ধারাভাষ্যে সুনীল গাভাস্কারের পাশাপাশি তাঁকেও ভারতীয় ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর বলা যায়। দরাজ কণ্ঠ ও খেলার বিশ্লেষণে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন রবি শাস্ত্রী। খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জেতা বাঁহাতি এই স্পিন অলরাউন্ডার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মেরেছেন ছয় বলে ছয় ছক্কাও। ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ভারতের হয়ে ৮০ টেস্টে করেছেন ৩৮৩০ রান। বোলিংয়ে নিয়েছেন ১৫১ উইকেট। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘স্টারগেজিং: দ্য প্লেয়ার্স ইন মাই লাইফ’। যেখানে লার্নিং ইন দ্য বক্স নামে একটা অধ্যায়ে শাস্ত্রী লিখেছেন তাঁর চোখে সেরা পাঁচ ধারাভাষ্য শিক্ষকের কথা। রিচি বেনো, গ্রেগ চ্যাপেল, ব্যারি রিচার্ডস, টনি গ্রেগ ও নাসের হুসেইন—কীভাবে এই তারকারা তাঁর ধারাভাষ্য ক্যারিয়ারকে নতুন রূপ দিয়েছেন, সেই গল্পই উঠে এসেছে শাস্ত্রীর লেখায়.

..কার সম্পর্কে কী লিখেছেন রবি শাস্ত্রীরিচি বেনো

রিচি বেনো শুধু পঞ্চাশের শেষ থেকে ষাটের শুরুর দিকের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারই ছিলেন না, তিনি সেই সময়ের অন্যতম সেরা অধিনায়কও। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে এই অস্ট্রেলিয়ান হয়ে ওঠেন ক্রিকেটের সবচেয়ে খ্যাতিমান টিভি ধারাভাষ্যকার।
আমার খেলোয়াড়ি দিনগুলোতে তাঁকে দেখে একটু ভয়ই পেতাম বলতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ায় চ্যানেল নাইনে কিংবা ইংল্যান্ডে বিবিসির হয়ে দায়িত্ব পালনের সময় কয়েকবার আলাপ হয়েছে। কিন্তু কথাবার্তা তেমন এগোয়নি, কারণ আমি প্রায় জড়সড় হয়ে যেতাম। তবু তখন থেকেই তাঁর আচরণে মুগ্ধ ছিলাম—একেবারে পেশাদার, নিখুঁত। চুলের একটা গোছা এলোমেলো নয়, শার্টে কোনো ভাঁজ নেই, আর টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে ব্লেজারের পকেট রুমালও ঠিকঠাক জায়গায়। একেবারে ঝকঝকে।

আরও পড়ুনইমরান খানকে মা বলেছিলেন, ‘বিদেশি বউ আনিস না’১১ আগস্ট ২০২৫

অনেকে ভাবত, এটা তাঁর অহংকার। আসলে তা নয়। তিনি বুঝেছিলেন টিভি মানে নিখুঁত ভিজ্যুয়াল, আর ক্যামেরা কোনো ছাড় দেয় না। তাঁর কাছ থেকেই আমি শিখেছিলাম—ক্যামেরাকে বন্ধু বানাতে না পারলে দর্শকের মন জয় করা যায় না। টিভি এতটা নির্মম যে সামান্য অগোছালোভাবও বিশাল ভুলের মতো চোখে লাগে। রিচি এই ভুলের সুযোগই রাখতেন না।

‘ক্রিকেটের কণ্ঠস্বর’ ছিলেন রিচি বেনো

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