মামলার জটিলতা থেকে মুক্ত হতে অডিট আপত্তির বকেয়া পাওনা নিয়ে সমঝোতা চায় দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) ও রবি আজিয়াটা। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে দুই অপারেটরই সালিসের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি)। বিটিআরসিও এখন সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের কথা ভাবছে।

১০ বছর আগে টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি গ্রামীণফোন ও রবিতে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্রামীণফোন ও রবির কর, ভ্যাট, হ্যান্ডসেট রয়্যালটি, তরঙ্গের মূল্য পরিশোধ, লাইসেন্স ফিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিরীক্ষা হয়। ওই নিরীক্ষার পর গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ও রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা বাবদ দাবি করা হয়।

বিটিআরসির এই পাওনা দাবির বিপরীতে গ্রামীণফোন ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ও রবি ১৩৮ কোটি টাকা পরিশোধও করেছে। যদিও শুরু থেকে দুই অপারেটরই এই নিরীক্ষা দাবি নিয়ে তাদের আপত্তি জানিয়ে আসছিল। এমনকি বিটিআরসির এই পাওনা দাবির বিপরীতে আদালতে মামলাও করে অপারেটর দুটি। পরে সালিসের মাধ্যমে পাওনার বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি জানায় তারা। যদিও বিটিআরসি শুরু থেকে বলে আসছে, তাদের আইনে সালিসের কোনো সুযোগ নেই।

এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন করে গ্রামীণফোন ও রবি আবারও বকেয়া পাওনার বিষয়টি সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে। গত ২৯ জুলাই বিটিআরসিকে দেওয়া এ–সংক্রান্ত চিঠিতে গ্রামীণফোন বলেছে, নিরীক্ষা দাবির টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। দীর্ঘ সময়, প্রক্রিয়া এবং কারিগরি জটিলতা বিবেচনায় তারা এখন বিষয়টি সালিসি পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি চায়। রবিও বিষয়টি মধ্যস্ততা করার জন্য চলতি বছরের ১ জুন বিটিআরসিকে চিঠি দেয়।

সবার স্বার্থে একটি ন্যায়সংগত, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী সমাধানে পৌঁছানো দরকার। সালিসি প্রক্রিয়া এই ধরনের বিষয় সমাধানের জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর আইনি পদ্ধতি—তানভীর মোহাম্মদ, চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার, গ্রামীণফোন

গ্রামীণফোন চিঠিতে বলেছে, এ–সংক্রান্ত মামলাটি ছয় বছর ধরে বিচারাধীন। দেওয়ানি আদালতে মামলার জট ও নিষ্পত্তির ধীরগতির কারণে নিকট ভবিষ্যতে চূড়ান্ত রায় পাওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সালিসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হলে তা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্যই ভালো। বিটিআরসি যেন সালিসি চুক্তির মাধ্যমে এ বিষয়ে নিয়ে আলোচনা শুরু করে, সে অনুরোধও জানিয়েছে গ্রামীণফোন।

জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামীণফোন সব সময়ই দায়িত্বশীল ও আইন মেনে চলা কোম্পানি। শুরু থেকে নিরীক্ষা দাবি নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। কারণ, এই নিরীক্ষায় বিষয়বস্তু, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটি রয়েছে। এ অবস্থায় সবার স্বার্থে একটি ন্যায়সংগত, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী সমাধানে পৌঁছানো দরকার। সালিসি প্রক্রিয়া এই ধরনের বিষয় সমাধানের জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর আইনি পদ্ধতি। গ্রামীণফোন বিটিআরসির সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান নিশ্চিত করা যায়।’

নিরীক্ষা বিরোধের কারণে টেলিকম খাতে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যার ন্যায্য সমাধান হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে—সাহেদ আলম, চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি কর্মকর্তা, রবি

এদিকে রবি বলছে, মধ্যস্থতার মাধ্যমে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই গঠনমূলকভাবে এই বিরোধের সমাধান সম্ভব। তাতে সময়, সম্পদ ও পারস্পরিক স্বার্থ বজায় থাকবে। এ জন্য মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া শুরুর জন্য বিটিআরসির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি কর্মকর্তা সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সমস্যা সমাধানে রবি সব সময়ই প্রস্তুত। আদালতের মাধ্যমে সমাধান চাওয়ার পর বিটিআরসি ছয় বছর ধরে সাড়া না দেওয়ায় এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়েছে। নিরীক্ষা বিরোধের কারণে টেলিকম খাতে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। সমস্যার ন্যায্য সমাধান হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।

একসময় বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনায় যেতে না চাইলেও বর্তমানে সালিসের মাধ্যমে এ বিষয়ের সমাধান করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখছে বিটিআরসি।

জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.

) মো. এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুই অপারেটরের চিঠি পেয়েছি। বিটিআরসির আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মতামত নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ফ করপ র ট অ য ব ট আরস র প রক র য় র জন য র আইন ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্প নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল খোঁচাখুঁচি

বাংলাদেশে শুক্রবার ভূমিকম্প আঘাত হানার পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কম্পন অনুভূত হয়েছিল। সেই ভূমিকম্প নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি খোঁচা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এর প্রতিক্রিয়ায় মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা খোঁচা দিয়েছে বিজেপিকে। 

ভূমিকম্পের পরে বিজেপির বঙ্গীয় শাখা এক্স-এ এক পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহাস করে জানতে চায় রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের (এসআইআর) কারণে এই কম্পন হয়েছে কিনা।

পোস্টটিতে বলা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এটা কি এসআইআর-এর কারণে?”

তৃণমূল পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এই কম্পনের কারণ আসলে “২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসন্ন পরাজয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা বিজেপির পায়ের তলার মাটি কাঁপছে। আর চিন্তা করবেন না, দিল্লির জমিদাররাও এর থেকে বাদ যাবেন না; এই কম্পন তাদের কাছেও পৌঁছাবে”

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) পশ্চিমবঙ্গে তীব্র রাজনৈতিক সংঘাতের সূত্রপাত করেছে। বিজেপি এবং রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে ভোটার কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। 

বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে লেখা এক চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভোটার তালিকা সংশোধন ‘গভীর উদ্বেগজনক পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। এই প্রক্রিয়াটি ‘অপরিকল্পিত’ এবং ‘বিশৃঙ্খল।’
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