ইতিহাসের কিছু রায় কেবল একজন ব্যক্তির ভাগ্য নির্ধারণ করে না; বরং একটি জাতির বিবেককে তার নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়টি তেমনি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

রায়ের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগও তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া এসেছে, সেসবের ভাষা, যুক্তি অনেকটা একই।

সেখানে কোনো আইনি বা তথ্যভিত্তিক পর্যালোচনা ছিল না। তাঁদের কাছে এটি ছিল এক পূর্বপ্রস্তুত রাজনৈতিক চিত্রনাট্যের মঞ্চায়ন, যার মূল প্রতিপাদ্য হলো—এই রায় একটি ‘ষড়যন্ত্র’, এটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং এই ট্রাইব্যুনাল একটি ‘অবৈধ ক্যাঙারু কোর্ট’।

এ অস্বীকারের রাজনীতি নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রত্যেক স্বৈরশাসক পতনের পর নিজের কৃতকর্মের মুখোমুখি হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের পটভূমিতে আওয়ামী লীগের এ অবস্থান বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, তাদের এ ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ কেবল ফাঁপা বুলি নয়, এটি একটি অখণ্ড ও হিমশৈলসম প্রমাণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে।

► অস্বীকারের রাজনীতি নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রত্যেক স্বৈরশাসক পতনের পর নিজের কৃতকর্মের মুখোমুখি হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। 

► সাবেক আইজিপি তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে অবহিত করেন যে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিথাল ওয়েপন ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন।’ 

► আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ট্রাইব্যুনালকে ‘অবৈধ’ বলা হচ্ছে, তখন তারা প্রকারান্তরে নিজের তৈরি করা বিচারব্যবস্থার বৈধতাকেই অস্বীকার করছে।

যেসব প্রমাণ কোনো একক সূত্র থেকে আসেনি; বরং এসেছে ক্ষমতার সর্বোচ্চ অলিন্দ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অভ্যন্তরীণ স্তর, মাঠপর্যায়ের ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত থেকে।

নির্বাসন থেকে শেখ হাসিনার লিখিত বিবৃতিটিই আওয়ামী লীগের এ প্রচারণার মূল সুর বেঁধে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, রায়টি একটি ‘কারসাজিপূর্ণ ট্রাইব্যুনালের’ এবং ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’, যার লক্ষ্য আওয়ামী লীগকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সেই বিবৃতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ছড়িয়ে দিয়ে এই বয়ানকেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।

এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে আরও তীব্র সুর। তিনি ট্রাইব্যুনালকে ‘অবৈধ দখলদার খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূসের অবৈধ আইসিটি ট্রাইব্যুনাল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, রায়টি ‘আগে থেকে নির্ধারিত’ ছিল এবং এর জন্য কেবল ‘নাটক মঞ্চস্থ’ করা হয়েছে।

যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও একই ভাষায় কথা বলেছেন। তাঁদের সবার মুখেই একই শব্দ—‘প্রহসন’, ‘সাজানো রায়’, ‘নীলনকশা’, এমনকি কেউ কেউ একে একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের ওপর ‘প্রতিশোধ’ হিসেবেও চিত্রায়িত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হলো, যেখানে প্রমাণগুলো কথা বলছে, সেখানে এ ষড়যন্ত্রতত্ত্বের আদৌ কোনো ভিত্তি আছে?

২.

এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই অখণ্ড প্রমাণশৃঙ্খলের দিকে, যা জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে নিছকই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা মাঠপর্যায়ের ‘ভুল’ হিসেবে দেখার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এ শৃঙ্খলের প্রথম ও সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রন্থিটি হলো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নিজের কণ্ঠস্বর।

বিবিসির অনুসন্ধানী দল ‘বিবিসি আই’ কর্তৃক যাচাই করা এবং ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনাকে সুস্পষ্টভাবে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আগেও নির্দেশ দিয়েছি, এখন সরাসরি নির্দেশ দিয়েছি; এখন তারা লিথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে। যেখানেই পাবে (আন্দোলনকারীদের), সেখানেই সরাসরি গুলি করবে।’

