বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, “যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় না, তারা প্রকৃত অর্থে দেশের কল্যাণ চায় না। দেশের কল্যাণ যারা চায় না, তারাই দেশের শত্রু। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রোধে একটি বিশেষ গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে দেশে আবারো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিতে পারে।”

শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে নগরীর ফান টাউন কনভেনশন হলে কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত রুকন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

নীলফামারীতে পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে জামায়াতের মতবিনিময়

উপদেষ্টাদের অনেকের ভূমিকা জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ: পরওয়ার

মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকলে ভবিষ্যতে যে কোনো অপশক্তি সংবিধানের দোহাই দিয়ে জুলাই আন্দোলনকে বেআইনি ঘোষণা করতে পারে। তখন আন্দোলনকারীদের দেশবিরোধী হিসেবে বিচার করা হবে।”

তিনি বলেন, “দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতির পক্ষে। বিশ্বের ৯৬টি দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। আগামী নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যদি একপক্ষের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তারা জনতার আদালতে আসামি হবে।”

বিগত ১৫ বছরের শাসন ব্যবস্থাকে তিনি ‘ভারতের করদ রাজ্য’ অভিহিত করে বলেন, “এই সময়ের মধ্যে জাল ভোট, গুম-খুন, লুটপাট, মামলা ও নিপীড়নের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের ওপর জুলুম চালানো হয়েছে— এসব জালিমদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে।”

প্রধান অতিথি বলেন, “দেশে আইনের শাসন কায়েম হলে লুটপাট বন্ধ হবে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সর্বপ্রথম লুটপাট বন্ধ করবে, বেকারত্ব দূর করবে, শিক্ষা খাতের উন্নয়ন করবে এবং বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করবে। পাশাপাশি অমুসলিমদের অধিকারও নিশ্চিত করবে।”

কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে ও মহানগর সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মুফতি মোছলেহ উদ্দিন, এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, সহকারী সেক্রেটারি কামারুজ্জামান সোহেল, কাউন্সিল সদস্য মোশাররফ হোসাইন ও নাছির আহম্মেদ মোল্লাসহ মহানগরীর কর্মপরিষদ ও শুরা সদস্যবৃন্দ।

ঢাকা/রুবেল/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে গন্তব্যে যাব?’

ঢাকায় যাবেন নির্মাণশ্রমিক রঞ্জু মিয়া। তাই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা রাধাকানাই থেকে আজ রোববার সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন ঢাকার উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই ঢাকায় যাওয়া হয়নি তাঁর।

জুলাইযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার জেরে ময়মনসিংহে এনসিপির নেতা-কর্মী ও পরিবহনশ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচির পর এখনো ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। আজ রোববার সকাল থেকে ময়মনসিংহ থেকে সব ধরনের বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহনশ্রমিক ও নেতারা। এতে বিপাকে পড়েছেন রঞ্জু মিয়ার মতো বহু মানুষ।

রঞ্জু মিয়ার প্রশ্ন, যানবাহনের মালিক-শ্রমিকেরা নিজেদের দাবি–দাওয়া নিয়ে কথা বলবে প্রশাসনের সঙ্গে। কিন্তু বাস বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের কেন ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে?

আরও পড়ুনঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল করছে না, নতুন করে আন্তজেলা বাসও বন্ধ ৪ ঘণ্টা আগে

সমস্যার শুরু গত শুক্রবার সন্ধ্যায়। এনসিপির হালুয়াঘাট উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানকে ইউনাইটেড পরিবহনের শ্রমিক লাঞ্ছিত করেছেন—এমন অভিযোগে এনসিপির নেতা-কর্মীরা গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন। আর এনসিপি নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি ও এক শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে বিক্ষোভে নামেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে ময়মনসিংহ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে, দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

এরপর গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসন শ্রমিক নেতা ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হকের (শামীম) মালিকানাধীন ইউনাইটেড পরিবহনের ১৬টি গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলে এনসিপি নেতারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। আর গাড়ি চলাচলে কেউ বাধা দেবেন না—এমন আশ্বাসে শ্রমিকেরাও গতকাল বিকেলে সড়ক থেকে সরে যান। কিন্তু বিকেল পাঁচটা থেকে ইউনাইটেড পরিবহনের ৭০টি ও শৌখিন এক্সপ্রেসের ১৫০টি বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আজ রোববার সকালে ময়মনসিংহ থেকে সব বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহনশ্রমিক ও নেতারা।

ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা বাস টার্মিনাল, দীঘারকান্দা বাইপাস ও পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের চিত্র। বাস না পেয়ে অনেকে অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যানে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। আবার অনেকে বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। তাঁদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবায়েত জাহান।
আজ সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে কথা হয় রুবায়েতের সঙ্গে। তিনি জানান, আজ থেকে তাঁর ক্লাস শুরু। কিন্তু মাসকান্দা বাস টার্মিনালে এসে দেখেন বাস চলছে না। তাই বাসায় ফিরে যেতে হচ্ছে।

ছোট ভাই রাফিউর হাসানকে টঙ্গীর মাদ্রাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন জুনায়েদুল ইসলাম। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি বলেন, ‘তারাকান্দা থেকেও কোনো বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছে না। ভেঙে ভেঙে এখানে এসেছি। কিন্তু এখান থেকেও বাস যাচ্ছে না। সে কারণে খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে গন্তব্যে যাব?’

নগরের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকা হয়ে ঢাকাগামী যানবাহন চলাচল করে। সেখানে গিয়েও দেখা যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে বহু মানুষ। কিন্তু কোনো বাস নেই।

মাসকান্দা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারের সামনে ব্যানার টানিয়ে শ্রমিকেরা অবস্থান করছেন। সেখানে ব্যানারে লেখা, ‘পরিবহনশ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার দাবিতে অনশন ধর্মঘট। মিথ্যা অপবাদে শ্রমিকের পেটে লাথি মারা মানব না। ষড়যন্ত্র করে গাড়ি বন্ধ করা চলবে না। ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তার চাই। শ্রমিক ও যাত্রী হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।’

দাবির বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পেয়ে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে এসেছিলেন বলে জানিয়ে জেলা এনসিপির সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার কোনো পরিবহন বন্ধের পক্ষে নই, শুধু ফ্যাসিস্ট শামীমের ১৬টি গাড়ি আমরা বন্ধের পক্ষে। কিন্তু তাঁরা (পরিবহনশ্রমিক ও মালিকরা) কেন ফ্যাসিস্টের পক্ষে সব গাড়ি বন্ধ রেখেছেন, তা বোধহগম্য নয়। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে তাঁরা এখানে একটি ষড়যন্ত্র করছেন।’

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাস চলাচল বন্ধ রাখা মালিকদের সিদ্ধান্তের বিষয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আলোচনা করছেন।

ময়মনসিংহ থেকে সব রুটে বাস চলাচলের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত সেল ময়মনসিংহ এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেতারা। শনিবার বিকেল চারটায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সজাগ থাকতে হবে : সাখাওয়াত 
  • ‘খুব টেনশন হচ্ছে, কীভাবে গন্তব্যে যাব?’
  • ঢাকা বিভাগীয় ট্যাংকলরী মালিক সমিতির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত
  • ভেদাভেদ ভুলে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে: দুলু
  • সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরকে নাসিকে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগে নিন্দা-প্রতিবাদ, গণসাক্ষর