বিদেশিদের কাছে টার্মিনাল দেওয়ার আগে আরও আলোচনার প্রয়োজন ছিল
Published: 22nd, November 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে দেওয়ার আগে রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। নিলাম প্রক্রিয়ায়ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এসব টার্মিনাল উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে দেওয়া দরকার ছিল। এখন যেহেতু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তাই এসব টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ ও সক্ষমতা নিয়ে ভবিষ্যতে সরকারকে সচেতন থাকতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনে ‘চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ: দেশ কি সঠিক পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ভয়েস ফর রিফর্ম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রেইন। গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মে সহ-আহ্বায়ক ও বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাসরুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী, থাই-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শামস মাহমুদ প্রমুখ। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রেইনের অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ সুবাইল বিন আলম।
মূল প্রবন্ধে সুবাইল বিন আলম বলেন, দেশে কার্যত চট্টগ্রাম বন্দর একাই দেশের ৯২ শতাংশ বন্দর কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই বিলিয়ন ডলার থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে যেতে দেশের অন্যান্য বন্দরের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি ইতিবাচক। আর এসব চুক্তিতে একাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় একক কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হবে না।
ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বড় প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দীর্ঘদিনের ঘাটতি রয়েছে। দেশে এখনো সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আর বিদেশিদের হাতে টার্মিনাল দিলেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন চুক্তিতে এসব টার্মিনালে সক্ষমতা বাড়িয়ে বলা হলেও সেসব টার্মিনাল এলাকার নদীগুলোর নাব্যতা কম। তাই বড় জাহাজ প্রবেশে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি নদীর নাব্যতা বাড়াতে হয়, তাহলে পলি সরাতে হবে। ফলে সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বন্দর পরিচালনায় বাড়তি ব্যয় করতে হবে। ফলে প্রকল্প থেকে আয় হওয়ার বদলে বরং ভর্তুকি দিতে হতে পারে।
শামস মাহমুদ বলেন, ‘বন্দর যদি একটা কম্পিউটারের মতো হয়, তাহলে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হচ্ছে হার্ডওয়্যার; আর কাস্টমস হচ্ছে সফটওয়্যার। তবে দেশের বন্দরগুলোর কাস্টমসের জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা ভালো না। তাই আগে দেশের বন্দরগুলোতে এসব অভিজ্ঞতার পরিবর্তন প্রয়োজন। আর চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়ার আগে মোংলা ও পায়রা বন্দর বিদেশিদের হাতে দেওয়া দরকার ছিল। তাহলে বাংলাদেশ ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই লাভজনক হতো।’
সভায় অন্য আলোচকেরা বলেন, এ ধরনের চুক্তির মধ্যে কিছু ব্যবসায়িক গোপনীয়তা থাকে। তা হয়তো জনগণের জন্য সব সময় প্রকাশ করা যায় না। তবে এই চুক্তির ফলে দেশের কী লাভ তা প্রকাশ করা উচিত।
গোলটেবিল আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন সুলতানা, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইমাম আহমদ রেযা মুসলিম জাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ
ইমাম আহমদ রেযা মুসলিম জাতির জন্য আশীর্বাদ। তার বহুধর্মী গবেষণা বিশ্ব মুসলিমের জন্য অনুপম দৃষ্টান্ত বটে। বিশ্বের অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জীবনী, কর্ম ও লেখার ওপর উচ্চতর গবেষণা করে অনন্য শিখরে আরোহিত হয়েছেন অনেকেই। ইশকে মুস্তফার সাগরে নিমজ্জিত এমন হাস্তির জন্ম যুগান্তরের অনিমেষ বার্তা। চতুর্দশে বাতিল মোকাবিলায় তার বহুমাত্রিক লেখনি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত কাজ করেছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ১০৭তম ওফাত দিবস উপলক্ষে আলা কনফারেন্সে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আ. লীগ পুনর্বাসনের চক্রান্ত জনগণ মানবে না: নাহিদ
নানা আয়োজনে ইবির ৪৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত
ইমামে আযম ও আলা হযরত গবেষণা পরিষদ জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার শাইখুল হাদীস হাফেজ সোলাইমান আনসারীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের আহবায়ক মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হকের আহ্বানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চেয়ারম্যান শাইখুল হাদীস কাজী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দীন আশরাফী।
আলা হযরতের জীবনী ও গবেষণার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন প্রিন্সিপাল মাওলানা জসিম উদ্দীন আল আজহারী, ড. মাোহাম্মদ শফিকুর রহমান, মুফতি মাহমুদুল হাসান আলকাদেরী, ড. মাসুম বাকী বিল্লাহ, ড. এমদাদুল ইসলাম, ড. মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন নঈমী, মাওলানা ইকবাল হোসাইন আলকাদেরী, সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আল আজহারী, মুফতি এয়াকুব হোসাইন আলকাদেরী, মুফতি আব্দুল আজিজ রেজবী, শাইখ জয়নুল আবেদীন কাদেরী, সহকারী অধয়াপক আহমদ রেজা, কাজী মুবারক হোসাইন ফরায়জী, আলহ্জ্বা মোহাম্মদ ইকবাল, প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান, আব্দুল মালেক বুলবুল, মোহাম্মদ হোসেন, এডভোকেট নূরুল হুদা আনসারী, মুফতি মহিউদ্দিন হামিদী, মাওলানা একরামুল ইসলাম, ফরহাদুল ইসলাম বুলবুলি, মাওলানা মাঈনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
কনফারেন্সে বক্তারা বলেন, বিশ্বের সেরা তাফসীর গ্রন্থ কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান এবং কানযুল ঈমান ও নুরুল ইরফান বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তাফসীর গ্রন্থদ্বয়ে ঈমান- আক্বিদা বিষয়ে তথ্য ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণমূলক টিকা-টিপ্পনী সত্যিই অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। কিয়ামত পর্যন্ত এই গ্রন্থ নূহ (আ.) এর কিস্তির ন্যায় ভূমিকা রাখবে।
চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেযা খান ব্রেরলবি (রহ.) দর্শন ও গবেষণা উগ্রবাদ দমনে শান্তিময় বিশ্ব গড়ার পাথেয়। মানবতার মুক্তির জন্য আমরণ কাজ করে অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। ইসলামের মৌলিক বিষয়ের ওপর যখনই আঘাত এসেছে, তাৎক্ষণিক লেখনি ও বক্তব্যের মাধ্যমে তা রোধ করতে সময়ক্ষেপণ করেননি ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভি (রহ.)। তাঁর জেতস্বী বক্তব্য এবং লেখনি ছিল শাণিত তলোয়ারের ন্যায়। তিনি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী লেখতেন এবং বক্তব্য রাখতেন। এই জন্য পথভ্রষ্ঠ বর্ণবাদীরা তাঁকে সমীহ করে চলতো। এমনকি যারা বিশ্বাময় স্বীকৃত বাতিল আলেম তারাও আলা হযরতের গবেষণা ও ফতোয়ার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এক কথায় ঐ শতাব্দীতে সর্বাঙ্গীন বহুমাত্রিক মুকুট হীন সম্রাট ছিলেন তিনি। একজন আলেম হয়েও অর্থনীতি, রাজনীতি, দর্শন এবং সৌরজগতসহ বিবিধ বিষয়ে তাঁর দালিলীক বক্তব্য ছিল সময়ের সেরা আলোচিত বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে সিদ্ধ হস্ত ছিলেন বলেই আলা হযরত নামটা বড়ই প্রাসঙ্গিক ছিল।
আলা হযরতের পদাঙ্ক অনুসরণে বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনন্য শিক্ষা মনে করেন বক্তারা।
পরিশেষে মিলাদ ও কিয়াম এবং মোনাজাতের মাধ্যমে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘটে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি