পদ্মার ভাঙ্গনে হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ
Published: 6th, October 2025 GMT
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কয়েক দফা পদ্মার ভাঙনে অন্তত ১৫ বিঘা জমি হারিয়েছে সুমন আলীর পরিবার। গত সপ্তাহে দৌলতপুরের কোলদিওয়াড় গ্রামে তাদের আরো ১ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র সুমন।
উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ভূরকাপাড়ার বাসিন্দা সুমন আলীর ভাষ্য, পদ্মার ভাঙনে শত শত কৃষক জমি হারিয়েছেন তারা। এলাকার বহু মানুষ এখন নিঃস্ব। প্রতিদিনই নদীতে বিলীন হচ্ছে তাদের অবশিষ্ট জমি। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আরো মানুষের সম্পদ নদীতে হারিয়ে যাবে। চলতি মৌসুমের বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা নদী যেন রাক্ষুসী হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন:
কুড়িগ্রামে ১৭০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত
জুম ফলন ভালো হওয়ায় খুশি খাগড়াছড়ির চাষিরা
তিনি জানান, গত ১ সপ্তাহে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের শত শত বিঘা ফসলি জমি গেছে এই নদীর পেটে। ভূরকা-হাটখোলা থেকে কোলদিয়াড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ভাঙনের তাণ্ডব। প্রতিদিনই বিলীন হয়ে যাচ্ছে চার ফসলি জমি, বাগানসহ অনেক স্থাপনা।
তিনি আরো জানান, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রায়টা-মহিষকুন্ডি নদী রক্ষা বাঁধসহ ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনও পড়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এসব স্থাপনার পাশাপাশি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। চলতি বর্ষায় বন্যার পানি মূল নদী ছাড়িয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার চর ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। রবিবার ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগেও যেসব এলাকা বন্যার পানি থইথই করছিল, পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওইসব এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
প্রতি বছরই এই সময়ে নদীতীরে ভাঙন দেখা যায়। তবে এবার ভাঙনের তীব্রতা চরম রূপ নিয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়াড় থেকে ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা গেছে ভাঙনের চিত্র। নদীর প্রায় ৫০০ মিটার দূরে রায়টা-মহিষকুন্ডি বাঁধ।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, ওই বাঁধও ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। ওই বাঁধ ভেঙে গেলে আগামী বর্ষায় আশপাশের জেলাও বন্যার কবলে পড়তে পারে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা নাসির আলীর ভাষ্য, আগেই তার ৫ বিঘা জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আরো ৫ বিঘা জমি ছিল নদী তীরে। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ওই জমিও নদীতে হারিয়ে গেছে। ভূরকাপাড়া এলাকায় নদীর কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল, যা এ বছর নদীভাঙন রোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ভাঙনকবলিত বাকি এলাকায় জিও ব্যাগ বা সিমেন্টের ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ওই এলাকার আতার হক ফরাজীর ভাষ্য, গত ২ বছরে তার পরিবারের লোকজন অন্তত ৫০ বিঘার বেশি জমি নদীতে হারিয়েছেন। গত ১০ দিনে বিলীন হয়েছে প্রায় ১০ বিঘা জমি। ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। শুধু বাড়িঘর অবশিষ্ট আছে।
এলাকাবাসী জানায়, রায়টা-মহিষকুন্ডি বাঁধ ঘেঁষে ভারত থেকে আসা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গেছে। যে কোনো সময় ওই লাইনও নদীতে তলিয়ে যেতে পারে।
একই অবস্থা রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদী ভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভূরকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিওয়াড় কান্দিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদ, জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং জুনিয়াদহ বাজারের।
ইতোমধ্যে ভূরকা, কোলদিয়াড়, জুনিয়াদহ, কোলদিয়াড় পূর্বপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
কোলদিয়াড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেন বলেন, “তীব্র ভাঙনের ফলে ফসলের মাঠ পেরিয়ে নদী এখন মহিষকুন্ডি-রায়টা বাঁধের নিচে চলে এসেছে। প্রতিদিন ব্যাপক মাত্রায় তীর ভাঙছে। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। ওই এলাকাকে রক্ষা করতে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। তা না হলে গ্রামের বাড়িঘরসহ সবকিছুই নদীতে হারিয়ে যাবে।”
ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীতা স্বীকার করে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের ভাষ্য, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ভাঙন রোধে স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কোলদিওয়াড় এলাকায় নদীতীরে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। সেখানে শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, কোলদিওয়াড় হাটখোলাপাড়া থেকে রায়টা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের মুখে পড়েছে। কিন্তু পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
মানববন্ধনের পরও যদি সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেবেন তারা।
ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল এল ক ব স ব ল ন হয় দ লতপ র ব যবস থ উপজ ল র এল ক য় বন য র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘৮ যুদ্ধের পাঁচটিই থামিয়েছি’ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে—দাবি করলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার দাবি করেছেন, তিনি আটটি যুদ্ধের পাঁচটি থামিয়েছেন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শুল্কের মাধ্যমে ‘ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার’ (লাখ লাখ কোটি ডলার) আয় করছে; যা তাঁর কথায় মার্কিন অর্থনীতির জন্য লাভজনক হয়েছে।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি পাঁচটি যুদ্ধ সরাসরি শুল্কের হুমকি দেখিয়ে থামিয়েছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আমরা বাইরের দেশ থেকে শুল্ক ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলার নিচ্ছি। আমি আটটি যুদ্ধের মধ্যে পাঁচটি সরাসরি থামিয়েছি, শুল্কের হুমকি দেখিয়ে—যদি তারা লড়াই থামাতে না চায় অথবা শুরু করে।’
ইতিপূর্বে বারবার নিজের করা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এ নতুন মন্তব্য এসেছে। সেসব দাবিতে তিনি শুল্ক ব্যবহার করে চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর কথাও বলেছিলেন। তবে ভারত কখনোই তাঁর ভূমিকাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সহায়ক হিসেবে স্বীকার করেনি।ইতিপূর্বে বারবার নিজের করা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এ নতুন মন্তব্য এসেছে। সেসব দাবিতে তিনি শুল্ক ব্যবহার করে চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর কথাও বলেছিলেন। তবে ভারত কখনোই তাঁর ভূমিকাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সহায়ক হিসেবে স্বীকার করেনি।
আরও পড়ুনট্রাম্প কেন ৬টি যুদ্ধ থামানোর দাবি করছেন১৯ আগস্ট ২০২৫ট্রাম্পের আরও যত দাবি
পূর্বসূরি জো বাইডেনকে নিশানা করে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এখন প্রায় ‘কোনো মুদ্রাস্ফীতি নেই’; যা তাঁর কথায় ‘স্লিপি জো বাইডেন’–এর (ঘুমকাতুরে) অধীন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ছিল।
ট্রাম্প পোস্টে লিখেছেন, ‘পুঁজিবাজার মাত্র ৯ মাসে ৪৮ বার সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। লিওনার্দ লিও, কোচ এবং ওইসব দেশ যারা বছরের পর বছর নিজেদের শুল্ক ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তারা আর আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না।’
আমরা বাইরের দেশ থেকে শুল্ক ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলার নিচ্ছি। আমি আটটি যুদ্ধের মধ্যে পাঁচটি সরাসরি থামিয়েছি, শুল্কের হুমকি দেখিয়ে—যদি তারা লড়াই থামাতে না চায় অথবা শুরু করে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টআরও পড়ুনট্রাম্প যুদ্ধ থামিয়ে বন্ধু বাড়াবেন, সমালোচকদের তদন্তের আওতায় আনবেন২০ জানুয়ারি ২০২৫উল্লেখ্য, লিওনার্দ লিও প্রভাবশালী মার্কিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কনজারভেটিভ বিচারপতি নিয়োগ ও কিছু শীর্ষ রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। আর ‘কোচ’ বলতে ট্রাম্প কোচ পরিবারকে বুঝিয়েছেন; যারা মার্কিন রাজনীতিতে বড় পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে ও প্রভাব রাখে।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবচেয়ে ধনী, শক্তিশালী ও সম্মানিত’ অবস্থায় রয়েছে। তাঁর কথায়, এর পেছনের মূল কারণগুলো হলো, ‘নভেম্বর ৫’, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ‘শুল্ক’।ট্রাম্প আরও বলেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবচেয়ে ধনী, শক্তিশালী ও সম্মানিত’ অবস্থায় রয়েছে। তাঁর কথায়, এর পেছনের মূল কারণগুলো হলো, ‘নভেম্বর ৫’, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ‘শুল্ক’।
আরও পড়ুনরাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ‘চাপ বাড়াচ্ছেন’ ট্রাম্প১০ অক্টোবর ২০২৫