Prothomalo:
2025-11-17@12:24:41 GMT

ছোট হচ্ছে হাতির জগৎ 

Published: 12th, August 2025 GMT

কয়েক দশক আগেও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল হাতির বিচরণক্ষেত্র। এ অঞ্চলজুড়ে খাবার, পানি আর প্রজননের প্রয়োজনে হাতির পাল এক আবাসস্থল থেকে অন্য আবাসস্থলে যাতায়াত করত। রোহিঙ্গা বসতি, সামরিক স্থাপনা, সীমান্তে কাঁটাতার, পুঁতে রাখা মাইন ও রেল অবকাঠামোর নির্মাণে সংকুচিত হয়ে এসেছে হাতির চলাচল।

হাতির আবাসস্থলে বড় আকারের প্রথম আঘাতটা আসে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে, যখন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা উখিয়া ও টেকনাফের গহিন বনে আশ্রয় নেয়। উখিয়ায় হাতির মূল আবাস হিসেবে চিহ্নিত প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি দখল করে গড়ে ওঠে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসতি। 

অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের তিনটি বনের ভেতর দিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে চালু হয় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। এখানে হাতির ১৬টি ক্রসিং পয়েন্ট ও তিনটি করিডরের ওপর দিয়ে রেলপথ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণের জোট আইইউসিএনের এক জরিপে দেশের হাতির মোট সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ২৬৮টি। একই বছর আইইউসিএন হাতিকে মহাবিপদাপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ৯ বছরে হাতি মারা গেছে ১৪৬টি। 

আইইউসিএন ২০১৩-২০১৬ সাল মেয়াদে বাংলাদেশে হাতির করিডর চিহ্নিত করতে একটা সমীক্ষা চালায়। ‘অ্যাটলাস: এলিফ্যান্ট রুটস অ্যান্ড করিডরস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই সমীক্ষায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ১২টি করিডর শনাক্ত করা হয়। সেগুলোর মধ্যে আটটি করিডর পড়েছে কক্সবাজার অঞ্চলে। বাকিগুলো চট্টগ্রামে।

বন অধিদপ্তরের অধীন চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াসিন নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতির ১২টি করিডরের মধ্যে কোনোটি দখল, কোনোটি অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে হাতির চলাচলের নির্বিঘ্ন পথ আর অবশিষ্ট নেই। এ ছাড়া হাতির চলাচলের পথজুড়ে (করিডর) গড়ে উঠেছে শত শত মাছের খামার, পানবরজ ও রেলপথ। হাতিকে বাঁচাতে হলে প্রশাসন, বন বিভাগ সবার সম্মিলিত প্রয়াস দরকার।

আজ আন্তর্জাতিক হাতি দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘মাতৃতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও স্মৃতি’। 

আটকে পড়েছে ৩৫টি হাতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, বান্দরবানের ঘুমধুম করিডর হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির ভেতর দিয়ে মিয়ানমারে যাতায়াত করত হাতির পাল। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের আগমনের পর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলে সে করিডরটি বন্ধ হয়ে যায়। করিডর বন্ধ হয়ে টেকনাফ ও উখিয়া অঞ্চলে ৩৫টি হাতি আটকা পড়েছে।

অন্যদিকে কক্সবাজারের রেজু খালের পাশ দিয়ে আরেকটি করিডর ছিল। যেটার এক পাশে গড়ে উঠেছে সামরিক স্থাপনা, অন্যদিকে এখানে হয়েছে কুমির ও মাছের খামার। ফলে করিডরটাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

প্রাণিবিদ্যার এ অধ্যাপক বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে বনের ২৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। রেলপথ নির্মাণের সময় হাতি চলাচলের জন্য একটা ওভারপাস ও দুটি আন্ডারপাস করা হলেও এগুলো হাতির যাতায়াতের উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়নি। এটিও হাতির জন্য একটা বড় হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে এখন। এর মধ্যে ট্রেনের আঘাতে একটি হাতি মারা গেছে। 

এম এ আজিজ বলেন, এভাবে করিডর বন্ধ হয়ে আটকে পড়ার কারণে হাতি ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন বিভাগ সম্প্রতি হাতি রক্ষায় একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। হাতির সংকটগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত মাঠপর্যায়ে হাতি সংরক্ষণে কাজ করতে হবে। 

কতটা কাজে আসছে হাতির ওভারপাস

চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রায় ৭০০ মিটার উত্তরে জাঙ্গালিয়া এলাকায় রেললাইনের ওপর নির্মিত হাতির ওভারপাসটিতে রোববার বিকেলে দেখা যায়, ওভারপাসের ওপরে হাতির খাদ্য হিসেবে লাগানো কলাগাছ ও বাঁশঝাড় অক্ষত আছে। ওভারপাস এলাকায় হাতির পায়ের ছাপ ও বিষ্ঠা দেখা যায়নি। তবে ওভারপাসের ওপর দিয়ে মানুষজন চলাচল করতে দেখা গেছে। ওভারপাসের প্রবেশমুখে গরুর পায়ের ছাপ দেখা গেছে।

ওভারপাস এলাকায় কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দুজন হলেন কাইছার খান ও নাছির উদ্দিন। তাঁরা জানান, ঠিক কবে ওভারপাস দিয়ে হাতি চলাচল করেছে, তা তাঁরা নিশ্চিত নন। তবে অন্তত গত ছয় মাসের মধ্যে হাতি চলাচলের দৃশ্য তাঁরা দেখেননি বা এমনটি কারও কাছে শোনেননি। ওভারপাস দিয়ে দীর্ঘদিন হাতি চলাচল না করলেও স্থানীয় লোকেরা নিয়মিত গরু-ছাগল পারাপার করেন।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পরিবেশবিষয়ক পরামর্শক আসিফ ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত ক্যামেরা বসাচ্ছি। এসব ক্যামেরার দুই পাশে ৫০ মিটার ও সামনে ১০০ মিটারের মধ্যে হাতির উপস্থিতি পাওয়া গেলে ট্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। জুন মাসে ওভারপাস দিয়ে মাত্র দুবার হাতি চলাচল করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ওভারপাস দিয়ে হাতির চেয়ে মানুষের চলাচল বেশি পেয়েছি আমরা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র লপথ ন প রথম র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