গাজা শহরকে সম্পূর্ণরূপে দখল করার জন্য ইসরায়েলের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ গাজার ইসরায়েলি মনোনীত ‘মানবিক অঞ্চল’-এর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। কারণ এলাকাগুলো ক্রমশ আরো বেশি লোকে ভরে যাচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, এই মানবিক জোনের তাঁবুতে দুটি ইসরায়েলি হামলায় দুই শিশু নিহত এবং অন্যরা আহত হয়েছে, যা নিরাপত্তা নিয়ে আরো প্রশ্ন তুলেছে।
চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ গাজায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন সিলভিয়া আল-শুরাফি। তিনি বলেন, “আমরা এত কঠিন পরিস্থিতিতে বাস করছি যে একটি প্রাণীও তাদের (ইসরায়েলি বাহিনী) হাত থেকে বাঁচতে পারে না। আমরা ভেবেছিলাম যে তারা যে মানবিক এলাকার কথা বলছিল সেখানে পানি ও তাঁবু থাকবে। আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য আমরা নিজেদের শুনতে বাধ্য করেছিলাম, কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বাস করতে বাধ্য হয়েছি। এটা খুবই অন্যায্য।”
খান ইউনিসের কাছে নাসের হাসপাতালে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ভোরবেলা আল-কারারায় তাদের তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলার পর দুই শিশুর মৃতদেহ আনা হয়েছিল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার লাখ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে খান ইউনিসের কাছে আল-মাওয়াসিতে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। সেখানে তাদের আরো ভালো পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তারা।
কিন্তু যারা কঠিন যাত্রা করে - ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে বা দুটি যানজটপূর্ণ পথে পরিবহনের জন্য শত শত ডলার প্রদান করেছেন - তারা জানিয়েছেন, তারা খাবার ও আশ্রয় খুঁজে পেতে লড়াই করছেন।
আল-মাওয়াসি পরিদর্শন করার পর জাতিসংঘের মানবিক অফিসের (ওচা) মুখপাত্র ওলগা চেরেভকো বলেন, “পরিস্থিতি দিন দিন সত্যিই খারাপ হচ্ছে। এটি পূর্ণ এবং উত্তর দিক থেকে আসা লোকেরা বসে আছে রাস্তার ধারে বাসস্থানের জন্য। লোকজন বুঝতে পারছে না কোথায় যেতে হবে। যাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে তাঁবু ছিল, তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে অথবা তারা তা আনতে পারছে না কারণ পরিবহনে অনেক টাকা খরচ হয় এবং সেই দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য তাঁবু বহন করা অত্যন্ত কঠিন।”
চেরেভকো জানিয়েছেন, গাজা শহরের উত্তরে জাবালিয়া থেকে পাঁচজনের একটি পরিবারের সাথে দেখা হয়েছিল, যারা চার দিন ধরে দক্ষিণে আশ্রয় খুঁজছিল। তাদের কাছে মাত্র দুটি ব্যাগ ছিল এবং তারা খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোর সময় একটি খড়ের মাদুর ভাগ করে নিয়েছিল। বাবার কোনো জুতা ছিল না, এবং কয়েক মাস বাস্তুচ্যুতির পর তার সঞ্চয় থেকে কোননো টাকাও অবশিষ্ট ছিল না।
স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা গেছে, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে যখন ইসরায়েল গাজা শহর দখলের জন্য তাদের নতুন অভিযান ঘোষণা করেছিল, তখন থেকে আল-মাওয়াসি শিবির কীভাবে প্রসারিত হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার মাত্র ১৩ শতাংশ এলাকায় এখন ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে একসঙ্গে থাকতে বলা হচ্ছে।
মোহাম্মদ ইসমাইল নামে এক ফিলিস্তিনি বলেছেন, “সবাই নিরাপদ স্থান খুঁজছে। আপনার দেখা উচিত কিভাবে তাঁবুগুলো একে অপরের পাশে আটকে আছে। একটির সঙ্গে আরেকটি কোনো ফাঁকা জায়গা নেই “
তিনি বলেন, “আপনার প্রতিবেশীর স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতিটি শব্দ আপনি শুনতে পাচ্ছেন। যখন কেউ টয়লেটে যায় তখন আপনি তাদের এর ব্যবহার করতে শুনতে পাচ্ছেন। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্যানিটেশন কোথায়? আমরা পানি খুঁজছি এবং সবকিছুই বৃথা। আল্লাহর কসম, এটাই প্রকৃত দুর্ভোগ।”
