ইউরোপের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হাইব্রিড যুদ্ধ কোন পথে
Published: 23rd, November 2025 GMT
১৪ নভেম্বর দুই ব্যক্তি ওয়ারশ থেকে ইউক্রেনে যাওয়ার রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা করেন। মিকা নামের একটি গ্রামের কাছে বিস্ফোরণে রেললাইনের একটি অংশ ভেঙে যায়। আরেকটি ঘটনায় গোওয়াম স্টেশনের কাছে বিদ্যুতের তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৪৭৫ জন যাত্রী বহনকারী একটি ট্রেনকে জরুরি ভিত্তিতে থামতে হয়। চালক দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটত।
পরে গণমাধ্যমে জানা যায়, রেললাইনে কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বে তিনটি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল।
এই ঘটনার পর পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক পার্লামেন্টে জানান, পোল্যান্ডের প্রসিকিউটর অফিস এবং বিশেষ সংস্থার তদন্তে (মিত্রদেশগুলোকে নিয়ে) দেখা গেছে, যাঁরা এই নাশকতা ঘটাতে চেয়েছেন, তাঁরা হলেন ইউক্রেনের নাগরিক ইয়েভহেনি ইভানভ ও ওলেক্সান্দর কোনোনভ। তাঁরা বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে এসে নাশকতার পর বেলারুশে ফিরে যান।
বেলারুশ হলো রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। দুজনের মধ্যে একজন আগে লভিভ শহরে নাশকতার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। অন্যজন রাশিয়া–নিয়ন্ত্রিত দনবাস অঞ্চলের বাসিন্দা।
এসব গোষ্ঠী স্বাধীনতা দিবসে বড় জমায়েত করেছে। নাভরোকি, কাজিনস্কি এবং ব্রাউন মিলে কনফেডারেশন আয়োজিত ইউক্রেনবিরোধী জাতীয়তাবাদী ও ফ্যাসিস্টদের শোভাযাত্রায় অংশ নেন। জরিপ বলছে, এখনই নির্বাচন হলে ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি ও কনফেডারেশন মিলে পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারে।রাশিয়া সাধারণত পোল্যান্ডে হামলা করতে ইউক্রেনীয়দের ব্যবহার করে। পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোসোয়াভ সিকোরস্কি বলেছেন, এটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ। দখল করা এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে বেছে নেওয়া হয়। তাঁদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে কাজ করানো সহজ। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও পোলিশ কর্তৃপক্ষ আগেই দুই নাশকতাকারীর পরিচয় ও ছবি পেয়ে গেছে। তারা বলছে—দুজনই রাশিয়ার পক্ষে কাজ করেছে।
তাঁরা সামরিক মানের সি-ফোর বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিলেন। ৩০০ মিটার দূরের তার দিয়ে ট্রেন যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। রাশিয়ার আগের নাশকতার সঙ্গেও এটির মিল আছে। রেললাইনের বাঁকানো জায়গায়, উঁচু বাঁধের ওপর বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। এতে ট্রেন লাইনচ্যুত করার উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয়। এভাবে রাশিয়া দেখাতে চেয়েছে—ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর রেলপথে তারা বড় ক্ষতি করতে পারে।
পোল্যান্ডে রাশিয়ার উসকানি বাড়ছে এবং আরও বিপজ্জনক হচ্ছে। মে ২০২৪-এ রাশিয়ার পক্ষে কাজ করা লোকজন ওয়ারশর মারিভিলস্কা স্ট্রিটের একটি বড় শপিং সেন্টারে আগুন দেয়। তারা ভ্রোৎসোয়াভের একটি পেইন্ট কারখানাতেও আগুন লাগায়। হাজার হাজার মানুষ তাদের সম্পদ ও চাকরি হারায়। দুই ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরা পড়ে এবং দোষী সাব্যস্ত হয়। এরপর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১৯টি ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢোকে। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়।
এসব ঘটনায় প্রাণহানি হয়নি, কিন্তু হতে পারত। কিন্তু সর্বশেষ নাশকতার উদ্দেশ্যই ছিল মানুষ হত্যা।
এখন আরও উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা আছে। শান্তি ও যুদ্ধের মাঝের ধূসর জায়গা দ্রুত ছোট হয়ে আসছে। রাশিয়ার লক্ষ্য হলো পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করা, পোল্যান্ডের ভেতরে রাজনৈতিক বিভাজন আরও বাড়ানো, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দলগুলোকে শক্তিশালী করা। যারা বলছে পোল্যান্ড ইইউ থেকে বেরিয়ে যাক—তাদের প্রভাবও বাড়ছে, এবং তারা কিছু বড় ধরনের সাফল্যও পাচ্ছে।
১১ নভেম্বর পোল্যান্ডের স্বাধীনতা দিবসে একটি ভাষণ দেন নতুন ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট কারোল নাভরোকি। তিনি একবারও রাশিয়াকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেননি। বরং তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আক্রমণ করেন।
