বিমা আইন সংশোধনের আগে আইডিআরএর সংস্কার দরকার
Published: 22nd, November 2025 GMT
বিমা খাতের সংস্কারের কথা বলে বিদ্যমান বিমা আইন, ২০১০-এর সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কিন্তু বিমা খাতের সংস্কারের আগে দরকার খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর সংস্কার। যেহেতু বিমা খাত অনুন্নত এবং অবহেলিত, জনগণ বিমা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং বিমার তত জ্ঞান নেই, তাই নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এ খাতের উন্নয়নও দরকার। কিন্তু আইন সংশোধনের প্রস্তাবে উন্নয়নের কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এমন অভিমত উঠে এসেছে। বিমাবিষয়ক দেশের প্রথম অনলাইন পোর্টাল ইনস্যুরেন্স নিউজবিডি এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
ইনস্যুরেন্স নিউজ বিডির সম্পাদক ও প্রকাশক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএর সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বিআইপিডি) মহাসচিব কাজী মো.
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিমা খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি আইডিআরএ। সংস্থাটি আইন সংশোধনের উদ্যোগ ছাড়া এ খাতের নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। জীবনবিমা খাতের যেসব কোম্পানির তহবিল তছরুপ হয়েছে তা উদ্ধার, গ্রাহকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ এবং তহবিল তছরুপে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নন-লাইফ বিমা খাতেও অবৈধ কমিশন বন্ধ ও দক্ষ জনবল তৈরিতেও করতে পারেনি কিছু।
বক্তারা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো চলছে প্রেষণে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। যাঁদের বেশির ভাগেরই বিমাবিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বিমা আইন-২০১০–এর যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে কি না, আইন সংশোধনের আগে সে বিষয়টি আরও ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করা দরকার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিমা আইনে ১৬০টি ধারা আছে এবং প্রতিটি ধারায় কমবেশি একাধিক উপধারা আছে। সংশোধন প্রস্তাবে ৯৯টি ধারা অপরিবর্তিত রেখেছে। বাকি ৬১টি ধারার উপধারাসহ পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। কয়েকটি ধারা বাতিলের প্রস্তাবও করা হয়। এগুলো পর্যালোচনা করা সময়সাপেক্ষ।
সংশোধন করে বিমা আইন অমান্যকারীদের ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা জরিমানার প্রস্তাব করেছে। বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক নিয়োগ, অনুমোদন ও তাদের সর্বোচ্চ সময়কাল ছয় বছর করার প্রস্তাব করেছে। বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে উদ্যোক্তা সাতজন, শেয়ারহোল্ডার সাতজন ও নিরপেক্ষ পরিচালক সাতজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত আইনে পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থের কথা উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে আইডিআরএকে আরও ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। ক্ষমতার যদি অপব্যবহার করা হয়, তাহলে বিমাশিল্প আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এই শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে অসাধু ব্যক্তিরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করে জনগণের অর্থ আরও লুটপাট করবে। এতে একসময় মানুষ আর বিমা পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে না।
সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা প্রশ্ন তোলেন, আইডিআরএ কি বিমাশিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা রাখে? সচিবালয় থেকে প্রেষণে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এনে পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতো করে আইডিআরএর প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হয়নি, যদিও সংস্থাটির বয়স ১৫ বছর পার হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইড আরএর র প রস ত ব দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিমা আইন সংশোধনের আগে আইডিআরএর সংস্কার দরকার
বিমা খাতের সংস্কারের কথা বলে বিদ্যমান বিমা আইন, ২০১০-এর সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কিন্তু বিমা খাতের সংস্কারের আগে দরকার খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর সংস্কার। যেহেতু বিমা খাত অনুন্নত এবং অবহেলিত, জনগণ বিমা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং বিমার তত জ্ঞান নেই, তাই নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এ খাতের উন্নয়নও দরকার। কিন্তু আইন সংশোধনের প্রস্তাবে উন্নয়নের কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এমন অভিমত উঠে এসেছে। বিমাবিষয়ক দেশের প্রথম অনলাইন পোর্টাল ইনস্যুরেন্স নিউজবিডি এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
ইনস্যুরেন্স নিউজ বিডির সম্পাদক ও প্রকাশক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএর সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বিআইপিডি) মহাসচিব কাজী মো. মোরতুজা আলী প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিমা খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি আইডিআরএ। সংস্থাটি আইন সংশোধনের উদ্যোগ ছাড়া এ খাতের নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। জীবনবিমা খাতের যেসব কোম্পানির তহবিল তছরুপ হয়েছে তা উদ্ধার, গ্রাহকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ এবং তহবিল তছরুপে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নন-লাইফ বিমা খাতেও অবৈধ কমিশন বন্ধ ও দক্ষ জনবল তৈরিতেও করতে পারেনি কিছু।
বক্তারা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো চলছে প্রেষণে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। যাঁদের বেশির ভাগেরই বিমাবিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বিমা আইন-২০১০–এর যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে কি না, আইন সংশোধনের আগে সে বিষয়টি আরও ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করা দরকার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিমা আইনে ১৬০টি ধারা আছে এবং প্রতিটি ধারায় কমবেশি একাধিক উপধারা আছে। সংশোধন প্রস্তাবে ৯৯টি ধারা অপরিবর্তিত রেখেছে। বাকি ৬১টি ধারার উপধারাসহ পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। কয়েকটি ধারা বাতিলের প্রস্তাবও করা হয়। এগুলো পর্যালোচনা করা সময়সাপেক্ষ।
সংশোধন করে বিমা আইন অমান্যকারীদের ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা জরিমানার প্রস্তাব করেছে। বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক নিয়োগ, অনুমোদন ও তাদের সর্বোচ্চ সময়কাল ছয় বছর করার প্রস্তাব করেছে। বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে উদ্যোক্তা সাতজন, শেয়ারহোল্ডার সাতজন ও নিরপেক্ষ পরিচালক সাতজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত আইনে পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থের কথা উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে আইডিআরএকে আরও ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। ক্ষমতার যদি অপব্যবহার করা হয়, তাহলে বিমাশিল্প আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এই শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে অসাধু ব্যক্তিরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করে জনগণের অর্থ আরও লুটপাট করবে। এতে একসময় মানুষ আর বিমা পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে না।
সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা প্রশ্ন তোলেন, আইডিআরএ কি বিমাশিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা রাখে? সচিবালয় থেকে প্রেষণে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এনে পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতো করে আইডিআরএর প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হয়নি, যদিও সংস্থাটির বয়স ১৫ বছর পার হয়েছে।