ঝুলে থাকা সেই তরুণকে গুলি করেছিলেন পুলিশের ২ সদস্য
Published: 4th, November 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় আজ মঙ্গলবার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম কিবরিয়া খান। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন বাড্ডা থানায় কর্মরত।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড ধরে ঝুলে থাকা এক তরুণকে গুলি করেছিলেন এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এ ঘটনার ভিডিও তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তারিকুল তখন রামপুরা থানায় আর চঞ্চল রামপুরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৯ জুলাই খিলগাঁও অঞ্চলের তৎকালীন এডিসি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে রামপুরা থানায় একটি সভা হয়। সেই সভায় ভিডিওটি সবাইকে দেখানো হয়। সেখানে উপস্থিত সবাই ভিডিওটি দেখে এসআই তারিকুল ও এএসআই চঞ্চলকে শনাক্ত করেন।
পরে জানা যায়, ওই তরুণের নাম আমির হোসেন। তিনি তখন আফতাবনগরে একটি দোকানের কর্মী ছিলেন। তাঁর পায়ে ছয়টি গুলি লেগেছিল। তিনি বেঁচে আছেন।
জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি থানায় ছিলেন। তখন থানার বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারেন হাবিবুর রহমান (ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার) আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে (হাঁটু গেড়ে বসে) গিয়ে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশের এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে থানার বেতার অপারেটর আব্দুর রহমান বেতার বার্তার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। তখন ওসি বিটিভি ভবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেই বার্তা পেয়ে খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি (তৎকালীন) রাশেদুল ইসলাম ও ওসি (তৎকালীন) মশিউর রহমান বিজিবির এপিসি নিয়ে সোয়া দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে রামপুরা থানায় আসেন। সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের (রাশেদুল ও মশিউর) নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে বনশ্রী জামে মসজিদের পাশে নাদিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামের একজন নিহত এবং মুসা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারেন।
গত বছরের ২১ জুলাই কিংবা ২২ জুলাই তৎকালীন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রামপুরা থানায় এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ওসিকে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন গোলাম কিবরিয়া।
পুলিশের আরেক সদস্য কনস্টেবল (এখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত) আবু বকর সিদ্দিকও এ মামলায় আজ জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসআই তারিকুল, এএসআই চঞ্চলসহ পাঁচজন আসামি।
এ মামলায় আজ কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক নামের আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলাটির পাঁচ আসামি হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি মো.
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এসআই ত র ক ল গ ল ম ক বর য় গত বছর র র রহম ন তৎক ল ন ল ইসল ম ড এমপ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের সম্পদ বিদেশিদের দেওয়ার গোপন ও প্রকাশ্য তৎপরতা চালাচ্ছেন সরকারের উপদেষ্টারা: আনু মুহাম্মদ
সরকারের উপদেষ্টারা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু তাঁরা ঠিক আগের সরকারের মতো কথা বলছেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার তৎপরতাও তাঁদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। জনগণের সম্পদ বিদেশিদের দিয়ে দেওয়ার নানা রকম গোপন ও প্রকাশ্য তৎপরতা চালাচ্ছেন তাঁরা।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা আ ফ ম মাহবুবুল হকের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে আলোচনা সভায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান, সেটা বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে দিচ্ছেন। টেন্ডার ছাড়া শেখ হাসিনা এই কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার অসমাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সরকারের জোরজবরদস্তি দেখা যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা হুমকি দিয়েছেন, ‘যারা বিরোধিতা করছে, তাদের প্রতিহত করতে হবে। আমাদের যে পরিবহন উপদেষ্টা আছেন, তিনি এমন সব কথাবার্তা বলছেন, যেগুলোর অর্থ দাঁড়ায় জোরজবরদস্তি করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এই সরকারের কিছু সংস্কার করার কথা, নির্বাচন করার কথা। কিন্তু সে নির্দিষ্ট কয়েকটা দলের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এটা হচ্ছে সমস্যার কারণ এবং নির্দিষ্ট কয়েকটা দলের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার পাশাপাশি আবার তার কিছু পক্ষপাতের ঘটনা, সেটার কারণেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার মানে অন্তর্বর্তী সরকারের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তার থেকে বিকৃতির কারণেই আজকের এই সমস্যা।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকার স্থায়ী সরকার না হলে আপনি স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি কীভাবে করেন? স্থায়ী সরকার না হলে বছরের পর বছরের জন্য এলএনজি আমদানির চুক্তিগুলো কীভাবে করেন? এগুলো আন্তর্জাতিক কিছু বহুজাতিক স্বার্থ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে এবং দেশের মধ্যে দক্ষিণপন্থীদের প্রতিনিধিত্ব করা এই দুইয়ের সম্মেলন এই সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
আলোচনা সভায় বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ ভুঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, লেখকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।