জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চক্রান্ত চলছে। এমনটি হলে জনগণ মানবে না। ফ্যাসিবাদের সহযোগী কোনো দলকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা কোনো আপস করবো না।”

তিনি আরো বলেন, “শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এ রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে: নাহিদ 

৩০০ আসনেই শাপলা কলি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এনসিপি: নাহিদ

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও জোটসঙ্গীদের বিচারের দাবিতে’ আয়োজিত গণমিছিল শেষে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বিকাল ৪টায় বাংলা মোটর মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শাহবাগ ও মৎস্য ভবন মোড় প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, তাসনূভা জাবিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা.

তাসনিম জারা ও জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

নাহিদ বলেন, “ট্রাইব্যনালে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়কে আমরা শুরুতেই স্বাগত জানিয়েছি। তবে তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এতে মানুষ ইনসাফ পাবে। আমরা মনে করি এই রায় কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়; বরং জনগণের ন্যায়বিচার। এ বিষয়ে কোনও ধরনের আপস চলবে না।”

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “ভারত সরকার হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমরা আশা করবো তাকে ফেরত দিয়ে দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়বে। আমরা চাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের মৈত্রী অব্যাহত থাকুক।”

তিনি বলেন, “বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ গুম-খুনসহ  মানবতাবিরোধী অনেক কাজে জড়িত ছিল। তাদের বিচারে বর্তমান ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।”

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি তারা মানবতাবিরোধী দল। কারণ, বিগত দিনে তারা পিলখানা, শাপলা ও মোদিবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যা করেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মেরেছে। লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে। আয়নাঘরে নির্যাতন করেছে। তাই তাদের বিচার করতে হবে। আমরা শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকর দেখতে চাই। শেখ হাসিনার হিম্মত থাকলে দেশে এসে প্রতিবাদ করুক।”

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “ভোট আসার পর জাতীয় পার্টিকে দিয়ে কিছু আসন পাওয়ার চেষ্টা করছে ফ্যাসিবাদী শক্তি। সিভিল সোসাইটির কিছু লোক আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও চৌদ্দ দল প্রসঙ্গে কথা বলছে। তারা মূলত ব্যাংক লুটেরা। আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যদি কোনো দল ভারতের সঙ্গে মৈত্রী করে ক্ষমতায় আসতে চায় তাদের পরিণাম আওয়ামী লীগের মতো হবে।”

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হ দ ইসল ম জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প ক র যকর র করত এনস প আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণের টাকায় শিক্ষিত হয়, জনগণের জীবন বদলানোর বেলায় নেই

রাষ্ট্রের অর্থে শিক্ষা আমাদের অধিকার, কিন্তু এর উৎস সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘাম, যা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই। শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতা কতটা সামাজিক বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক, তা এখন জরুরি প্রশ্ন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী হিসেবে আমি গভীরভাবে চিন্তা করি যে আমার শিক্ষাজীবনে কোনো টিউশন ফি লাগে না, বইপত্র লাইব্রেরি থেকে পাই, ক্লাস সরকারি ভবনে হয় এবং আমার পড়াশোনার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করে। কিন্তু এই বিপুল অর্থের উৎস কী? তা আমাকে প্রতিনিয়ত ভাবায়।

এই অর্থের উৎস হলো সমাজের সেইসব সাধারণ মানুষ, যাঁদের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল। একজন রিকশাওয়ালা, কৃষক, পোশাককর্মী এবং দিনমজুরের শ্রম ও করই আমার শিক্ষার ভিত্তি। কিন্তু যখন আমরা শিক্ষিত হয়ে নিজেদের জীবন উন্নত করি, তখন সেসব সাধারণ মানুষের জীবন পরিবর্তনের দায়িত্ব কার?

যাঁদের টাকায় আমরা শিক্ষিত হলাম, যাঁদের শ্রমের ওপর ভর করে আমাদের শিক্ষাজীবন গড়ে উঠল, তাঁরা আজও তাঁদের পূর্বের অবস্থানেই দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আমরা কতটা ভূমিকা রাখতে পারছি? তখন মনে প্রশ্ন জাগে যে ডাক্তার তাঁর টাকায় বড় হয়েছেন তিনি কি তাঁর জীবন বদলাতে পারলেন? এই বৈষম্যমূলক চিত্র আমাদের সমাজের এক কঠিন বাস্তবতা। একজন রিকশাওয়ালা যাঁর দেওয়া করের টাকায় রাস্তাঘাট নির্মিত হয়। কিন্তু সেই রাস্তা যেন তাঁর নিজের নয়। যে রাস্তায় তিনি প্রতিদিন চলাচল করেন, সেই রাস্তাই ভাঙা কারণ, কোনো প্রকৌশলী তাঁর দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি। অথচ সেই ইঞ্জিনিয়ারও একসময় সরকারি অর্থে পড়াশোনা করেছেন, জনগণের টাকায় শিক্ষিত হয়েছেন।

পোশাককর্মীরা, যাঁরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন, অথচ ছুটির দিনে তাঁদের বেতন কাটা যায়। তাঁরা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পান না। তাঁদের শ্রমের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুউচ্চ ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তাঁদের জন্য উন্নত জীবনের আলোর জানালা আজও খোলা হয়নি।

আমরা যাঁরা সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, বা আইন নিয়ে পড়াশোনা করি, আমাদের শিক্ষা কি এই গভীর সামাজিক বৈষম্যকে সঠিকভাবে বোঝাতে পেরেছে? আমরা কি এই বৈষম্য দূরীকরণে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছি?

