ছয় শতাধিক উদ্যোক্তা, গাছী ও গবেষক নিয়ে রাবিতে গুড় সম্মেলন
Published: 4th, November 2025 GMT
দেশের ৬৪টি জেলা থেকে প্রায় ছয় শতাধিক গুড় উৎপাদনকারী, গাছী, উদ্যোক্তা এবং গবেষক নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় ‘গুড় সম্মেলন ২০২৫’।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ‘রস ও গুড়’ এবং রাবি উদ্যোক্তা ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের আয়োজনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখকের রাবি শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা
বিশ্ব শিক্ষক দিবস: রাবিতে ৩ অধ্যাপককে সম্মাননা
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের আপ্যায়নে ছিল চা, তাও খেজুরের বিচি দিয়ে তৈরি। খাবার খাওয়ার পর ডেজার্ট হিসেবে ছিল ঘ্রাণ ছড়ানো নতুন খেজুর গুড়ের পায়েশ। এসময় কয়েকটি স্টলে গুড় উৎপাদন, গুড় গবেষণা, বাজারজাতকরণ ও বিভিন্ন প্রকার গুড়ের প্রদর্শনী করা হয়। খেজুরপাতা দিয়ে তৈরি মসজিদ, জায়নামাজ, তসবীহ ছিল অন্যতম আকর্ষণ।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া গবেষক ও উদ্যোক্তা সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার বলেন, “আমরা চাই গুড়ের মত একটা সম্ভবনাময় শিল্পকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। গুড়কে বিশুদ্ধভাবে সরবরাহ করা এবং বিদেশে গুড় রপ্তানি করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমরা চাইনিজ জায়নামাজ, মেসওয়াক, তসবীহসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকি। কিন্তু আমরা চাইলেই খেজুর গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারি।”
সম্মেলনে অংশ নেওয়া আরেক উদ্যোক্তা বলেন, “এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। সম্মেলনে এসে আমরা জানতে পেরেছি কীভাবে ভালো গুড় উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ভোক্তাদের কাছে বাজারজাতকরণ করা যায়। এই সম্মলনের মাধ্যমে আমরা যতটা সচেতন হব, ঠিক ততটাই উপকৃত হবে ভোক্তারা।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড.
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসআরআই-এর মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “হোয়াইট সুগার এবং লবণ এগুলো হচ্ছে হোয়াইট পয়জন। হোয়াইট সুগার বাদ দিয়ে গুড় অথবা ব্রাউন সুগার বেছে নেওয়া উচিত। গুড় শরীরকে ঠান্ডা রাখে। আমরা চা, শরবত অথবা মিষ্টিজাতীয় খাবারে গুড় ব্যবহার করতে পারি।”
উদোক্ত্যাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা বিরাট অংশজুড়ে আছেন। চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরির পেছনে না দৌড়ে উদোক্ত্যা হওয়া উচিত। এতে একাধারে যেমন সে নিজে সাবলম্বী হতে পারবে, পাশাপাশি আরো দশজন বেকার সাবলম্বী হবে।”
ঢাকা/ফাহিম/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ য ক ত ব যবহ র প রক র অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া