প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্যে
Published: 23rd, November 2025 GMT
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন রাজশাহীর ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া খেলাফত মজলিস রাজশাহী-১ বাদে পাঁচটি আসনে, বাসদ তিনটি, গণসংহতি আন্দোলন দুটি ও গণ অধিকার পরিষদ একটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী-১, রাজশাহী-২ ও রাজশাহী-৬ আসনে প্রার্থী ঠিক রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে জেলায় নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে।
এদিকে বিএনপি ছয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে আসা শুরু হয়েছে। রাজশাহী-২ (সদর) ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) বাদে বাকি চারটি আসনে প্রার্থী বদলের দাবি উঠেছে। রাজশাহী-১ আসনে বিক্ষোভ মিছিল, রাজশাহী-৩ আসনে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ, রাজশাহী-৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর লোকজনের বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ এবং প্রার্থী বদলের দাবিতে সমাবেশ, রাজশাহী-৫ আসনে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য প্রার্থীর সমর্থকেরা।
প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনের কারণে বিএনপি কিছুটা অস্বস্তিতে আছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। দলের নিশ্চিত বার্তা না পাওয়ায় তৎপরতা নেই জাতীয় পার্টির (জাপা)।
রাজশাহী-১ ( গোদাগাড়ী-তানোর)
আসনটিতে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাঁচবার করে, জামায়াতে ইসলামী একবার ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন। অবশ্য ২০১৪–২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে টানা আওয়ামী লীগই জিতেছে এই আসনে। ১৯৮৬ সালে জামায়াতের বর্তমান নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান এখানে বিজয়ী হন। তিনি এবারও জামায়াতের প্রার্থী।
এই আসনে বিএনপির প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন। তিনি খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী প্রয়াত আমিনুল হকের ছোট ভাই। তাঁর মনোনয়ন নিয়ে ইতিমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতানুল ইসলামের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন।
এই আসনে বিএনপির নতুন মুখ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন। তিনি খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার মন্ত্রী প্রয়াত আমিনুল হকের ছোট ভাই। আমিনুল হক ১৯৯৬ সাল থেকে টানা চারবার এমপি ছিলেন। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকেই ছিলেন। তাঁদের নিয়ে একত্রে কাজ না করতে পারলে পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হবে শরিফ উদ্দিনকে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতানুল ইসলামের সমর্থকেরা ১৪ নভেম্বর গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
এই আসনে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) থেকে মাঠে আছেন দলটির জেলা আহ্বায়ক আফজাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আরিফুল ইসলাম প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগরের সদস্যসচিব আতিকুর রহমান এই আসনে প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় আছেন। গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মীর মো. শাহজাহানকে এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে।
রাজশাহী-২ (সদর)
এই আসনটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি চারবার, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি তিনবার, আওয়ামী লীগ দুবার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি আবারও প্রার্থী করেছে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমানকে (মিনু)। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ইতিমধ্যে তিনি প্রচার শুরু করেছেন।
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী মহানগরের নায়েবে আমির মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মুরাদ মোর্শেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. ফায়সাল হোসেন (মনি), খেলাফত মজলিসের মোহাম্মাদ উল্লাহ শাহীন, বাসদের জেলা সদস্যসচিব সামছুল আবেদীন এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
রাজশাহী–৩ আসনে শফিকুল হককে (মিলন) মনোনয়ন দেওয়ায় জেলা বিএনপির সদস্য রায়হানুল আলম ও সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেনের সমর্থকেরা রাজপথে আন্দোলন করছেন।রাজশাহী-৩ (পবা- মোহনপুর)
নগরের পাশের হওয়ায় এটিও গুরুত্বপূর্ণ আসন। এখানে আবারও বিএনপির টিকিট পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল হক (মিলন)। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে জেলা বিএনপির সদস্য রায়হানুল আলম ও সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেনের সমর্থকেরা রাজপথে আন্দোলন করছেন। প্রার্থী বদলের দাবিতে ইতিমধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, রাস্তা অবরোধের মতো ঘটনা ঘটেছে।