এই একটি প্রমাণই সব ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়।

এই প্রমাণের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হলে আমাদের নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি শীর্ষ নেতাদের বিচারের সময় প্রসিকিউটরদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল হলোকাস্টের জন্য অ্যাডলফ হিটলারের সরাসরি দায় প্রমাণ করা।

আমরা জানি, হিটলার গ্যাস চেম্বার চালু করার জন্য কোনো আদেশে স্বাক্ষর করেননি বা তাঁর কণ্ঠের কোনো রেকর্ডিং পাওয়া যায়নি, যেখানে তিনি গণহত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন। হিটলারের বিচার করার জন্য আইনজীবীদের অগণিত নথি, বৈঠক ও পরোক্ষ নির্দেশনার জাল বুনে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে পুরো নিধনযজ্ঞটি তাঁরই ‘অপরাধমূলক অভিপ্রায়’থেকে উৎসারিত। 

কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনকে সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়নি। এখানে রাষ্ট্রপ্রধানের নিজের কণ্ঠেই হত্যার ফরমান জারি হয়েছে। নুরেমবার্গের বিচারকদের হাতে যদি এমন অকাট্য প্রমাণ থাকত, তবে হিটলারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় হতে সময় লাগত মাত্র কয়েক সপ্তাহ।

৩.

এ প্রমাণশৃঙ্খলের দ্বিতীয় গ্রন্থিটি হলো সেই নির্দেশ বাস্তবায়নের জীবন্ত সাক্ষ্য। ক্ষমতাচ্যুত সরকারেরই সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়ে শেখ হাসিনার কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বিতর্কের পথ রুদ্ধ করে দেন। 

সাবেক আইজিপি তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে অবহিত করেন যে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিথাল ওয়েপন ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন।’

এ সাক্ষ্য ফাঁস হওয়া অডিওর নির্দেশ ও রাজপথে ঘটে যাওয়া হাজারো হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটি জীবন্ত ও অকাট্য সেতু তৈরি করে। এটি প্রমাণ করে, পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে বা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়নি; তাদের কাছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল এবং সেই নির্দেশ পালনের জন্য একটি সুসংগঠিত কাঠামো কার্যকর ছিল।

৪.

এরপর আসে মাঠপর্যায়ের প্রমাণ, বিবিসি, আল-জাজিরা, দৃক পিকচার লাইব্রেরি, ফরেনসিক আর্কিটেকচারের মতো সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রংপুরে আবু সাঈদের মতো নিরস্ত্র তরুণকে ঠান্ডা মাথায় প্রায় ১৪ মিটার দূর থেকে গুলি করা হয়েছিল। ঢাকার রামপুরায় ১৪ বছর বয়সী আশিকুল ইসলামকে ৮৪ মিটার দূর থেকে গুলি করা হয়। এগুলো কোনো বিশৃঙ্খল জমায়েত নিয়ন্ত্রণের চিত্র নয়, এক পরিকল্পিত নির্মূল অভিযানের দলিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল ‘ব্যাপক ও পদ্ধতিগত’ এবং এটি ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে। সেই প্রতিবেদনে নিহত ১ হাজার ৪০০ মানুষের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশুর উপস্থিতির তথ্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সেদিন রাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল নির্বিচার ভীতি সঞ্চার করা।

এ বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণের পাশাপাশি ছিল রাষ্ট্রীয় মানসিকতার এক ভয়ংকর উন্মোচন। যেমন আমরা দেখেছি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার কথোপকথন। যেখানে বলা হচ্ছে, ‘একটা মারলে আরেকটা আসে, এটাই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা’—এই বাক্য কোনো বিচ্ছিন্ন উক্তি নয়। এটি ছিল সেই ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত দর্শন, যেখানে আন্দোলনকারীদের মানুষ হিসেবে নয়; বরং নির্মূলযোগ্য ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

৫.

