দুর্গোৎসব ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতা, সরকারের কঠোর নিরাপত্তা প্রতিশ্রু
Published: 28th, September 2025 GMT
শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় আচারের উৎসব নয়, এটি হাজার বছরের ঐতিহ্য আর মানবিক বন্ধনের মিলনমেলা। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য বছরের সবচেয়ে বড় এই উৎসব এবার উদযাপিত হচ্ছে এক নতুন বাস্তবতায়, যেখানে ধর্মীয় আনন্দের পাশাপাশি নিরাপত্তা, সামাজিক সম্প্রীতি এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সূত্রে জানা গেছে, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা।
আরো পড়ুন:
আজ ষষ্ঠীপূজা: স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসছেন দেবী দুর্গা
পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় ৪৩০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
গত বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর এলাকায় গত বছর ২৫২টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা হয়েছিল।
গত বছরের তুলনায় সংখ্যায় বৃদ্ধি স্পষ্টভাবে একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে, উৎসব পালনে সক্রিয়তা বাড়ছে।
রাজধানী থেকে মফস্বল, সর্বত্র পূজামণ্ডপে প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত ধাপে। প্রতিমা নির্মাণ, মণ্ডপ সাজানো, আলোকসজ্জা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বিভিন্ন জেলার পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ বলছেন, আমরা আশাবাদী, এবার উৎসব হবে নির্বিঘ্ন, আনন্দময়। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি খুব ভালোভাবে হয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে সর্বাত্মক পরিকল্পনা। গোয়েন্দা তৎপরতা, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ও স্থানীয় পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবী দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে তৈরি করা হয়েছে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয়।
প্রস্তুতির চিত্র
* ২ লাখ আনসার সদস্য পূজামণ্ডপ ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন থাকবে।
* ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপ’ চালু হয়েছে। যার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ঘটনার তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানানো যাবে।
* ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নারী-পুরুষ দায়িত্ব পালন করবেন আনসার বাহিনীর সঙ্গে।
* প্রতিটি থানায় গঠিত হয়েছে বিশেষ মনিটরিং টিম, যারা স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিটি মণ্ডপে নজরদারি বজায় রাখবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বৈঠকে বলেন, কেউ যেন সুযোগ নিয়ে উস্কানি দিতে না পারে সেজন্য এবারের নিরাপত্তা প্রস্তুতি আরো ব্যাপকভাবে নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সফল করতে একযোগে কাজ করছে পাঁচটি বাহিনী
* পুলিশের থানাভিত্তিক টহল থাকবে, স্ট্রাইকিং ফোর্স, মনিটরিং সেল কাজ করবে।
* র্যাবের মোবাইল টিম, বোম ডিসপোজাল, সাইবার নজরদারি করবে।
* আনসার‑ভিডিপির সদস্য মণ্ডপের নিরাপত্তা, অ্যাপস ব্যবহার, স্বেচ্ছাসেবী সমন্বয়ে কাজ করবে। বিজিবির সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশেষ নজরদারি থাকবে।
* সেনাবাহিনীর উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে। সর্বত্র এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণে সাইবার ইউনিট
উৎসবকালে বিভ্রান্তিকর গুজব বা উস্কানিমূলক পোস্ট যেন কোনোভাবেই সমাজে বিভেদ সৃষ্টি না করে, সেজন্য চালু রাখা হয়েছে সাইবার মনিটরিং সেল। এছাড়া তাৎক্ষণিক অ্যাকশন টিম গঠন করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা ইউনিট যৌথভাবে কাজ করবে। কনটেন্ট ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বৈঠকে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন, যেকোনো গুজব বা উসকানি চিহ্নিত করা হবে দ্রুত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তাৎক্ষণিক নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর দেশে পূজা হয়েছে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে, আর এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি। ঢাকায় মণ্ডপের সংখ্যা ২৫২ থেকে বেড়ে ২৫৮। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যার নয়, বরং সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাস, রাষ্ট্রের সহানুভূতি এবং সামাজিক সমর্থনের একটি প্রতিচ্ছবি।
তিনি বলেন, পূজায় আমরা শুধু নিরাপত্তা নয়, সম্প্রীতির উদাহরণ তৈরি করতে চাই। সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহযোগিতার বার্তা ছড়াতে চাই। উচ্চ ও মাঝারি ঝুঁকির এলাকাগুলোতে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর রায়েরবাগের বাসিন্দা হরলাল ঘোষ বলেন, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম হলো স্বাধীন অনুশীলনের বিষয়, কোনো আতঙ্কের মধ্যে নয়। আমরা চাই এক নিরাপদ, সহনশীল, মানবিক বাংলাদেশ। জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাই বাস্তবায়ন করতে হবে রাষ্ট্রকে, সমাজকে। আমরা চাই এই উৎসব শুধু চোখে না, মানুষের মনে আনন্দ ছড়াক।
তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু পূজার সময়সূচি নয়। এটি একটি চেতনার উৎসব, যেখানে প্রত্যাশা থাকে সহাবস্থানের, সৌহার্দ্যের এবং পারস্পরিক সম্মানের।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জয়দেব দাস বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ। এই বহুত্ববাদকে রক্ষা করা এবং ধর্মীয় উৎসবগুলোতে সবাইকে নিরাপত্তা ও মর্যাদা দেওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, এ বছর পূজাকে ঘিরে রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতি, সামাজিক উদ্যোগ, প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা এবং জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। যেখানে সংকট নয়, শান্তি-সম্প্রীতিই হবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আমরা যেন এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি যেখানে প্রতিটি উৎসব ভয় নয়, বিশ্বাসে উদযাপিত হবে, যেখানে সংখ্যালঘু নয়, সহনাগরিক হিসেবে সবাই নিজের জায়গায় নিরাপদ থাকবে, আর পূজামণ্ডপগুলো হয়ে উঠবে শুধু প্রতিমা দর্শনের স্থান নয়, সম্প্রীতির আলোকস্তম্ভ, এটাই চাওয়া।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো.
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন-গ্রাউন্ড ডিপ্লয়মেন্ট গত ২৪ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। বর্তমানে থানা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আনসার টহল দিচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৮০ হাজার ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকবে, যাতে পূজা খুব ভালোভাবে উদযাপিত হয়। পূজা কমিটি তাদের মণ্ডপে সাতজন করে গার্ড রাখবে। কোনো জেলাকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে না।
উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হওয়ায় এর পবিত্রতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। মণ্ডপে জুতা বা স্যান্ডেল নিয়ে ওঠা যাবে না। এই বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, যেন কোনোভাবেই এর পবিত্রতা ভঙ্গ না হয়।
ঢাকা/এএএম/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বর ষ ট র প রস ত ত উপদ ষ ট গত বছর নজরদ র অন ষ ঠ এল ক য় উদয প আনস র
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয়া দশমীতে আজ শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
মহা ধুমধামে অঞ্জলি, আরতি, পূজা–অর্চনায় শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আজ সকালে শুরু হবে দেবীর দশমী বিহিত পূজা। এরপর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি হবে। গত রোববার দেবীর পূজা শুরু হয়েছিল।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ প্রথম আলোকে জানালেন, রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দশমীর পূজা শুরু হবে ৯টা ৫৭ মিনিটে। দর্পণ বিসর্জনের পরে ১২টায় শুরু হবে স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি। প্রতিবছরই বিজয়ার দিনে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে স্বেচ্ছা রক্তদানের আয়োজন থাকে।
বিজয়ার শোভাযাত্রা শুরু হবে বেলা তিনটা থেকে। এর আগে মহানগরীর অনেক স্থানের মণ্ডপ থেকে প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আনা হবে। বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন ঘাটে (ওয়াইজঘাট) নিরঞ্জন হবে সন্ধ্যা নাগাদ। এবার দেবীর আগমন ছিল গজে, আর দোলায় গমন।
সিঁদুরখেলাআজ বিজয়া দশমীতে অনেক মন্দিরেই দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনের পরে সিঁদুরখেলার আয়োজন থাকবে। সাধারণত এ আয়োজনে বিবাহিত নারীরা দেবীর চরণে সিঁদুর দান করে তা কৌটায় ধারণ করেন সারা বছর ব্যবহারের জন্য। এ সময় তাঁরা একে অন্যের কপাল ও চিবুকে দেবীর চরণ স্পর্শ করা সিঁদুর লাগিয়ে দেন। সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, বনানী মণ্ডপ, ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মণ্ডপে সিঁদুরখেলার আয়োজন থাকবে বলে এসব মণ্ডপের পূজা আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
ঢাকের বাদ্যতে মুখর মণ্ডপগতকাল বুধবার শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীতে ঢাকঢোলের বাদ্যতে মুখর হয়ে উঠেছিল রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলো; ছিল আলোর রোশনাই, অঞ্জলি। নবমীতেই দেবী দুর্গা তীব্র লড়াইয়ের মাধ্যমে অসুর বিনাশ করেন। মহিষাসুর বধের এই বিজয় দিবসটি তাই দেবীভক্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেবী এই দিনে ভক্তদের মনোবাসনা পূরণ করেন। নবমীর প্রধান ধর্মীয় আচার হলো অসুরবিনাশী দেবীকে অঞ্জলি নিবেদন। রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপে ভক্তরা ফুল হাতে দেবীপদে এই অঞ্জলি নিবেদন করেন।
বনানী পূজামণ্ডপে সকাল থেকেই ছিল ভক্তদের বিপুল সমাগম। বনানী পূজা উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক চন্দন লোধ প্রথম আলোকে বললেন, সকাল নয়টা থেকে নবমী বিহিত যজ্ঞ ও পূজা শুরু হয়েছিল। অঞ্জলি প্রদান শুরু হয় দুপুর সোয়া ১২টা থেকে। এ সময় ভক্তরা করজোড়ে পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রপাঠ করে দেবীকে প্রণাম করেন। অঞ্জলি নিবেদন শেষে তাঁরা চরণামৃত ও যজ্ঞের ফোঁটা সংগ্রহ করেন।
