পড়ন্ত বিকেলে কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম। মোহাম্মদপুরের এই ছোট্ট বাসাটার আশপাশে এখনো কোনো বিল্ডিং গড়ে ওঠেনি। বিকেলে বারান্দায় বসে সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগে। ছোট্ট বারান্দায় কয়েকটা টবে কলমি, পুঁই, কাঁচা মরিচ, অ্যালোভেরা অল্প যত্নেই বেড়ে উঠছে। গাছগুলোর দিকে তাকালেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।

তখন আমি ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিলেন। আমাদের বাড়িতে অনেক বড় ফুলবাগান ছিল, ফুফু দেখাশোনা করতেন। চাষের জমিতে সারা বছর পালাক্রমে বিভিন্ন ফসল ফলত।

স্কুলের ইংরেজি প্রথম পত্রে সবজিবাগান নিয়ে একটা অনুচ্ছেদ ছিল। মনে মনে বইয়ের গল্পের মতো একটা সবজিবাগান চাইছিলাম। বাবার কাছে আবদার করতেই রাজি হয়ে গেলেন। একদিন স্কুল থেকে এসে দেখি, বাড়ির পাশের ছোট্ট পতিত জমি পরিষ্কার করে রেখেছেন বাবা। এরপর আমি, আমার মা, ভাই—সবাই মিলে বাগানে বীজ বপন, চারা রোপণ করলাম। স্কুল থেকে এসেই গোসল, খাওয়াদাওয়া সেরে দৌড়ে যেতাম সবজির বাগানে। গাছে পানি দেওয়া, আগাছা সাফ করা, সার দেওয়া—সবকিছু আমরা মিলেমিশে করতাম।

সেবার আমরা ঢ্যাঁড়স, বেগুন, টমেটো, ধনেপাতা আরও বেশ কিছু গাছ লাগিয়েছিলাম। নিজ হাতে ঢ্যাঁড়স তুলতাম। বাগান থেকে বেগুন তুলে মা রান্না করতেন বেগুনঘণ্ট, সঙ্গে দিতেন একটু ধনেপাতা! আহ্‌, মায়ের হাতের সেই বেগুনঘণ্টের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। একদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে মা বাগান থেকে বাড়ি ফিরতে বললেন। আমি বললাম সব রসুন উঠিয়ে ফেলতে হবে। মা বললেন, সকালে উঠিও, সন্ধ্যাবেলা গাছ থেকে সবজি ছিঁড়তে নেই।

সকালে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দেখি, কে যেন রাতের অন্ধকারে সব রসুন উঠিয়ে নিয়ে গেছে। চিৎকার করে মাকে ডেকে আনলাম। আমার কান্নাকাটি দেখে দেখে মা আবারও নতুন করে গাছ লাগিয়ে দেবেন বলে কথা দিলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই মানতে রাজি নই। আমার পাঠ্যবইয়ের গল্পেও চোর রাতের অন্ধকারে সবজি চুরি করে নিয়ে যায়, আমার বাগানেও তা–ই হলো। তফাত শুধু পাঠ্যবইয়ের চোর অভাবে পড়ে চুরি করে এবং পরবর্তীকালে সে ভালো মানুষ হয়ে যায়। আমাদের বাগানে কে চুরি করেছে, তা–ই জানা সম্ভব হয়নি!

আপনিও লিখুন

প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখুন ‘ছুটির দিনে’র নিয়মিত বিভাগ ‘জীবন যেমন’–এ। লিখে জানাতে পারেন জীবনের কোনো সুখ–স্মৃতি, রোমাঞ্চ–জাগানিয়া ঘটনা, উত্থান–পতন, পাওয়া না–পাওয়ার গল্প।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

প্র ছুটির দিনে, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা–১২১৫

ই-মেইল: [email protected]

ফেসবুক পেজ: fb.

com/ChutirDine

খামের ওপর বা ই–মেইলের subject-এ লিখুন ‘জীবন যেমন’।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মিতা, এ পর্যন্ত আসতে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়েছে তাঁকে১২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাবিপ্রবিতে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

বর্ণাঢ্য আয়োজনে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সমাবর্তন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, সমাবর্তন উপলক্ষে আসা হাজারো গ্র্যাজুয়েট, অভিভাবক, অতিথি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয় উৎসব ও উদ্দীপনার মিলনস্থলে।

আরো পড়ুন:

হাবিপ্রবিতে স্কলার সামিট অনুষ্ঠিত

এবারো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেবে হাবিপ্রবি

শনিবার (২২ নভেম্বর) এ উপলক্ষ্যে দুপুর দেড়টায় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সমাবর্তনস্থলে যায়।

জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠ শেষে  শিক্ষা উপদেষ্টা সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এর সভাপতিত্বে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন হাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা।

এরপর স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিনগণ গ্র্যাজুয়েটদের শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে ডিগ্রি প্রদানের সমার্পণ করেন। ডিগ্রি প্রদান শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা ‘আচার্য স্বর্ণপদক’ প্রদান করেন।

পরবর্তীতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন হাবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান। 

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সিআর আবরার বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তির দমননীতি অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা যে সাহস, মনোবল ও  দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছে, তা ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশ আজ নতুন সূচনার পথে। দীর্ঘ দেড় দশকের দমন—পীড়নের অবসান ঘটিয়ে আমরা একটি মুক্ত ও প্রাণবন্ত পরিবেশে ফিরেছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

তিনি বলেন, “দেশের সীমিত সম্পদের মধ্যেও গবেষণা উন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে।” তিনি শিক্ষকবৃন্দকে গবেষণা জোরদার করা, শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা এবং নতুন জ্ঞানের অনুসন্ধানে আরো অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, “১৮ কোটি মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের কাছে একটি পবিত্র আমানত। প্রশাসনিক, আর্থিক ও একাডেমিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।”

এবারের দ্বিতীয় সমাবর্তনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে ৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করেন।

ঢাকা/সাকিব/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