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির মহানগর ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলন থেকে জুয়েল রানা, ইসলামী আন্দোলন থেকে ফজলুর রহমান এবং খেলাফত মজলিস থেকে গোলাম মোস্তফাকে প্রার্থী করা হয়েছে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা)
এখানে নতুন মুখ বাগমারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডি এম জিয়াউর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সম্প্রতি থানায় পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একটি জিডি হয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামাল হোসেনের সমর্থকদের বাড়িঘরে ককটেল বিস্ফোরণ, পুকুরের মাছ বিষ দিয়ে মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৬ নভেম্বর উপজেলার ভবানীগঞ্জে তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে।
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল বারী সরদার। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন থেকে আবু মুসা, খেলাফত মজলিস থেকে ফেরদাউসুর রহমান এবং বাসদ থেকে জেলা কমিটির সদস্য ফিরোজ আলম প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।
রাজশাহী–৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলামকে বদলের দাবিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর সিদ্দিক, ইশফাক খায়রুল হক ও প্রয়াত নেতা নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলফার নাঈম মোস্তফার সমর্থকেরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন।রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর)
এই আসনে আওয়ামী লীগ সাতবার, বিএনপি পাঁচবার এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি এবার জেলা কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম মণ্ডলকে মনোনয়ন দিয়েছে। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ইশফাক খায়রুল হক ও প্রয়াত নেতা নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলফার নাঈম মোস্তফা। তাঁদের সমর্থকেরা নজরুল ইসলামকে জনগণ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ আখ্যা দিয়ে দুই উপজেলায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন। প্রার্থী বদলের দাবিতে মশালমিছিলও হয়েছে।
এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা সহ- সেক্রেটারি মো. নুরুজ্জামান লিটন। ইসলামী আন্দোলন থেকে রুহুল আমিন ও খেলাফত মজলিস থেকে আবদুল হামিদকে প্রার্থী করা হয়েছে।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট)
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ (চাঁদ) এই আসনে আবার মনোনয়ন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ আমলে শেখ হাসিনাকে ‘কবরে পাঠানোর’ বক্তব্যে তাঁর বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা হয়েছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের পুরো সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল ১০২টি। জেলে থাকাকালে মা ও স্ত্রীকে হারিয়েছেন। বিএনপি তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে। এখানেও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও আবু সাঈদকে মনোনয়ন দেওয়ার পর তাঁরা কেউ এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে মাঠে নামেননি।
আওয়ামী লীগ আমলে শেখ হাসিনাকে ‘কবরে পাঠানোর’ বক্তব্যের কারণে আবু সাঈদের (চাঁদ) বিরুদ্ধে ২৮টি মামলা হয়েছিল। সবমিলিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল ১০২টি। জেলে থাকাকালে মা ও স্ত্রীকে হারিয়েছেন।এখানে জামায়াতের প্রার্থী জেলা সহ- সেক্রেটারি নাজমুল হক। ইসলামী আন্দোলন থেকে আমিনুল ইসলাম এবং খেলাফত মজলিস থেকে তোফায়েল আহমদ এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এই আসন থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির রাজশাহী বিভাগীয় সংগঠক ইমরান ইমন নির্বাচন করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র সদস য বদল র দ ব ত ব এনপ র স র মন ত র র পর থ ক র রহম ন ল ইসল ম এই আসন কর ছ ন হয় ছ ন হয় ছ ল আম ন ল উপজ ল একব র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
পিসিবির নির্বাচক ও যুব উন্নয়নপ্রধানের পদ ছাড়লেন আজহার আলী
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নির্বাচক ও যুব উন্নয়ন বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আজহার আলী। পিসিবি কিংবা আজহার নিজে ব্যাপারটি প্রকাশ না করলেও এ খবর নিশ্চিত করেছে ইএসপিএনক্রিকইনফো। ১২ মাস এই পদে দায়িত্ব পালনের পর সরে দাঁড়ালেন আজহার।
ইএসপিএনক্রিকইনফো জানতে পেরেছে, পিসিবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মতপার্থক্যের জেরে পদত্যাগ করেছেন আজহার। বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নেয় সরফরাজ আহমেদকে পিসিবি পাকিস্তান শাহিনস (এ দল) ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর। যদিও সরফরাজের এ নিয়োগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি পিসিবি। সফর আয়োজন, পরিচালনা, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প—এসব সরফরাজের দায়িত্বের আওতাভুক্ত।
ক্রিকেটবিষয়ক খবরের এই পোর্টাল তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, আজহারের সম্ভবত মনে হয়েছে, সরফরাজের নিয়োগটি তাঁর দায়িত্বের সঙ্গে মিলে যায় এবং এ কারণে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরফরাজ আহমেদ