তিনি বলেন, ‘পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কখনোই আমাদের আবার সেই “ময়ূর আর তোতা” বানাতে দেবেন না, যারা পশ্চিমের কথা শুধু নকল করে।’ তাঁর মতে, কিছু পোলিশ রাজনীতিবিদ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এক টুকরা করে বিদেশি প্রতিষ্ঠান, আদালত ও ইইউর হাতে তুলে দিচ্ছেন। বারবার আমন্ত্রণ পেলেও তিনি এখনো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে কিয়েভ যাননি।
ক্রেমলিন জানে, নাভরোকির নির্বাচনে জারোসোয়াফ কাজিনস্কির নেতৃত্বাধীন পপুলিস্ট দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস’ আরও উজ্জীবিত হয়েছে। তারা যেকোনো অজুহাতে টাস্ক সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ করবে। রেললাইন নাশকতার ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক পার্লামেন্টে শান্তভাবে তথ্যভিত্তিক বক্তব্য দিচ্ছিলেন। কিন্তু ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যরা বারবার চিৎকার করে তাঁকে বাধা দিচ্ছিলেন।
নাভরোকি এই সুযোগে সরকারকে সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁকে ঠিকমতো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এখন তিনি নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের কাছ থেকে নিয়মিত ব্রিফিং চান। অথচ এই সংস্থাগুলো কেবল প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কাজ করে। নাভরোকি সাম্প্রতিক গোয়েন্দা ও পাল্টা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়োগেও স্বাক্ষর করেননি। এটি প্রচলিত নিয়ম ভাঙার মতো ঘটনা। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলোই এমন হামলা প্রতিরোধের কাজ করে।
নাভরোকি এমন বিচারকদের নিয়োগেও আপত্তি তুলছেন, যারা আগের ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সরকারের বিচারমন্ত্রী জবিগনিউ জিওব্রোর চাপ মানেননি। এসব বিচারক তাঁদের রায়ে ইউরোপীয় আদালতের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে বলা হয় জিওব্রোর কাজ ইইউ আইনের বিপরীত।
এদিকে জিওব্রোর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি হাঙ্গেরিতে পালিয়ে গেছেন আর হাঙ্গেরি ইইউর মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। আবার জিওব্রোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, সাবেক বিচারক টমাস্ শ্মিদ্ট, পালিয়ে বেলারুশে গেছেন।
টাস্ক এবং পোল্যান্ডের গণতন্ত্র ও ইইউ-সমর্থকদের জন্য ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টিই একমাত্র সমস্যা নয়। আরও কঠোরপন্থী, ইউক্রেনবিরোধী ‘কনফেডারেশন’ দল জনপ্রিয় হচ্ছে। একইভাবে গ্রেজগোর্স ব্রাউনের প্রকাশ্য প্রো-রাশিয়ান এবং ইহুদিবিরোধী ‘কোরোনা’ দলও বাড়ছে। সাম্প্রতিক জরিপে তাদের সমর্থন ৫ শতাংশ নির্বাচনী সীমা পেরিয়েছে।
এসব গোষ্ঠী স্বাধীনতা দিবসে বড় জমায়েত করেছে। নাভরোকি, কাজিনস্কি এবং ব্রাউন মিলে কনফেডারেশন আয়োজিত ইউক্রেনবিরোধী জাতীয়তাবাদী ও ফ্যাসিস্টদের শোভাযাত্রায় অংশ নেন। জরিপ বলছে, এখনই নির্বাচন হলে ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি ও কনফেডারেশন মিলে পরবর্তী সরকার গঠন করতে পারে।
পোল্যান্ড এখন ইউরোপে সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী গড়ছে। এ কারণে ইইউ চিন্তিত। কারণ, ভবিষ্যতে এই সেনাবাহিনী এমন মানুষের হাতে যেতে পারে, যারা রাশিয়ার স্বার্থে কাজ করবে।
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
স্লাভমির সিয়েরাকোভস্কি ক্রিটিকা পলিটিচনা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্সাটর সেন্টারের সিনিয়র ফেলো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ধ নত ইউক র ন ন শকত র ক জ কর ন ভর ক সরক র র একট ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৬
নারায়ণগঞ্জে একটি সিমেন্ট কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ছয়জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের রাজধানী ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বন্দর থানা এলাকার মদনগঞ্জে ঘটনাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
ভূমিকম্পে হুড়োহুড়িতে আহত ২৯ শ্রমিক এখনো হাসপাতালে
হাসপাতালের কর্মচারীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন
দগ্ধরা হলেন- ফেনীর নাহিদ হাসান (২২), পাবনার কামাল হোসেন (৪৫), নোয়াখালীর তাইজুল ইসলাম (৩৫), জামালপুরের ফেরদৌস (৩৫), কুষ্টিয়ার তোরাব আলী (৫৫) এবং নারায়ণগঞ্জের আতিকুর রহমান (৪২)।
দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মো. রহিম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিমেন্ট কারখানায় বয়লার থেকে বিস্ফোরণ হয়। পাশে থাকা ছয়জন দগ্ধ হন। দ্রুত তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, ছয়জনের শরীররই মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে। শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।
ঢাকা/অনিক/মাসুদ