একজন সরকারি ডাক্তার মাস শেষে যে বেতন পান, তা জনগণের করের টাকা থেকেই আসে, তবু অনেক ডাক্তার সকালে সরকারি হাসপাতালে তাঁদের দায়িত্ব পালন না করে বিকেলে প্রাইভেট চেম্বারে বসেন। যেখানে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ফি নেওয়া হয়। রোগীরা সরকারি হাসপাতালে যায় উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আশায়, কিন্তু প্রায়শই তারা সঠিক চিকিৎসা পায় না। ওষুধের তালিকায় থাকে বিভিন্ন কোম্পানির নাম। রোগীর স্বার্থ সেখানে গৌণ হয়ে পড়ে।

তাহলে শিক্ষা কোথায়? নৈতিকতা কোথায়? এসব কিছুর দায় কার? এই প্রশ্নটি আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে থাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির দিকে ইঙ্গিত করে। এই দায় শুধু সরকারের নয় আমাদেরও। আমরা যদি জনগণের টাকায় পড়াশোনা করি, তবে আমাদের শিক্ষার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব জনগণের প্রতিই।

একজন শিক্ষক যদি ক্লাসে ঠিকমতো না পড়ান, একজন ডাক্তার যদি হাসপাতালে তাঁর দায়িত্ব পালন না করেন, একজন ইঞ্জিনিয়ার যদি নিম্নমানের সেতু নির্মাণ করেন, তাহলে শিক্ষার মানে শুধু কাগজের ডিগ্রি হয়ে যায়। যা সমাজের কোনো উপকারে আসে না। আজ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। ডিগ্রিধারীর সংখ্যাও বাড়ছে, কিন্তু সমাজে ন্যায়বোধ ও মানবিকতা কমছে।

শিক্ষিত লোকজন উন্নত জীবন পাচ্ছেন, নিজেদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করছেন। আর যাঁরা ট্যাক্স দিয়ে সেই শিক্ষা সম্ভব করছেন, তাঁরা এখনো বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছেন। এটাই আজকের বাস্তব বাংলাদেশ। যেখানে শিক্ষা আর মানবিকতা দুটি ভিন্ন পথে হাঁটে।

সবশেষে আমরা হয়তো নিজেদের জীবন বদলে ফেলতে পারি, নিজেদের জন্য একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে পারি, কিন্তু যে মানুষগুলো আমাদের জীবনের ভিত্তি তৈরি করেছেন, যাঁদের শ্রম ও ত্যাগের ওপর ভর করে আমরা শিক্ষিত হয়েছি, তাঁদের জীবনের পরিবর্তনের দায় যদি আমরা এড়িয়ে যাই তাহলে আমাদের এই শিক্ষা অর্থহীন হয়ে পড়ে।

জনগণের টাকায় তৈরি শিক্ষিত নাগরিকের সবচেয়ে বড় ঋণ হলো জনগণের জীবন বদলে দেওয়া। তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং তাঁদের জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা। না হলে এই শিক্ষা তখন কেবল ব্যক্তিগত উন্নতির হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়, যা সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখে না। আমাদের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জীবনমান উন্নত করা, বৈষম্য দূর করা এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আমাদের শিক্ষা কেবল একটি ডিগ্রি হয়েই থাকবে, যা সমাজের প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারবে না।

ইতি আক্তার

শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ,

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন হতেই হবে, না হলে দেশে সংকট হবে: ডা. শফিকুর
  • নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুন ইতিহাস রচিত হবে: ডা. শফিকুর
  • জামায়াতের এমপি পদপ্রার্থীর ৫ হাজার মোটরসাইকেলের শোডাউন
  • ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য উদগ্রীব জনগণ : মাসুদুজ্জামান
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় হয়েছে: খেলাফত মজলিস
  • কথায় নয়, কাজে প্রমাণ দেব: সাতক্ষীরার ডিসি
  • নাশকতাকারীদের ঢাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে: ডিএমপি কমিশনার
  • শঙ্কা ও ভীতি দূর না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়  
  • জনগণের টাকায় শিক্ষিত হয়, জনগণের জীবন বদলানোর বেলায় নেই