কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কয়েক দফা পদ্মার ভাঙনে অন্তত ১৫ বিঘা জমি হারিয়েছে সুমন আলীর পরিবার। গত সপ্তাহে দৌলতপুরের কোলদিওয়াড় গ্রামে তাদের আরো ১ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র সুমন।

উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ভূরকাপাড়ার বাসিন্দা সুমন আলীর ভাষ্য, পদ্মার ভাঙনে শত শত কৃষক জমি হারিয়েছেন তারা। এলাকার বহু মানুষ এখন নিঃস্ব। প্রতিদিনই নদীতে বিলীন হচ্ছে তাদের অবশিষ্ট জমি। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আরো মানুষের সম্পদ নদীতে হারিয়ে যাবে। চলতি মৌসুমের বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা নদী যেন রাক্ষুসী হয়ে উঠেছে। 

আরো পড়ুন:

কুড়িগ্রামে ১৭০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত

জুম ফলন ভালো হওয়ায় খুশি খাগড়াছড়ির চাষিরা

তিনি জানান, গত ১ সপ্তাহে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের শত শত বিঘা ফসলি জমি গেছে এই নদীর পেটে। ভূরকা-হাটখোলা থেকে কোলদিয়াড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ভাঙনের তাণ্ডব। প্রতিদিনই বিলীন হয়ে যাচ্ছে চার ফসলি জমি, বাগানসহ অনেক স্থাপনা।

তিনি আরো জানান, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রায়টা-মহিষকুন্ডি নদী রক্ষা বাঁধসহ ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনও পড়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এসব স্থাপনার পাশাপাশি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। চলতি বর্ষায় বন্যার পানি মূল নদী ছাড়িয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার চর ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। রবিবার ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগেও যেসব এলাকা বন্যার পানি থইথই করছিল, পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

প্রতি বছরই এই সময়ে নদীতীরে ভাঙন দেখা যায়। তবে এবার ভাঙনের তীব্রতা চরম রূপ নিয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়াড় থেকে ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা গেছে ভাঙনের চিত্র। নদীর প্রায় ৫০০ মিটার দূরে রায়টা-মহিষকুন্ডি বাঁধ।

এলাকাবাসীর আশঙ্কা, ওই বাঁধও ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। ওই বাঁধ ভেঙে গেলে আগামী বর্ষায় আশপাশের জেলাও বন্যার কবলে পড়তে পারে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা নাসির আলীর ভাষ্য, আগেই তার ৫ বিঘা জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আরো ৫ বিঘা জমি ছিল নদী তীরে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ওই জমিও নদীতে হারিয়ে গেছে। ভূরকাপাড়া এলাকায় নদীর কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, যা এ বছর নদীভাঙন রোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ভাঙনকবলিত বাকি এলাকায় জিও ব্যাগ বা সিমেন্টের ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

ওই এলাকার আতার হক ফরাজীর ভাষ্য, গত ২ বছরে তার পরিবারের লোকজন অন্তত ৫০ বিঘার বেশি জমি নদীতে হারিয়েছেন। গত ১০ দিনে বিলীন হয়েছে প্রায় ১০ বিঘা জমি। ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। শুধু বাড়িঘর অবশিষ্ট আছে।

এলাকাবাসী জানায়, রায়টা-মহিষকুন্ডি বাঁধ ঘেঁষে ভারত থেকে আসা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গেছে। যে কোনো সময় ওই লাইনও নদীতে তলিয়ে যেতে পারে।

একই অবস্থা রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদী ভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভূরকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিওয়াড় কান্দিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদ, জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং জুনিয়াদহ বাজারের।

ইতোমধ্যে ভূরকা, কোলদিয়াড়, জুনিয়াদহ, কোলদিয়াড় পূর্বপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

কোলদিয়াড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেন বলেন, “তীব্র ভাঙনের ফলে ফসলের মাঠ পেরিয়ে নদী এখন মহিষকুন্ডি-রায়টা বাঁধের নিচে চলে এসেছে। প্রতিদিন ব্যাপক মাত্রায় তীর ভাঙছে। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। ওই এলাকাকে রক্ষা করতে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। তা না হলে গ্রামের বাড়িঘরসহ সবকিছুই নদীতে হারিয়ে যাবে।”

ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীতা স্বীকার করে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “ভাঙন রোধে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”

কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের ভাষ্য, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ভাঙন রোধে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কোলদিওয়াড় এলাকায় নদীতীরে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। সেখানে শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, কোলদিওয়াড় হাটখোলাপাড়া থেকে রায়টা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের মুখে পড়েছে। কিন্তু পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।

মানববন্ধনের পরও যদি সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেবেন তারা।

ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল এল ক ব স ব ল ন হয় দ লতপ র ব যবস থ উপজ ল র এল ক য় বন য র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পানিসম্পদ ‘উপদেষ্টাকে কাকুতি-মিনতির কথাটা জানাবেন’

‘পা ধরি বাবা, হামার বাড়িটা বাঁচান বাবা। কয়টা বস্তা দিয়া ভাঙা বন্ধ করি দেও। আল্লাহ তোমার ভালো করবে বাবা।’ সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁ তীরে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলায় ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলাম। তখন রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারিতে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বয়স্ক এক নারী হাতজোড় করে কথাগুলো বলছিলেন।

ওই স্থানে অনেকেই যখন ভাঙন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছিলেন, তখন আমার পাশের চেয়ারে বসা পার্শ্ববর্তী মসজিদের ইমাম আবদুল মজিদের দুচোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। অশ্রুসিক্ত ইমাম। তাঁর ভিটেমাটি এখন যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হবে। ভাঙনের আশঙ্কায় ঘর তুলে একটু দূরে রেখেছেন। ৪০টি ফলবান সুপারিগাছসহ সব গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। কোথায় যাবেন, কী করবেন জানেন না। কেবলই দুচোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে।

রৌমারী উপজেলার পাখি ধরা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রইচ উদ্দীন ভাঙনের কথা বলতে গিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন। তাঁর কান্নার সময় উপস্থিত নারী-পুরুষ অনেকেই কাঁদছিলেন। স্কুলশিক্ষক বলছিলেন, ‘মানুষের বাঁশের ঝোপের তলায় কোনাকাঞ্চিতে কোনোমতে মানুষের জমিতে একটা ছাপরা (চালা) তুলে থাকা যে কী বেদনাদায়ক, সেটা আপনারা জানেন কি না আমি বুঝি না। আমি আপনাদের পায়ে ধরে মিনতি করি, আমাদের আর নিরাশ করবেন না, আর নিঃস্ব করবেন না, বাস্তুহীন করবেন না। মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়কে আমাদের আকুতি-মিনতির কথাটা জানাবেন।’

চর মেন্দার আলগায় গিয়েছিলাম ভাঙন দেখতে। সেখানে অনেক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখনো অনেক বাড়ি ভাঙবে বলে মনে করছেন নদীতীরের বাসিন্দারা। চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে এক ব্যক্তি সহায়তা চাইলেন সরকারের। কাঁদতে থাকা ব্যক্তিটির বাড়ি নদীতে গেলে সন্তান নিয়ে কোথায় যাবেন, এই অনিশ্চয়তা তার। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনকবলিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, এমন সময় এক প্রবীণ নারী কোথা থেকে ছুটে এসে আহাজারি করতে থাকলেন। ভাঙন থেকে মুক্তি চান। নাম তাঁর হয়রান বেগম। রাষ্ট্র তাঁকে যেন চরম হয়রানির মধ্যে রেখেছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁ তীরের দুই উপজেলা রাজীবপুর ও রৌমারী। এ দুই উপজেলার পাশ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র প্রায় ৪২ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৪ কিলোমিটারে তীব্র ভাঙন আছে। বাঁ তীরে কয়েকটি স্থানে ভাঙনকবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, বর্তমানে যেখানে নদী আছে, অর্ধশত বছর আগে নদী সেখান থেকে স্থানবিশেষে প্রস্থে কোথাও ১০-১২ কিলোমিটার, কোথাও ৭-৮ কিলোমিটার দূরে ছিল নদী।

যে কয়েকটি এলাকায় ভাঙনকবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, সেখানে শিশুদের চেহারা একই রকম। বোঝা যাচ্ছে, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীন গত বছর আশির দশকে চিলমারীর জীবন নিয়ে যেসব প্রতিবেদন করেছিলেন, সেই প্রতিবেদনে থাকা শিশুদের মুখচ্ছবি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। করুণ মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। অনেকবার বাড়ি ভেঙেছে—এ রকম অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। একজন জানালেন, ১৬ বার তাঁর বাড়ি ভেঙেছে।

রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের পাইকানটাড়ি পাড়ায় নজরুল ইসলাম জোতদার নামে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়। যে স্থানে কথা বলছিলাম, সেই স্থানে প্রস্থে ১২-১৪ কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ওই স্থানে ভাঙন রোধে কোনো সরকার অতীতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। হাজারো বাড়িঘর ভেঙে গেলেও কোনো সরকার একজন ব্যক্তিকেও পুনর্বাসন করেনি। বাড়ি ভেঙে গেলে দু-একবার কয়েক কেজি চাল দিয়েছে।

একই কথা বলেছেন যে কয়েকটি ভাঙনকবলিত এলাকায় কথা বলেছি তাঁদের সবাই। অনেকে জানালেন, এ নদী এ রকম ছিল না। বর্ষা মৌসুমে জোরপূর্বক দুই কিলোমিটার প্রস্থে ছিল। এখন সেটি কোথাও কোথাও প্রায় ১৪ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে।

যে কয়েকটি এলাকায় ভাঙনকবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, সেখানে শিশুদের চেহারা একই রকম। বোঝা যাচ্ছে, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। মোনাজাত উদ্দীন গত বছর আশির দশকে চিলমারীর জীবন নিয়ে যেসব প্রতিবেদন করেছিলেন, সেই প্রতিবেদনে থাকা শিশুদের মুখচ্ছবি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। করুণ মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। অনেকবার বাড়ি ভেঙেছে—এ রকম অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। একজন জানালেন, ১৬ বার তাঁর বাড়ি ভেঙেছে।

নৌপথে যখন ব্রহ্মপুত্রের বাঁ তীর ঘেঁষে যাচ্ছিলাম, দেখলাম অনেক স্থানে বাড়ি ভাঙছে। অনেক স্থানে কাটা হচ্ছে গাছ, অনেক স্থানে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি সড়ক দেখলাম, যেগুলো নেমে গেছে নদীতে।

রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন, রাজীবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, রৌমারীর মহির উদ্দীন খুব চেষ্টা করছেন ভাঙন বন্ধ করার জন্য যাতে সরকার কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে। তীরবর্তী ভাঙন রোধে আনোয়ার হোসেন মন্ত্রিসভার সচিব বরাবর একটি আবেদন করেছেন। সচিব সেই চিঠির বরাত দিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কিছু কিছু কাজ করেছে। সেই কাজ উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। দুই বছর আগে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধের জন্য একটি প্রকল্প জমা দিয়েছিল। সেখানে যে টাকার কথা বলা হয়েছিল, সেই টাকা কমাতে বলেছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই টাকা কমিয়ে আবার প্রকল্প জমা দিয়েছে। এই প্রকল্প এখনো অগ্রগতিমূলক সবুজ পাতায় ওঠেনি। সরকার চাইলে সবুজ পাতায় ওঠানো কঠিন কিছু নয়।

রৌমারী ও রাজীবপুরের মানুষের দুঃখ–কষ্ট অতীতে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছায়নি। রৌমারী-রাজীবপুর যদি চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, কুমিল্লা কিংবা ফেনীর দুটি উপজেলা হতো, তাহলে বছরের পর বছর ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন থাকত না। যেকোনো মূল্যে এই ভাঙন বন্ধ করা হতো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলছিলেন, সারা দেশে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়, কিন্তু কুড়িগ্রামে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় না।

সাধারণত মন্ত্রী–উপদেষ্টা-সচিব কিংবা প্রভাবশালী রাজনীতিক থাকলে তাঁদের এলাকায় বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। রংপুর বিভাগে এ রকম কেউ নেই। তবে ব্রহ্মপুত্রের তীরের সাধারণ মানুষ এখন মনে করেন, তাঁদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আছেন। তিনি সারা দেশকে সমান চোখে বিচার করবেন। তাঁদের বিশ্বাস, বর্তমান পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রহ্মপুত্র নদ ভাঙন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সাধারণ মানুষের এই বিশ্বাসের জয় হোক।

তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক।

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পানিসম্পদ ‘উপদেষ্টাকে কাকুতি-মিনতির কথাটা জানাবেন’