অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক অধ্যাপক আবুল বারকাতের অবিলম্বে জামিনে মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১২২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা মানবিক বিবেচনায় তাঁকে অবিলম্বে জামিনে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল বারকাতকে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অধ্যাপক বারকাত গত প্রায় ৪০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন।

বিবৃতিতে নাগরিকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা অধ্যাপক বারকাতের সরল-নির্মোহ প্রাত্যহিক জীবনযাপন দেখেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে জানেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই তাঁকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণ করা তাঁদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

৭২ বছর বয়সী অধ্যাপক বারকাত দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, স্ট্রোক-পরবর্তী জটিলতা, ফুসফুসের সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন কারণে দৈনিক তিন বেলা ওষুধ সেবন করেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অধ্যাপক বারকাতের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ব্যাপারে তাঁরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। এ কারণে মানবিক বিবেচনায় অধ্যাপক বারকাতের অবিলম্বে জামিনে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, জেড আই খান পান্না, রাশেদা কে চৌধূরী, শিরিন প.

হক, খুশী কবির, শাহীন আনাম, অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক মো. ফেরদৌস হোসেন, স্বপন আদনান, মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক সেলিম রায়হান, শামসুল হুদা, রুমানা হক, সুব্রত চৌধুরী, সঞ্জীব দ্রং, সাঈদ আহমেদ, মনীন্দ্র কুমার নাথ, তসলিমা ইসলাম, কাজল দেবনাথ, অধ্যাপক অতনু রব্বানী, দীপায়ন খীসা, এস এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব রক ত র

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