‘এক পোয়া কাঁচা মরিচ পাওয়া গেল ৮০ টাকায়, আগে এই দামে মিলত এক কেজি’
Published: 11th, July 2025 GMT
রাজশাহীতে কয়েক দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহীর কয়েকটি কাঁচা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাত্র ৫ দিন আগেও এর দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি ছিল বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তাঁদের দাবি, টানা বৃষ্টির কারণেই মরিচের এই বাড়তি দাম।
আজ সকাল ৭টার দিকে রাজশাহী নগর–সংলগ্ন পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পর্যাপ্ত মরিচ নেই। যেসব মরিচ আছে, সেগুলোর বেশির ভাগই পাকা। এই মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। আর অপেক্ষাকৃত ভালো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতা আলী হোসেন জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গাছে মরিচ নেই। এ কারণে দাম বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ৩৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টি কমলে হয়তো দাম কমে যাবে। আর বৃষ্টি বাড়তে থাকলে মরিচগাছ মরে যাবে, তখন দাম আরও বাড়বে।
বিক্রির জন্য এই হাটে কয়েক কেজি মরিচ আনেন পারিলা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন। তিনি জানান, পারিলা গ্রামে তাঁর কয়েক শতাংশ মরিচখেতে কয়েক দিন ধরে পানি জমে আছে। খেতে নামা যাচ্ছে না। খেতের পাশ থেকে কিছু মরিচ তুলেছেন। সেগুলো বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। তিনি ৩০০ টাকা কেজি দরে দাম চাচ্ছেন। তাঁর আশঙ্কা, আর দুই-তিন দিন এমন বৃষ্টি হলে মরিচখেত নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কিছু গাছ পচে গেছে। পানি নামার জায়গা নেই।
হাটটিতে অপেক্ষাকৃত ভালো মরিচ নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ী তসলিম। তিনি এক কৃষকের কাছ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে এসব মরিচ কিনেছেন। পরে সেই মরিচ ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। তসলিম বলেন, বাজারে মরিচ নেই বললেই চলে। অথচ সেখান থেকেই রাজধানী ঢাকায় মরিচ পাঠানো হয়। এই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই কেজি মরিচ কিনে নেন হায়দার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে আজ অনুষ্ঠান আছে। এতে মরিচ লাগবেই। এ কারণে এত দাম দিয়েও মরিচ কিনতে হলো।’
নগরের বিনোদপুর ও সাহেববাজার এলাকার কাঁচাবাজারেও মরিচের ঘাটতি নজরে পড়েছে। সেখানে মানভেদে কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় মরিচ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এসব এলাকার বিক্রেতারা জানান, রোদ না উঠলে দাম কমবে না। বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী রায়হান আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে মরিচের সরবরাহ নেই বললেই চলে।
নগরের সাহেববাজার এলাকায় ২৫০ গ্রাম মরিচ কেনেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আজকে এক পোয়া মরিচ পাওয়া গেল ৮০ টাকায়। তাও মরিচ খুব ভালো না। অথচ কয়েক দিন আগে ৮০ টাকাতে পুরো এক কেজি মরিচ পাওয়া যেত।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে দুজন নিহতের ঘটনায় হত্যাসহ ৩ মামলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে হামলায় দুই ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিহত মিলন আলীর ছেলে সাদেক আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ ছাড়া হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে।
নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হত্যা মামলায় ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলা ছাড়া হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। সব কটি মামলা করেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম (তুহিন) ও আবু তাহের (খোকন) পক্ষের কর্মীরা।
ওসি মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, পুলিশ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। স্থানীয় গ্রামবাসী এজাহারভুক্ত এক আসামির জামাতাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। হামলাকারীরা আমিনুল ইসলামের অনুসারী হলেও মামলায় আমিনুল ইসলামকে আসামি করা হয়নি।
গত মঙ্গলবার নাচোল উপজেলার মারকইল এলাকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম ও আবু তাহেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে ওই ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৪ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় মিলন আলী ও রাতে আলম আলী নামের দুই ভাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে মারকইল সাহাপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত মিলন ও আলম আলীর লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন স্বজনেরা। একই হামলায় আহত–নিহত ব্যক্তিদের দুই ভাই মো. আমিরুল ও মো. শরিফুল এবং ভাতিজা মো. তুষার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুই ভাইয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নেওয়ার জন্য গ্রামে এসেছেন। স্থানীয় ফুলবাড়ি, সনকার, মারকইল গ্রামের যৌথ কবরস্থানে তাঁদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
নিহতের স্বজনেরা জানান, হামলাকারীরা নিহত দুই ভাইয়ের বাড়ির জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে চার ভাই ও দুই ভাতিজাকে গুরুতর আহত করেন। মিলন আলীর ছেলে রাব্বানী এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুনচাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে হামলায় আহত ১৪, বাড়িঘর ভাঙচুর১৪ অক্টোবর ২০২৫বাড়ির বাইরে চারদিক খোলা একটি ছোট চালের নিচে দড়ির খাটে শুইয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতাল থেকে আসা আমিরুল ইসলামকে। তাঁর এক পা ভাঙা। পায়ের পাতা থেকে উরু পর্যন্ত প্লাস্টার করা হয়েছে। তাঁকে ঘিরে কাঁদছিলেন তারা বানু নামে ছোট বোন ও তাঁদের এক ফুপু।
অপ্রকৃতিস্থের মতো করে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই ভাইকে আল্লাহর কাছে জমা দিয়্যা আইনু। চার ভাই, দুই ভাতিজা গেছনু দুই গাড়িতে কইর্যা। ফিইর্যা আইনু এক গাড়িতে। এক ভাতিজাও আল্লাহর কাছে বুঝিন চইল্যা যাইবে। ভালো হয়্যাছে, ভালো হয়্যাছে! এ্যার চাহ্যা আর কী ভালো হইবে। সব আল্লাহর ইচ্ছা।’
পুলিশ সুপার রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, রোববার আমিনুল ইসলামের অনুসারী তরিকুল আলমকে সালাম গ্রুপের লোকজন মারধর করেন। এর জেরে মঙ্গলবার আমিনুলের লোকজন ওই হামলা চালান।
আরও পড়ুননাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের২২ ঘণ্টা আগে