পূর্ণিমার জোয়ারে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে খুলনার দাকোপ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে শত শত বিঘার আমন ধান ও অন্যান্য ফসল তলিয়ে গেছে। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া হরিসভা মন্দিরসংলগ্ন ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে বটবুনিয়া গ্রাম ও নিশানখালী বিলে পানি ঢুকে পড়ে। আজ বুধবার সকালে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা চালান। তবে বিকেল পর্যন্ত বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি।

খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা যায়, তিনটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে দাকোপ উপজেলা। উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পড়েছে পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা। বটবুনিয়া গ্রামে গত বছরও দুই জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে গত রাতের ভেঙে যাওয়া জায়গা ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহায়তায় স্থানীয় লোকজন মাটি ও জিও বস্তা দিয়ে সেটা কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছিলেন। গতকাল রাতে ভরা জোয়ারে মুহূর্তের মধ্যে মূল বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার ঢাকী নদীতে চলে যায়। এরপর জোয়ারের পানি হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। সকালের জোয়ারের আরেক দফা প্লাবিত হয়েছে এলাকা।

তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সঞ্জয় সদরদার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে চেষ্টা চালিয়েও বাঁধটি মেরামত করে পানি আটকানো সম্ভব হয়নি। তবে এরই মধ্যে এলাকার দুই হাজার বিঘা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি এখন পাশের পানখালী ইউনিয়নেও চলে যাবে। এখনো বাঁধতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এলাকার বাঁধের অন্যান্য অংশও এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ফসল তোলার আগপর্যন্ত পুরো সময় আতঙ্কে কাটবে এলাকার মানুষের।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

শফিকুল ইসলাম জানান, বাঁধ ভেঙে ৩০০ হেক্টর (প্রায় ২ হাজার ২৩১ বিঘা) আমন প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটার সময় পানিটা সরে যাচ্ছে। বাঁধ এখনই মেরামত করতে পারলে ক্ষতি কমবে। তারপরও ভেঙে যাওয়া জায়গার মুখের কাছের কিছু জমির ফসল বালুতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গত এক বছরে ৩১ নম্বর পোল্ডারের কাজীবাছা, শিবসা, ঢাকী নদীর বিভিন্ন জায়গার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। গত বছরের মে মাসে বটবুনিয়া বাজারসংলগ্ন ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে পানখালী ইউনিয়নের খোনা গ্রামে পানি প্রবেশ করে।

পাউবো ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে নির্মিত ৩১ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। সারা বছরই জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলে। মাঝেমধ্যে সেগুলো ভেঙে যায়। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে সেগুলো মেরামত করেন। তবে ৩১ নম্বর পোল্ডারে জাইকার অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৭৫০ মিটার স্থায়ী নদীশাসনের কাজ চলমান। এই পোল্ডারের টেকসই বাঁধ নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো আছে। সেটা এখনো পাস হয়নি।

খুলনা পাউবোর সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ-২-এর উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) গোপাল কুমার দত্ত আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই এলাকায় তীব্র নদীভাঙন চলছে। এর ওপর পূর্ণিমার প্রভাবে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় জোয়ারের কারণে বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার এলাকা ভেঙে যায়। আমরা কিছুদিন ধরে এখানে কাজ করছিলাম। তবে বাঁধের নিচে দেওয়া জিও ব্যাগসহ ভেসে গেছে। স্থানীয় মানুষের সহায়তায় বাঁধ আটকানোর চেষ্টা চলছে। এখনো সফল হতে পারিনি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ল কজন প ল ব ত হয় নদ র ব ম র মত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘৮ যুদ্ধের পাঁচটিই থামিয়েছি’ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে—দাবি করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার দাবি করেছেন, তিনি আটটি যুদ্ধের পাঁচটি থামিয়েছেন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শুল্কের মাধ্যমে ‘ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার’ (লাখ লাখ কোটি ডলার) আয় করছে; যা তাঁর কথায় মার্কিন অর্থনীতির জন্য লাভজনক হয়েছে।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি পাঁচটি যুদ্ধ সরাসরি শুল্কের হুমকি দেখিয়ে থামিয়েছি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আমরা বাইরের দেশ থেকে শুল্ক ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলার নিচ্ছি। আমি আটটি যুদ্ধের মধ্যে পাঁচটি সরাসরি থামিয়েছি, শুল্কের হুমকি দেখিয়ে—যদি তারা লড়াই থামাতে না চায় অথবা শুরু করে।’

ইতিপূর্বে বারবার নিজের করা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এ নতুন মন্তব্য এসেছে। সেসব দাবিতে তিনি শুল্ক ব্যবহার করে চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর কথাও বলেছিলেন। তবে ভারত কখনোই তাঁর ভূমিকাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সহায়ক হিসেবে স্বীকার করেনি।

ইতিপূর্বে বারবার নিজের করা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এ নতুন মন্তব্য এসেছে। সেসব দাবিতে তিনি শুল্ক ব্যবহার করে চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ থামানোর কথাও বলেছিলেন। তবে ভারত কখনোই তাঁর ভূমিকাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সহায়ক হিসেবে স্বীকার করেনি।

আরও পড়ুনট্রাম্প কেন ৬টি যুদ্ধ থামানোর দাবি করছেন১৯ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্পের আরও যত দাবি

পূর্বসূরি জো বাইডেনকে নিশানা করে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এখন প্রায় ‘কোনো মুদ্রাস্ফীতি নেই’; যা তাঁর কথায় ‘স্লিপি জো বাইডেন’–এর (ঘুমকাতুরে) অধীন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ছিল।

ট্রাম্প পোস্টে লিখেছেন, ‘পুঁজিবাজার মাত্র ৯ মাসে ৪৮ বার সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। লিওনার্দ লিও, কোচ এবং ওইসব দেশ যারা বছরের পর বছর নিজেদের শুল্ক ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তারা আর আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না।’

আমরা বাইরের দেশ থেকে শুল্ক ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রিলিয়ন ডলার নিচ্ছি। আমি আটটি যুদ্ধের মধ্যে পাঁচটি সরাসরি থামিয়েছি, শুল্কের হুমকি দেখিয়ে—যদি তারা লড়াই থামাতে না চায় অথবা শুরু করে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টআরও পড়ুনট্রাম্প যুদ্ধ থামিয়ে বন্ধু বাড়াবেন, সমালোচকদের তদন্তের আওতায় আনবেন২০ জানুয়ারি ২০২৫

উল্লেখ্য, লিওনার্দ লিও প্রভাবশালী মার্কিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কনজারভেটিভ বিচারপতি নিয়োগ ও কিছু শীর্ষ রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। আর ‘কোচ’ বলতে ট্রাম্প কোচ পরিবারকে বুঝিয়েছেন; যারা মার্কিন রাজনীতিতে বড় পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে ও প্রভাব রাখে।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবচেয়ে ধনী, শক্তিশালী ও সম্মানিত’ অবস্থায় রয়েছে। তাঁর কথায়, এর পেছনের মূল কারণগুলো হলো, ‘নভেম্বর ৫’, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ‘শুল্ক’।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ‘সবচেয়ে ধনী, শক্তিশালী ও সম্মানিত’ অবস্থায় রয়েছে। তাঁর কথায়, এর পেছনের মূল কারণগুলো হলো, ‘নভেম্বর ৫’, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ‘শুল্ক’।

আরও পড়ুনরাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ‘চাপ বাড়াচ্ছেন’ ট্রাম্প১০ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