ইউনিসেফের টেসা ইনগ্রাম বিবিসিকে বলেন, “পরিবারগুলো এক নরক থেকে পালিয়ে অন্য নরকে যাচ্ছে। আমি যে পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেছি তারা আমাকে জানিয়েছে, তাদের শিশুদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, তারা ক্রমাগত অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত। বেশিরভাগ মানুষ আমাকে জানিয়েছে, তারা দিনে একবার খাবার খায় যা সাধারণত একটি কমিউনিটি রান্নাঘর থেকে আসে। তা হলো ভাত বা ডাল। বাবা-মায়েরা জানিয়েছেন, তারা প্রায়শই সেই খাবারের কোনো অংশ খাওয়া এড়িয়ে যান যাতে তাদের সন্তানরা খেতে পারে। আমি শুনেছি, নিরাপদ পানির জন্য লোকেরা ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে যায়।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত ন র জন য ম নব ক ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় শতাধিক উদ্যোক্তা, গাছী ও গবেষক নিয়ে রাবিতে গুড় সম্মেলন
দেশের ৬৪টি জেলা থেকে প্রায় ছয় শতাধিক গুড় উৎপাদনকারী, গাছী, উদ্যোক্তা এবং গবেষক নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় ‘গুড় সম্মেলন ২০২৫’।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ‘রস ও গুড়’ এবং রাবি উদ্যোক্তা ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের আয়োজনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখকের রাবি শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা
বিশ্ব শিক্ষক দিবস: রাবিতে ৩ অধ্যাপককে সম্মাননা
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের আপ্যায়নে ছিল চা, তাও খেজুরের বিচি দিয়ে তৈরি। খাবার খাওয়ার পর ডেজার্ট হিসেবে ছিল ঘ্রাণ ছড়ানো নতুন খেজুর গুড়ের পায়েশ। এসময় কয়েকটি স্টলে গুড় উৎপাদন, গুড় গবেষণা, বাজারজাতকরণ ও বিভিন্ন প্রকার গুড়ের প্রদর্শনী করা হয়। খেজুরপাতা দিয়ে তৈরি মসজিদ, জায়নামাজ, তসবীহ ছিল অন্যতম আকর্ষণ।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া গবেষক ও উদ্যোক্তা সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার বলেন, “আমরা চাই গুড়ের মত একটা সম্ভবনাময় শিল্পকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। গুড়কে বিশুদ্ধভাবে সরবরাহ করা এবং বিদেশে গুড় রপ্তানি করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমরা চাইনিজ জায়নামাজ, মেসওয়াক, তসবীহসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকি। কিন্তু আমরা চাইলেই খেজুর গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারি।”
সম্মেলনে অংশ নেওয়া আরেক উদ্যোক্তা বলেন, “এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। সম্মেলনে এসে আমরা জানতে পেরেছি কীভাবে ভালো গুড় উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ভোক্তাদের কাছে বাজারজাতকরণ করা যায়। এই সম্মলনের মাধ্যমে আমরা যতটা সচেতন হব, ঠিক ততটাই উপকৃত হবে ভোক্তারা।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহা. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “আমরা যে গুড় খেয়ে থাকি সেখানে কোনো ক্যামিকাল থাকে না কিন্তু আমরা যে চিনি খাই সেটা অনেক প্রকার ক্যামিকাল দিয়ে তৈরি। গরম চায়ে আমরা যখন চিনি ব্যবহার করছি, তখন আরো প্রায় ২৭ প্রকার ক্যামিক্যাল উৎপন্ন হচ্ছে, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে গুড়ের ব্যবহারে এমন কোনো ক্ষতি নেই। এটা অর্গানিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত। গুড়ের ব্যবহারের প্রচলন আমাদের বাড়াতে হবে।”
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসআরআই-এর মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “হোয়াইট সুগার এবং লবণ এগুলো হচ্ছে হোয়াইট পয়জন। হোয়াইট সুগার বাদ দিয়ে গুড় অথবা ব্রাউন সুগার বেছে নেওয়া উচিত। গুড় শরীরকে ঠান্ডা রাখে। আমরা চা, শরবত অথবা মিষ্টিজাতীয় খাবারে গুড় ব্যবহার করতে পারি।”
উদোক্ত্যাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা বিরাট অংশজুড়ে আছেন। চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরির পেছনে না দৌড়ে উদোক্ত্যা হওয়া উচিত। এতে একাধারে যেমন সে নিজে সাবলম্বী হতে পারবে, পাশাপাশি আরো দশজন বেকার সাবলম্বী হবে।”
ঢাকা/ফাহিম/রাসেল