ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের রাজশাহী পর্ব আজ রোববার সকালে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে। দিনব্যাপী চলবে এই ফুটবল-উৎসব, যেখানে রাজশাহী অঞ্চলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়।

আজ সকাল পৌনে ৯টায় বেলুন উড়িয়ে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান,  জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক সাইদুল ইসলাম, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের সিনিয়র ডিভিশনাল ম্যানেজার সত্য নারায়ণ ভৌমিক,  রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ রবিউল ইসলাম সরকার, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.

মো. খাদেমুল ইসলাম মোল্যা, আহ্ছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা ক্রীড়া অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন ও প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে ইস্পাহানি টি লিমিটেডের সিনিয়র ডিভিশনাল ম্যানেজার সত্য নারায়ণ ভৌমিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সব দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এ বছর ৪৬টি দল অংশ নিচ্ছে। আগামীতে আরও দল বাড়াতে চেষ্টা করবো।’

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান সব দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এক সময় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলার অনেক চর্চা ছিলো। এখনো চর্চাটা আছে। আমাদের ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তরুণদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেই আমাদের এই আয়োজন।’

প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করে জাহিদ হাসান এমিলি রাজশাহীর মাঠে তার খেলার স্মৃতিচারণা করেন। এমিলি বলেন, ‘২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচে এই মাঠেই বাংলাদেশ জিতেছিল আমার একমাত্র গোলে। তাই রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম আমার কাছে বিশেষ কিছু।’

এমিলি মুগ্ধ এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ইস্পাহানী ও প্রথম আলো যে মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে তা বাংলাদেশের বিরল ব্যাপার। আশা করব শিক্ষার্থীরা ভালো নৈপূণ্য দেখিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে।’

উদ্বোধনের পরপরই শুরু হয়েছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বনাম আহ্ছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাচ।

এই ম্যাচের পর মুখোমুখি হবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এই দুটি ম্যাচের জয়ী দল আঞ্চলিক ফাইনালে মুখোমুখি হবে আজই।
প্রথম আলোর আয়োজনে ও ইস্পাহানি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের এই আসর সামনে রেখে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম ভেতরে–বাইরে বর্ণিল সাজে সেজেছে। ঘাস কেটে, রং করে প্রস্তুত করা হয়েছে মাঠ। দর্শকের বসার আসনও ধোয়ামোছা করা হয়েছে।

রাজশাহী পর্বে অংশ নেয়া চারটি দলই গতবারও অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক পর্ব পেরিয়ে ঢাকায় সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে।

রাজশাহীর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ী দল আগামী ৭–৮ ডিসেম্বর ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্ব অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্বের টিকিট পাবে। গত ২০–২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে এই টুর্নামেন্টের চট্টগ্রাম পর্ব হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছে চিটাগাং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি।

সারা দেশের ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে দেশের চারটি অঞ্চলে। অঞ্চলগুলো হলো চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা। নকআউট ভিত্তিক টুর্নামেন্টে ঢাকার ২৮টি, চট্টগ্রামের ১০টি, খুলনা ও রাজশাহীর ৪টি করে বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিচ্ছে। গত বছর ইস্পাহানি–প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে ৪২টি দল অংশ নিয়েছিল।

আয়োজনটির সম্প্রচার সহযোগী এটিএন বাংলা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল অন ষ ঠ ন য় ফ টবল ল ইসল ম পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ব্যবসায় নারীর জয়যাত্রা

দুই দশক আগেও সিলেটে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। এখন সেখানে তৈরি হয়েছেন হাজারো নারী উদ্যোক্তা। অনেকেই পেয়েছেন সফলতা। কারও কারও ব্যবসার পরিধি তো সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছে। 

স্থানীয় প্রশাসন, উইমেন চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় কী পরিমাণ নারী ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তা আছেন, এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত নেই। তবে চার জেলায় হাজারো নারী উদ্যোক্তা আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের বাইরে আবার অনেক নারী অনলাইনে কিংবা বাসাবাড়িতে থেকেও ব্যবসা করছেন। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত হাজার নারী ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত আছেন। 

সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন বলেন, একটা সময় শুধু পোশাক, পারলার ও টেইলার্সকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেই নারীদের দেখা যেত। এখন নারীরা প্রায় সব ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ, বুটিকস, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ক্যাটারিং, ঠিকাদারি, আইটি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, চিকিৎসা উপকরণ বিক্রি, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং ও খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য। 

