খুলনার দাকোপে জোয়ারের পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে চলে গেছে বসতবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত। দ্রুত বাঁধ মেরামত করা না হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকী নদীর জোয়ারের পানির চাপে দাকোপের ৩০ নম্বর পোল্ডারের অধীন তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার আনুমানিক ২০০ ফুট ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া ও নিশানখালী গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে বসতঘর, মাছের ঘের, পুকুর ও ৩ হাজার বিঘা জমির আমন ফসল। দ্রুত  বাঁধ মেরামত না করতে না পারলে দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলা বুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাঁকড়া বুনিয়াসহ গোটা তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন গাজী। 

তিনি বলেছেন, ভোরবেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো বেশি তৎপর হয়ে দুটি বালির টিউব দিয়ে চাপা দিলে বাঁধ আটকানো সম্ভব হত। কিন্তু, তারা সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, দাকোপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমত হোসেন, দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম এবং স্থানীয় সেনা ক্যাম্প কমান্ডার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

ইউএনও আসমত হোসেন বলেছেন, বালির টিউবসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সব উদ্যোগ নিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ পরিবারের মাঝে চিড়া, গুড়, চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য পরিবারগুলোকেও সহযোগিতা করা হবে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেড়িবাঁধের ওই অংশটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমন ক্ষতি হলো।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্রস্তুত থাকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন’, সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিককে মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজার ডটকমের শরীয়তপুর প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল করে এ হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় তাঁকে বলা হয়, ‘নড়িয়াতে কোনো মামলা হলে আপনি প্রস্তুত থাইকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন। দেখব আপনাকে কে বাঁচায়?’

হুমকি দেওয়া ওই নেতার নাম মতিউর রহমান ওরফে সাগর। তিনি নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। গতকাল তাঁর বিরুদ্ধে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারে ‘চাল বিতরণে অনিয়ম, বিএনপি নেতার রোষানলে ইউএনও’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিক আশিকুর রহমান।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দ বাংলাবাজার এলাকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার বিএনপি নেতা মতিউর রহমান। সম্প্রতি তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান গত ২১ আগস্ট ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁকে চিঠি দেন। পরে ইউএনও ২৭ আগস্ট স্থানীয় সুবিধাভোগীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া পাঁচ ভুক্তভোগী লিখিতভাবে তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা জানান। ২৮ আগস্ট ইউএনও ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে চালের মজুত ও বিক্রির মাস্টাররোল যাচাইয়ে ৩৫৫ কেজি চাল কম পান। পরে তিনি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেন। খাদ্য কর্মকর্তা ৩১ আগস্ট মতিউর রহমানের গুদামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কম পেয়ে তাঁকে জরিমানা করেন। অনিয়মের ঘটনায় করা তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠান ইউএনও। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মতিউর রহমানের ডিলারশিপ বাতিল করে খাদ্য অধিদপ্তর। এসব ঘটনায় ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হন মতিউর রহমান। তিনি ৬ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ইউএনওর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন। এতে তিনি ইউএনওর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও দুই লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেন। এ নিয়ে গতকাল নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারে একটি প্রতিবেদন করেন সাংবাদিক আশিকুর রহমান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল রাতে সাংবাদিক আশিকুর রহমানের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান। তিনি ওই সাংবাদিককে বলেন, ‘আমার চোখের সামনে পইড়েন, আমার কথা রেকর্ড কইরেন।... আপনি আওয়ামী লীগ করেন আবার আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেন। আওয়ামী লীগ করে বিএনপির পেছনে লাগছেন। নড়িয়াতে কোনো মামলা হলে আপনি প্রস্তুত থাইকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন। দেখব আপনাকে কে বাঁচায়?’ একপর্যায়ে সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি।

সাংবাদিক আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শরীয়তপুরে অনেক দিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন। বিভিন্ন সময় অনিয়মসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করেছেন। বিএনপি নেতা মতিউর রহমানের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি হুমকি দিয়েছেন। নড়িয়ায় বিএনপির যত মামলা হবে, তাতে তাঁকে জড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সাংবাদিক হিসেবে কাউকে কোনো হুমকি দিইনি। গালিগালাজও করিনি। আশিকুর রহমান যাত্রাবাড়ীতে ছাত্রলীগ করতেন। তিনি এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা লেখালেখি করছেন। তাই তাঁকে ফোন করে এসব না করার জন্য বলেছি। তিনি কোনো সাংবাদিক নন, তিনি ছাত্রলীগের নেতা।’

এ বিষয়ে নড়িয়ার ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান প্রথম আলোকে বলেন, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর পর খাদ্য অধিদপ্তর তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করেছে। এ নিয়ে তিনি তাঁর (ইউএনও) ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। লোকমুখে শুনেছেন, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের একটি অভিযোগ করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘প্রস্তুত থাকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন’, সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি