পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী
Published: 19th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মাথা ও শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন।
ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অনশনের সময় তাঁর পেছনে রাখা ব্যানারে লেখা ছিল—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’।
আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটাকে নির্মূল করার জন্যই আমার এ কর্মসূচি। জুলাই আন্দোলনে যে কোটার বিরুদ্ধে এত রক্তপাত, এত মৃত্যু, স্বৈরশাসকের পতন হলো, সেই কোটা আবার ফিরেছে। আমি কোটার পক্ষে নই। যদি কোটা দেওয়া হয়, সেটা কৃষক-শ্রমিক-মজুরের সন্তানদের দেওয়া হোক। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে। আমি কোনো খাবার-পানি খাব না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। রাতে এখানেই অবস্থান করব।’
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে এ কোটা ফিরতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন এ সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানান।
কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের রাকসু নির্বাচনে শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটাই হবে। কারণ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত না হলে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
দাবিগুলো হলো— আসন্ন জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত করতে হবে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে; সব সংগঠনকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জবির প্রধান সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যখন জকসুর দাবিতে অনশন করছিলাম, তখন প্রশাসন ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি মহল নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে।”
তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওই মাসে নির্বাচন অসম্ভব। তাই ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা জানতে চাই, নির্বাচন পেছানোর মধ্য দিয়ে জকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কিনা। পুরান ঢাকাকে অস্থিতিশীল করে একটি মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ভোট হবে জকসু নির্বাচন—তা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী