সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবেই ইমন সাহাকে চিনি আমরা। এবার পাওয়া গেল তাঁর পরিচালক পরিচয়। তাঁর প্রথম সিনেমা ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ৭ নভেম্বর। সারা দুনিয়াতেই ইদানীং নানা ধরনের মিজিক্যাল সিনেমা হচ্ছে, নেটফ্লিক্সের ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’ তো বছরের অন্যতম বড় হিট। তবে দেশে মিউজিক্যাল সিনেমা খুব একটা হয় না। তাই বাংলায় মিউজিক্যাল সিনেমা, নির্মাতা আবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সংগীত পরিচালক; ফলে প্রত্যাশাটা একটু বেশিই ছিল।
সংগীতজগতের মানুষ হওয়ায় সিনেমায় এই জগতের সংগ্রাম ও অন্ধকার দিকের গল্প তুলে ধরতে চেয়েছিলেন ইমন সাহা। ট্রেলারেও তেমন আভাস ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি কতটা উতরাতে পারল?
ছোটবেলায় বাবার কাছে মায়ার (নীলাঞ্জনা নীলা) গানে হাতেখড়ি। তাঁর বাবা (আজাদ আবুল কালাম) নিজেই সুর তোলেন, গান বাঁধেন; ছোট একটা দলও তাঁর রয়েছে। গ্রামে সবাই তাঁকে সাধুবাবা হিসেবেই চেনে। বাবার আদর্শে বড় হয়েছে মায়া। গানকে ‘ঈশ্বর’ মানেন সাধুবাবা। মায়াকে ছোটবেলা থেকেই শেখান, ‘সুর ঈশ্বরের দান। সুরের মধ্যে অসুর যেন আসতে না পারে।’

একনজরে
সিনেমা: ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’
ধরন: মিউজিক্যাল ড্রামা
চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও সংগীত: ইমন সাহা
অভিনয়: নীলাঞ্জনা নীলা, আজাদ আবুল কালাম, সাইমন সাদিক, ইন্তেখাব দিনার
রানটাইম: ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট

ছোট্ট এক গ্রামে মায়াদের বসতি। মায়া খুব ভালো গান গায় কিন্তু সংসার চলে না। এক বেলা খেলে অন্য বেলা ভাত জোটে না। ৫০০ টাকার একটা নোট দেখেও সে অবাক হয়। দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হওয়া মায়ার টাকার প্রতি এক অজানা, নিষিদ্ধ আকর্ষণও আছে।

গ্রামের ছেলে আলী (সাইমন সাদিক)। মায়াকে পছন্দ করে। আলী চায়, সারা দেশে মায়ার গান ছড়িয়ে পড়ুক। তাই তাঁকে নিয়ে যেতে চায় ঢাকা শহরে, যেখানে তার গানের কদর করবে মানুষ। মায়ার অর্থের কষ্টও ঘুচবে। প্রথমে রাজি না হলেও পরে পা রাখে জাদুর শহর ঢাকায়। তবে এখানে শুধু গানের কদর হয় না, জনপ্রিয়তা পেতে গেলে করতে হয় অনেক কিছু। মায়া এসেই বিখ্যাত ডিজে ডিস্কো দিনার ওরফে ডিডির (ইন্তেখাব দিনার) চোখে পড়ে যায়। মায়া কি পারে তার স্বকীয়তা ধরে রাখতে? নাকি ‘ডিডি ভাই’–এর ফাঁদে পা দেয়? মায়ার ভাগ্যে কী হয় শেষ পর্যন্ত?

‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’র দৃশ্য। ফেসবুক থেকে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমন স

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ব্যবসায় নারীর জয়যাত্রা

দুই দশক আগেও সিলেটে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। এখন সেখানে তৈরি হয়েছেন হাজারো নারী উদ্যোক্তা। অনেকেই পেয়েছেন সফলতা। কারও কারও ব্যবসার পরিধি তো সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছে। 

স্থানীয় প্রশাসন, উইমেন চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় কী পরিমাণ নারী ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তা আছেন, এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত নেই। তবে চার জেলায় হাজারো নারী উদ্যোক্তা আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের বাইরে আবার অনেক নারী অনলাইনে কিংবা বাসাবাড়িতে থেকেও ব্যবসা করছেন। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত হাজার নারী ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত আছেন। 

সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন বলেন, একটা সময় শুধু পোশাক, পারলার ও টেইলার্সকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেই নারীদের দেখা যেত। এখন নারীরা প্রায় সব ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ, বুটিকস, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ক্যাটারিং, ঠিকাদারি, আইটি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, চিকিৎসা উপকরণ বিক্রি, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং ও খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য। 

