দাকোপে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩ গ্রাম প্লাবিত
Published: 8th, October 2025 GMT
খুলনার দাকোপে জোয়ারের পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে চলে গেছে বসতবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত। দ্রুত বাঁধ মেরামত করা না হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকী নদীর জোয়ারের পানির চাপে দাকোপের ৩০ নম্বর পোল্ডারের অধীন তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার আনুমানিক ২০০ ফুট ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া ও নিশানখালী গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে বসতঘর, মাছের ঘের, পুকুর ও ৩ হাজার বিঘা জমির আমন ফসল। দ্রুত বাঁধ মেরামত না করতে না পারলে দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলা বুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাঁকড়া বুনিয়াসহ গোটা তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন গাজী।
তিনি বলেছেন, ভোরবেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো বেশি তৎপর হয়ে দুটি বালির টিউব দিয়ে চাপা দিলে বাঁধ আটকানো সম্ভব হত। কিন্তু, তারা সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, দাকোপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমত হোসেন, দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম এবং স্থানীয় সেনা ক্যাম্প কমান্ডার প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ইউএনও আসমত হোসেন বলেছেন, বালির টিউবসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সব উদ্যোগ নিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ পরিবারের মাঝে চিড়া, গুড়, চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য পরিবারগুলোকেও সহযোগিতা করা হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেড়িবাঁধের ওই অংশটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমন ক্ষতি হলো।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জয়পুরহাটে ভাইয়ে-ভাইয়ে দ্বন্দ্ব, ‘বেরিয়ে এল’ দুর্নীতির তথ্য
দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে একাধিক মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। এর মধ্যে এক ভাইয়ের দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান করে তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায়। দুদকের সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নওশাদ আলী বাদী হয়ে গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
আদালত সেই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দেন। আদালতের নির্দেশে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আক্কেলপুরের কানুপুর গ্রামে অভিযুক্ত ফজলুর রহমানের ৩ বিঘা ২৫ শতাংশ আবাদি জমির দখল বুঝে নেন ইউএনও।
অভিযুক্ত ফজলুর রহমান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে যান। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান।
ফজলুর রহমানের দাবি, তিনি বৈধ আয়ে সম্পদ অর্জন করেছেন। আয়কর রিটার্ন ফাইল দাখিলের সময় জমিগুলোর তথ্য ভুলে উল্লেখ করা হয়নি। জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বে তাঁর বড় ভাই শফিউল ইসলাম এমন কাজ করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে শফিউল আলম বিষয়টি অস্বীকার করেন।
দুদকের সমন্বিত নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক মেহেবুবা খাতুন বলেন, ফজলুর রহমান চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৬ টাকার স্থাবর সম্পত্তি ও ৮০ লাখ ১৫ হাজার ২৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তা নওশাদ আলী বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন।
আদালত ফজলুর রহমানের হেফাজতে থাকা জয়পুরহাট শহরের সরদারপাড়া মহল্লার ছয় শতাংশের একটি বাড়ি ও আক্কেলপুর উপজেলার কানুপুর গ্রামের ৩ বিঘা ২৫ শতক আবাদি জমি ক্রোক করার আদেশ দেন। ওই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে ইউএনওকে রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আজ ইউএনও কানুপুর মাঠের জমিগুলোর দখল বুঝে নিয়েছেন। তখন তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।
আক্কেলপুরের ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা খানম বলেন, ফজলুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে আদালত তাঁকে রিসিভার নিয়োগ করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সকালে তফসিলভুক্ত ৩ বিঘা ২৫ শতক জমির দখল বুঝে নিয়ে লাল ঝান্ডা পুঁতে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর এলাকার বাইরে হওয়ায় জয়পুরহাট সদরে থাকা ছয় শতাংশের বাসাটির দখল বুঝে নেওয়া হয়নি।
তবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার সব সম্পদ বৈধ। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ভুলক্রমে জমিগুলো ফাইলে তোলা হয়নি। আমাদের ভাইদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। এই সুযোগে বড় ভাই শফিউল আলম আমার ক্ষতি করেছে।’
শফিউল আলম বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে, সত্য। তবে আমার পরিবারের কেউ দুদকে অভিযোগ করেনি। দুদক আমার ছোট ভাই ফজলুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছে বলে জেনেছি।’