শ্রদ্ধাশীল আছে, যতটা ছিল দা ভিঞ্চির যুগে?
তবে পরক্ষণেই মনে হলো, শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় প্রমাণই তো হলো দর্শক।
লুভর শুধু একটি মিউজিয়াম নয়, এটি এক চলমান ইতিহাসের মহাকাব্য। এখানে একটি ছবি মানে কেবল রং নয়, একটি মূর্তি মানে শুধু পাথর নয়, বরং একটি জাতির আত্মা, একটি সভ্যতার কল্পনা, একটি মানুষের অশ্রু, আনন্দ, ভালোবাসা।

ফিরে আসার সময় আমি আবার দাঁড়ালাম পিরামিডের নিচে। তখন সন্ধ্যা নামছে প্যারিসে। লুভরের চারপাশে হালকা হলুদ আলো জ্বলে উঠেছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি– শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে, কেউ ছবি তুলছে, কেউ বসে আছে চুপচাপ, কেউ হয়তো ভালোবাসায় মুখ ডুবিয়েছে। আমি ভাবছি– লুভর হয়তো কোনোদিন আমায় ভুলে যাবে, কিন্তু আমি? আমি তো চিরকাল এ অভিজ্ঞতা বহন করব। কারণ, শিল্প একবার হৃদয়ে বাসা বাঁধলে তা আর কোনোদিন চলে যায় না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর যটক

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে নৈশভোজ, ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিলেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল সোমবার বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন। এ জন্য নোবেল কমিটির কাছে একটি চিঠিও লিখেছেন নেতানিয়াহু। ওই চিঠির একটি কপি তিনি ট্রাম্পের হাতে তুলে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে গতকাল ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে চিঠির কপি তুলে দেন নেতানিয়াহু। এ সময় দুই নেতা নৈশভোজে অংশ নেন। নেতানিয়াহু তখন বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) আমাদের কথায় একের পর এক দেশে, একের পর এক অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন।’

ট্রাম্প বছরের পর বছর ধরে সমর্থক ও অনুগত আইনপ্রণেতাদের কাছ থেকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য একাধিকবার মনোনয়ন পেয়েছেন। যদিও পুরস্কার এখনো অধরাই রয়ে গেছে। মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার না পাওয়ায় ট্রাম্প বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যেই বিরক্তি দেখিয়েছেন।

রিপাবলিকান রাজনীতিক ট্রাম্পের মতে, ভারত-পাকিস্তান এবং সার্বিয়া-কসোভোর মধ্যকার সংঘাতে লাগাম টানার ক্ষেত্রে তাঁর মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নরওয়ের নোবেল কমিটি উপেক্ষা করেছে। মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে ‘শান্তি বজায় রাখা’ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সই করা ‘আব্রাহাম চুক্তি’র মধ্যস্থতার জন্যও কৃতিত্ব দাবি করেন ট্রাম্প।

নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই নিজেকে একজন ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন ট্রাম্প। তিনি ইউক্রেন আর ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সর্বাত্মক যুদ্ধ বন্ধে নিজের আলোচনার দক্ষতা কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউস সফরে গেলেন নেতানিয়াহু। এমন এক সময়ে এই দুই নেতা সাক্ষাৎ করলেন, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির গতিকে কাজে লাগানোর আশা করছেন।

আরও পড়ুনট্রাম্প–নেতানিয়াহু বৈঠকে কি গাজা যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি হতে পারে০৭ জুলাই ২০২৫

নৈশভোজের শুরুতে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের কাছে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ক্ষেত্রে বাধার বিষয়ে জানতে চান। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি মনে করি না যে কোনো কিছু আটকে আছে; বরং আমার মনে হয়, সবকিছু খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে।’

লম্বা একটি টেবিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি বসে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, গাজায় প্রায় ২২ মাসে ধরে চলা সংঘাত বন্ধে ফিলিস্তিনের হামাস ইচ্ছুক হবে বলে মনে করছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘তারা সাক্ষাৎ করতে চায়। তারা যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে চায়।’

ওয়াশিংটনে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু যখন নৈশভোজে অংশ নেন, তখন কাতারের দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজায় অধরা যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনার দ্বিতীয় দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুনট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, এটা কি গাজায় যুদ্ধ থামাতে পারবে১৬ ঘণ্টা আগে

এদিকে পূর্ণাঙ্গ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েল গাজা উপত্যকার ওপর সব সময় ‘নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ’ বজায় রাখবে। তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ বলবে এটা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র নয়। আদতে এটা একটি রাষ্ট্র নয়। আমাদের কিছুই যায় আসে না।’

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর নৈশভোজ চলার সময় হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেন কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী। তাঁরা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ তুলে নানা রকম স্লোগান দেন।

আরও পড়ুনহামাস গাজার ৮০% নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে: শীর্ষ কর্মকর্তা০৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্যরকম গহনা
  • ফেসবুকে পরিচয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে তরুণী প্রেম, থানায় সমাপ্তি 
  • নিশো-চঞ্চল একসঙ্গে ‘দম’
  • একসঙ্গে নৈশভোজ, ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিলেন নেতানিয়াহু
  • কী করে বুঝবেন হাড়ে ইনফেকশন
  • জীবনের স্রোত
  •  ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’ প্রিমিয়ার শোতে উঠে এলো গণঅভ্যুত্থানের তথ্যচিত্র
  • আমরা কখনও আপস করিনি, দেশ গঠনের এই যাত্রাতেও করব না: নাহিদ ইসলাম 
  • আমরা কখনও আপোস করিনি, দেশ গঠনের এই যাত্রাতেও করব না: নাহিদ ইসলাম