উইমেন চেম্বারের সভাপতি আরও জানান, দুই দশক ধরে ধীরে ধীরে সিলেটে ছোট ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়ে চলছে। নানা ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীরা ব্যবসায় এগিয়ে চলেছেন। তবে নারী উদ্যোক্তাদের আরও উৎসাহিত করা গেলে সিলেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বদলে যাবে। 

সফলতার গল্প

সিলেটের হাজারো নারী উদ্যোক্তার মধ্যে একজন ষাটোর্ধ্ব রায়হানা খানম (রেশমা)। তাঁর বাসা নগরের শিবগঞ্জ মজুমদারপাড়া এলাকায়। তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস) সিলেটের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর আছে ‘কুরশিকাঁটা গ্যালারি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। হাতে তৈরি কুরশিকাঁটার পোশাক, শোপিস, পুঁথির কাজ, ব্যাগ, নামাজের টুপি, ব্লকের থ্রি-পিসসহ নানা পণ্য তিনি এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি করেন। অনলাইনেও তিনি এসব পণ্য বিক্রি করে থাকেন। 

প্রায় ৩৫ বছর ধরে রায়হানা বেগম কুরশিকাঁটার ব্যবসা করছেন। শুরুতে অল্প পরিসরে তাঁর ব্যবসা শুরু। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে পরিবারের নানা খরচও তাঁর ব্যবসার আয়ে হতো। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত। সন্তানদের কেউ প্রবাসে থাকেন, কেউ ব্যাংকে চাকরি করেন। এখন আর সেই অর্থে সংসার তাঁর আয়নির্ভর নয়। তবে স্বামী মুজিবুল হকের পাশাপাশি একসময় তিনি ব্যবসার আয় সমানতালে পরিবারের কাজে ব্যয় করেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সংসার চালানোর কারণেই তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা এসেছিল। 

১৩ সদস্যের পরিবার আমার। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত, চাকরিবাকরি করে। পরিবারে আমার আয়ের টাকা আর দিতে হয় না। তবে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও আয় করে একসময় সংসার চালিয়েছি, সন্তানদের মানুষ করেছি, এটা ভাবলেই তো মনে একটা তৃপ্তি আসে। রায়হানা খানম, উদ্যোক্তা

রায়হানা বেগম জানান, ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটা শিখেছিলেন। তখন থেকেই সেলাই মেশিন চালাতেন। পরে এ মাধ্যমকেই তিনি ব্যবসার কাজ হিসেবে বেছে নেন। কুরশিকাঁটার পাশাপাশি নানা শোপিস পণ্য তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। মানুষজনও তাঁর কাজ পছন্দ করতে থাকেন। এরপর চলতে থাকে তাঁর সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ব্যবসা চালুর কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি সফলতা পান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়হানা নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন। এর মধ্যে শাড়ি, জামা, কাপড়ের জুতা, টুপি, বাচ্চাদের কটি, টেবিল ক্লথ, কুশন কভার, নানা নকশার ব্লকের পোশাক, শোপিসের মধ্যে ফুল, পুঁথির মালা ও ব্যাগ, চুড়ি, ময়না, মুরগি, খরগোশ, পেঙ্গুইন, বিড়াল উল্লেখযোগ্য। হাতে তৈরি এসব পণ্য আগে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা তাঁর কাছ থেকে কিনতেন। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে অনলাইনে তাঁর একটা বিশাল ক্রেতাগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এখন প্রতি মাসে অনলাইনে তিনি বিভিন্ন পণ্যের আগাম চাহিদা পান। 

রায়হানা বেগম বলেন, তিনি নিজের নকশাতেই পোশাক তৈরি করেন। অনেক সময় অস্থায়ীভাবে কর্মী নিয়োগ দিয়েও করান। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরের ৫ থেকে ৬টি প্রতিষ্ঠানে পাইকারি দরে তাঁর পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আগামী ১ ডিসেম্বর নগরের শিবগঞ্জে তিনি একটা শোরুম চালু করবেন। পরে সেখান থেকেই পণ্য বিক্রি করবেন। বিদেশ থেকেও এখন অনেক সময় তাঁর পণ্যের চাহিদা আসে। 

রায়হানা বেগম ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটার কাজ শিখেছিলেন। পরে তিনি এটা ধরেই পণ্য বানিয়ে ব্যবসায় যুক্ত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