উইমেন চেম্বারের সভাপতি আরও জানান, দুই দশক ধরে ধীরে ধীরে সিলেটে ছোট ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়ে চলছে। নানা ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীরা ব্যবসায় এগিয়ে চলেছেন। তবে নারী উদ্যোক্তাদের আরও উৎসাহিত করা গেলে সিলেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বদলে যাবে। 

সফলতার গল্প

সিলেটের হাজারো নারী উদ্যোক্তার মধ্যে একজন ষাটোর্ধ্ব রায়হানা খানম (রেশমা)। তাঁর বাসা নগরের শিবগঞ্জ মজুমদারপাড়া এলাকায়। তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস) সিলেটের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর আছে ‘কুরশিকাঁটা গ্যালারি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। হাতে তৈরি কুরশিকাঁটার পোশাক, শোপিস, পুঁথির কাজ, ব্যাগ, নামাজের টুপি, ব্লকের থ্রি-পিসসহ নানা পণ্য তিনি এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি করেন। অনলাইনেও তিনি এসব পণ্য বিক্রি করে থাকেন। 

প্রায় ৩৫ বছর ধরে রায়হানা বেগম কুরশিকাঁটার ব্যবসা করছেন। শুরুতে অল্প পরিসরে তাঁর ব্যবসা শুরু। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে পরিবারের নানা খরচও তাঁর ব্যবসার আয়ে হতো। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত। সন্তানদের কেউ প্রবাসে থাকেন, কেউ ব্যাংকে চাকরি করেন। এখন আর সেই অর্থে সংসার তাঁর আয়নির্ভর নয়। তবে স্বামী মুজিবুল হকের পাশাপাশি একসময় তিনি ব্যবসার আয় সমানতালে পরিবারের কাজে ব্যয় করেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সংসার চালানোর কারণেই তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা এসেছিল। 

১৩ সদস্যের পরিবার আমার। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত, চাকরিবাকরি করে। পরিবারে আমার আয়ের টাকা আর দিতে হয় না। তবে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও আয় করে একসময় সংসার চালিয়েছি, সন্তানদের মানুষ করেছি, এটা ভাবলেই তো মনে একটা তৃপ্তি আসে। রায়হানা খানম, উদ্যোক্তা

রায়হানা বেগম জানান, ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটা শিখেছিলেন। তখন থেকেই সেলাই মেশিন চালাতেন। পরে এ মাধ্যমকেই তিনি ব্যবসার কাজ হিসেবে বেছে নেন। কুরশিকাঁটার পাশাপাশি নানা শোপিস পণ্য তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। মানুষজনও তাঁর কাজ পছন্দ করতে থাকেন। এরপর চলতে থাকে তাঁর সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ব্যবসা চালুর কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি সফলতা পান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়হানা নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন। এর মধ্যে শাড়ি, জামা, কাপড়ের জুতা, টুপি, বাচ্চাদের কটি, টেবিল ক্লথ, কুশন কভার, নানা নকশার ব্লকের পোশাক, শোপিসের মধ্যে ফুল, পুঁথির মালা ও ব্যাগ, চুড়ি, ময়না, মুরগি, খরগোশ, পেঙ্গুইন, বিড়াল উল্লেখযোগ্য। হাতে তৈরি এসব পণ্য আগে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা তাঁর কাছ থেকে কিনতেন। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে অনলাইনে তাঁর একটা বিশাল ক্রেতাগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এখন প্রতি মাসে অনলাইনে তিনি বিভিন্ন পণ্যের আগাম চাহিদা পান। 

রায়হানা বেগম বলেন, তিনি নিজের নকশাতেই পোশাক তৈরি করেন। অনেক সময় অস্থায়ীভাবে কর্মী নিয়োগ দিয়েও করান। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরের ৫ থেকে ৬টি প্রতিষ্ঠানে পাইকারি দরে তাঁর পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আগামী ১ ডিসেম্বর নগরের শিবগঞ্জে তিনি একটা শোরুম চালু করবেন। পরে সেখান থেকেই পণ্য বিক্রি করবেন। বিদেশ থেকেও এখন অনেক সময় তাঁর পণ্যের চাহিদা আসে। 

রায়হানা বেগম ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটার কাজ শিখেছিলেন। পরে তিনি এটা ধরেই পণ্য বানিয়ে ব্যবসায় যুক্ত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