যখন শেখ হাসিনা ও তাঁর অনুসারীরা এ রায়কে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিহিত করেন, তখন তাঁরা কেবল সত্যকেই অস্বীকার করেন না; বরং ইতিহাসের এক নির্মম পরিহাসের মুখোমুখি হন। যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য, সেই ট্রাইব্যুনালেই আজ তাঁর বিচার হলো। 

সেদিন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ‘অধিনায়কত্বের দায়’-এর নীতির ভিত্তিতেই দণ্ডিত করা হয়েছিল। যুক্তি ছিল, শীর্ষ নেতারা সরাসরি গুলি না চালালেও তাঁদের নির্দেশ, নীতি ও নীরবতাই অধস্তনদের অপরাধ করতে উৎসাহিত করেছে। আজ ইতিহাসের কী নির্মম বিচার, সেই একই নীতি তাঁর বিরুদ্ধেই অকাট্যভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে।

এই অধিনায়কত্বের দায়ের ধারণাটি কোনো নতুন আবিষ্কার নয়, এটি নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে রুয়ান্ডা ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ারও ছিল মূল ভিত্তি।

রাজনৈতিক তাত্ত্বিক কার্ল শ্মিট দেখিয়েছিলেন, স্বৈরাচারী শাসকেরা প্রায়ই নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে স্থাপন করেন এবং একটি ‘ব্যতিক্রমী অবস্থা’ তৈরি করেন, যেখানে ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত নাগরিকদের বিরুদ্ধে যেকোনো মাত্রার সহিংসতা বৈধতা পেয়ে যায়। 

জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বা ‘জঙ্গি’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া ছিল ঠিক সেই ‘শত্রু’ চিহ্নিতকরণেরই প্রক্রিয়া। এ পরিস্থিতিতে শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ নির্দেশ কেবল ‘স্মোকিং গান’ হিসেবেই কাজ করে না; বরং তা এমন একটি অপরাধমূলক ব্যবস্থার অস্তিত্ব প্রমাণ করে, যেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।

আজ যখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ট্রাইব্যুনালকে ‘অবৈধ’ বলা হচ্ছে, তখন তারা প্রকারান্তরে নিজের তৈরি করা বিচারব্যবস্থার বৈধতাকেই অস্বীকার করছে।

৬.

আওয়ামী লীগের এ প্রতিক্রিয়া তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পাশাপাশি এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক সংকটকেও নির্দেশ করে। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, স্তাবকতা ও প্রশ্নাতীত আনুগত্য তাদের এমন এক বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন জগতে পৌঁছে দিয়েছিল, যেখানে তারা নিজেদের প্রচারণাকেই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল। 

তারা ভেবেছিল, ‘উন্নয়নের’ বয়ানের আড়ালে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণতন্ত্রহীনতা ও অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের মতো সত্যগুলো চাপা দেওয়া যাবে। তাই ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার বিস্ফোরণকে তারা কোনো পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেনি; দেখেছে এক গভীর ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে।

তাদের চোখে, যে তরুণ প্রজন্ম তাদেরই শাসনামলে বেড়ে উঠেছে, তারা কোনোভাবেই তাদের বিরুদ্ধে যেতে পারে না; নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো ‘দেশি-বিদেশি চক্রান্ত’ রয়েছে। এই প্যারানয়েড বা ষড়যন্ত্র-তাড়িত দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল তাদের পতনের মূল কারণ এবং আজও তারা সেই একই মানসিকতার খাঁচায় বন্দী।

৭.

শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজার রায় কোনো রাজনৈতিক প্রতিশোধের দলিল নয়, এটি সেই হাজারো শহীদের রক্তের প্রতি দায়বদ্ধতার এক আইনি স্বীকৃতি। এটি আবু সাঈদের নিরস্ত্র বুকের প্রতি, আশিকুলের নিষ্পাপ হাসির প্রতি এবং নাম না–জানা শত শত তরুণের আত্মত্যাগের প্রতি জাতির ন্যূনতম সম্মান। এ রায়কে অস্বীকার করার অর্থ হলো সেই শহীদদের অসম্মান করা।

আওয়ামী লীগ ও তার নেতারা হয়তো রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য এ অস্বীকারের রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরতে চাইবেন, কিন্তু সত্যের শক্তি অপ্রতিরোধ্য। প্রযুক্তির কল্যাণে সংরক্ষিত অডিও, ভিডিও, স্যাটেলাইট চিত্র এবং হাজারো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এক এমন অখণ্ড ইতিহাস রচনা করেছে, যা কোনো রাজনৈতিক প্রচারণার মাধ্যমে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।

নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর রবার্ট এইচ জ্যাকসন বলেছিলেন, ‘আমরা যদি আজ এই অপরাধীদের বিচার না করে ছেড়ে দিই, তাহলে এই আসামিদের মনে যে বিষাক্ত মতবাদ রোপিত হয়েছে, তা আবার বেরিয়ে আসবে এবং তারা তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখিত প্রমাণের রেকর্ডের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী ও ভয়ংকর হয়ে উঠবে।’

বাংলাদেশের সামনেও আজ সেই একই দায়। এ রায়কে সমুন্নত রাখার মাধ্যমেই নিশ্চিত করতে হবে যে আর কোনো শাসক যেন তাঁর নিজ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার দুঃসাহস না দেখান।

আরিফ রহমান গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক

* মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট র হত য ক ণ ড ন র মব র গ ব যবস থ র ষড়যন ত র র র জন ত র জন ত ক তৎক ল ন প রক র ব চ রব পর য য় র জন য বল ছ ন হ ত কর ই একই ক ষমত অপর ধ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মান্নানকে নিয়ে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র দাবি করে সিদ্ধিরগঞ্জে প্রতিবাদ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে নিয়ে অপ-প্রচার ও ষড়যন্ত্রর হচ্ছে দাবি করে সিদ্ধিরগঞ্জে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো: রিপন সরকারের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ মিছিল করে তারা।

এসময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা জানিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানায়।

এসময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো: রিপন সরকার তার বক্তব্যে বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের কিছু কতিপয় নেতা বিএনপির সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাদের নির্যাতিত নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান সাহেবকে নিয়ে নানান রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, বিগত দিনে আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে পরিক্ষীত নেতা হিসেবে নেতৃত্ব পেয়েছি। আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতা বেগম খালেদা জিয়া আজহারুল ইসলাম মান্নান ভাইকে ধানের শীষ হাতে তুলে দিয়েছেন।

আমরা তৃনমূলের নেতাকর্মীরা বলতে চাই আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জের মাটি থেকে আজহারুল ইসলাম মান্নান ভাইকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে তাকে সংসদে পাঠাব।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও যুবদল নেতা সিফাতুর রহমান রাজু বলেন, তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। তাই দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রেদোয়ান হোসেন পাপ্পু, যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ হুমায়ুন কবির, নূরুল ইসলাম, কর্নেল, সদস্য ইঞ্জি. রাসেল, সোহাগ, রিয়াজ, প্রিন্স, সুমন, আলামিন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য বাবু, টুটুল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদল নেতা সিফাতুর রহমান রাজু, শাহাদাত, হাবিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুলসহ প্রমূখ।    


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর আস্থাতেই দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে : মান্নান
  • কোনো চক্রান্ত নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না: আমান
  • কাশ্মীর টাইমসের অফিসে ভারতীয় সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনীর অভিযান
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ৩১ দফা বাস্তবায়নের  লক্ষে সম্প্রীতি সমাবেম ও গণ-প্রচারণা
  • সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রতিবাদে সমাবেশ ও স্মারকলিপি
  • বিএনপির অধ্যাপকদের শয়তান বলে হুশিয়ার করলেন যুবদল নেতা সজীব
  • মান্নানকে নিয়ে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র দাবি করে সিদ্ধিরগঞ্জে প্রতিবাদ