নারী অধিকারকর্মী রওশন জাহানের ইন্তেকাল
Published: 4th, November 2025 GMT
বিশিষ্ট নারী অধিকারকর্মী রওশন জাহান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
রওশন জাহান এক মেয়ে ও দুই ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন। তিনি প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের স্ত্রী।
রওশন জাহান নারী ক্ষমতায়নের ওপর বেশ কিছু বই লিখেছেন। তিনি উইমেন ফর উইমেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বিজিএস–সহ অনেক সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে রওশন জাহানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রওশন জ হ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গর্ভকালীন সচেতনতা ঠেকাবে ডায়াবেটিস
দেশে এক–চতুর্থাংশ নারী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ভবিষ্যতে মহামারির মতো এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগ নিয়ন্ত্রণে তাই এখন থেকেই সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ও এর প্রতিকারে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা বলেন, গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই সচেতন থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
যৌথভাবে গোলটেবিলের আয়োজন করে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এবং প্রথম আলো। এতে সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ওজিএসবির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফিরোজা বেগম। গর্ভধারণের আগে সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, অনেক নারী গর্ভধারণের আগে নিজের ডায়াবেটিস ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন না। অথচ গর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরামর্শ ও জীবন নিয়ন্ত্রণ—মা ও শিশুর জটিলতা কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। যদি গর্ভধারণের আগে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে জন্মগত ত্রুটি, প্রসবজনিত জটিলতার ঝুঁকি কমে যায়। যেসব নারীর ডায়াবেটিস রয়েছে, গর্ভধারণের অন্তত তিন মাস আগে থেকেই তাঁদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ওজিএসবির সদস্যসচিব অধ্যাপক মুসাররাত সুলতানা বলেন, গর্ভাবস্থার শুরু থেকে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকা খুবই জরুরি। কারণ, চিকিৎসকের কাছে রোগী এলে গর্ভকালে ডায়াবেটিসের সচেতনতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। তিনি বলেন, বিশেষ করে বেশি বয়সে মাতৃত্ব যাঁদের জন্য উচ্চ ঝুঁকির, তাঁদের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। তা ছাড়া যেসব মায়ের ওজন বেশি, তাঁদের জন্যও সচেতন হওয়া অনেক জরুরি।
একই পরামর্শ দেন ওজিএসবির সদস্য অধ্যাপক জিন্নাত আরা নাসরিন। তিনি বলেন, ‘রোগীকে আমরা সচেতন করতে পারব, সাবধান করতে পারব। এটি তখনই করতে পারব, যখন একজন নারী বা একটি দম্পতি গর্ভধারণের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করেন। যখন তিনি আসবেন আমাদের কাছে, তখনই তো আমরা তাঁকে জানাতে পারব, পথ দেখাতে পারব।’
ওজিএসবির সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ১০ বছর আগের সমীক্ষায় গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ব্যাপকতা ১০ শতাংশ ছিল, কিন্তু এখন তা ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। এ সমস্যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি মনে করেন, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসকে শুধু প্রসূতির সমস্যা হিসেবে না দেখে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের পাশাপাশি সবার প্রচেষ্টা থাকা উচিত।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজা আসমা বলেন, ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক। এটি এখন মহামারির আকারে রূপ নিয়েছে। প্রায় এক–চতুর্থাংশ গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
স্ক্রিনিং আবশ্যকঢাকা মেডিকেল কলেজের ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদা মাহমুদ বলেন, ডায়াবেটিস চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথম কাজ হচ্ছে তাকে শনাক্তকরণ। এই শনাক্তকরণের কাজ যদি গর্ভধারণের পূর্বেই করা সম্ভব হয়, তবে তা সবচেয়ে ভালো। তিনি বলেন, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে একজন মাকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এই সময়েই প্রথম স্ক্রিনিং করা হবে। তিনি আরও বলেন, যদি প্রথম তিন মাসের মধ্যে কোনো ডায়াবেটিস শনাক্ত না হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের দিকে একটি স্ক্রিনিং করতে হবে। এটি আবশ্যিক।
কমিউনিটি হাসপাতালগুলোতে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের পরামর্শ দেন কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম।
ঝুঁকি কীআইপাস বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নুরুন নাহার বেগম বলেন, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এবং নিয়মিত চেকআপ না করা হলে মায়ের গর্ভেই বাচ্চার হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি ছোট সমস্যা থেকে বড় সমস্যায় রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া প্রসবের পরও বাচ্চার অনেকগুলো সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের সন্তানদের ডায়াবেটিস পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওনাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদেকা চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক মা যেমন ঝুঁকিতে থাকেন, তাঁর গর্ভের সন্তানও ঝুঁকিতে থাকে। মা–বাবার ধারণা থাকে, বাচ্চা সুস্থ–স্বাভাবিক, তাকে কেন বারবার গ্লুকোজ মনিটর করব? কিন্তু এই জায়গায় সবাইকেই আরও সচেতন হতে হবে। কারণ, এই বাচ্চাগুলো অন্য স্বাভাবিক বাচ্চার চেয়ে আলাদা। কোনো উপসর্গ ছাড়াই তারা হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভুগতে পারে।
খাবার কেমন হবেবৈঠকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের খাবার সম্পর্কে জানান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র নিউট্রিশন অফিসার ফাহমিদা মাহমুদ। তিনি বলেন, একজন সাধারণ গর্ভবতী এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের খাবার মোটামুটি একই। তবে খেয়াল রাখতে হবে তাঁর শর্করা গ্রহণের পরিমাণ এবং ধরনের ওপর। কারণ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের খাবারটা এমনভাবে দিতে হবে, যাতে তাঁর গ্লুকোজের মাত্রা একবারে একসঙ্গে না বেড়ে ধীরে ধীরে বাড়ে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিটোম্যাটারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাবাসসুম পারভিন বলেন, খাদ্যাভাস পরিবর্তন এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে আসলে ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সুগার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ডায়াবেটিস মানেই সিজার নয়আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেহরিন এফ সিদ্দিকা বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্ন থাকে, তা হলো ডায়াবেটিস হলে কি শতভাগ সার্জারি করতে হয়? এর উত্তর হলো, একেবারে নয়। তবে ডায়াবেটিস প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে সিজার সেকশনের হার সামান্য হলেও বেশি থাকে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বেই। গোলটেবিল বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী। বৈঠক শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এসকেএফ ফার্মার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. মুরাদ হোসেন।