মানিকগঞ্জের বেতিলা থেকে যাদব চন্দ্র ঘোষ, স্ত্রী অর্চনা রানি ঘোষকে নিয়ে বনানী মণ্ডপে এসেছিলেন অঞ্জলি দিতে। তাঁরা প্রথম আলোকে বললেন, বনানীর পূজার আয়োজন অনেক বড়। জাঁকজমক, সাজসজ্জাও বর্ণাঢ্য। তাঁদের গ্রামেও পূজা হচ্ছে। তবে গ্রামের পূজার সঙ্গে বনানীর আয়োজনের তুলনা চলে না। প্রতিবছরই তাঁরা নবমীতে এখানে অঞ্জলি দিতে আসেন।
অঞ্জলি দিয়ে দেবী প্রণাম জানালেন অসীম গুহ ও রুপা গুহ দম্পতি। তাঁরা থাকেন গুলশানে। অসীম গুহ জানালেন, এরই মধ্যে তাঁরা ঢাকার অধিকাংশ মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন করেছেন। উত্তরার দিয়াবাড়ির মণ্ডপের সাজসজ্জা তাঁর কাছে বেশ ব্যতিক্রম লেগেছে। তবে পরিসর আর বর্ণাঢ্যতার দিক থেকে বনানীর মণ্ডপকেই এগিয়ে রাখবেন। এখনে ভক্তদের বসার জন্য অনেক বড় জায়গা ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। নিরাপত্তাও খুব ভালো। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আর্থিক মন্দাভাব রয়েছে। এ কারণে হাত খুলে খরচ করে উৎসব নিয়ে আনন্দ–উচ্ছ্বাস করায় কিছুটা ঘাটতি আছে বলে তাঁর মনে হয়েছে।
এবার বনানী পূজামণ্ডপের সাজসজ্জায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানালেন কমিটির আহ্বায়ক চন্দন দত্ত ও গুলশান সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন কুমার দত্ত। দেবী প্রতিমায় কোনো কৃত্রিম বস্ত্র বা অলংকার ব্যবহার করা হয়নি। সম্পূর্ণই মাটির তৈরি। প্রতিমায় প্রধানত সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা গোলাপি আভা। অস্ত্র আর অলংকার উজ্জ্বল রুপালি রঙের। ফলে সাদা ও রুপালি মিলিয়ে প্রতিমায় বিশেষ স্নিগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে। এ ছাড়া ফটক ও ভেতরের সাজসজ্জায় পাটি, পাটকাঠি, বাঁশ, বেত—এমন উপকরণ ব্যবহার করে লোকজ ঐতিহ্যবাহী নকশায় অলংকরণ করা হয়েছে। তাঁরা জানালেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত মণ্ডপ খেলা থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো ভক্ত বনানী মণ্ডপে দেবীদর্শনে এসেছেন।
আয়োজকেরা জানালেন, ষষ্ঠীপূজার দিন থেকেই বনানী মণ্ডপে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার জনের জন্য প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
নবমীর বিকেলে পাঁচটা থেকে শুরু হয় পূজা ও শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ। সন্ধ্যার পর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আরতি দেওয়া হয়েছে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত।
আয়োজকেরা জানালেন, বনানী, গুলশান, উত্তরা এলাকার প্রায় ৩০টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে আশুলিয়ায়। সকালে দশমীর পূজা শেষে বিজয়ার যাত্রা শুরু হবে বেলা তিনটার পর থেকে।
মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দেবীদর্শনফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মাঠে ৩৪ বছর ধরে শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের আয়োজনে। এখানেও নবমী পূজায় অনেক ভক্তের সমাগম হয়েছিল। সংঘের সভাপতি মনোতোষ কুমার রায় প্রথম আলোকে বললেন, প্রায় ১০ হাজার ভক্ত নবমীর সকালে দেবীকে অঞ্জলি দিয়েছেন। এখানেও প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার জনকে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। পার্থ ভৌমিক স্ত্রী সুবর্ণা ভৌমিক ও দুই মেয়ে প্রকৃতি ভৌমিক ও স্পৃহা ভৌমিককে নিয়ে এখানে দেবীকে নবমীর অঞ্জলি দিয়েছেন। তাঁরা থাকেন মণিপুরি পাড়ায়। সারা দিন তাঁরা বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেবীদর্শন করবেন বলে জানালেন।