নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সে সময় যথাযথ প্রক্রিয়ায় ভর্তি না হওয়ায় এমফিল প্রোগ্রামে তাঁর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী রাশেদ খান এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো.

সানাউল্লাহ হক গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করেন। তাতে অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সব সদস্যের ডাকসুর সদস্যপদ বাতিলপূর্বক ভুক্তভোগী প্রার্থীদের মূল্যায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে ডাকসু ভবনে সংঘটিত হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিচারের দাবি জানানো হয়।

একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বলা হয়, ২০১৯ সালে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কিছু প্রার্থী বা প্যানেলের পক্ষ থেকে ভোটদান, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, ভোট কারচুপি করা, কৃত্রিম লাইন সৃষ্টি করা, ভোটকেন্দ্র দখল করা, ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারা, ভোট দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাসহ নানা কারচুপি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।

এতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে কমিটির কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের গোলাম রাব্বানী, মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিমের এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তাই তাঁদের ভর্তি আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এমন অবস্থায় বৈধ ছাত্রত্ব না থাকায় গত ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর প্রার্থিতা বৈধ ছিল না। সুতরাং এই কমিটি গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার জন্য জোর সুপারিশ করে।

২০১৯ সালে জিএস পদে গোলাম রাব্বানী ১০ হাজার ৪৮৪ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী রাশেদ খান। তিনি ৬ হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। গোলাম রাব্বানীর জিএস পদ বাতিলের পর রাশেদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি বর্তমানে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।

রাশেদ খান লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানীর এমফিলের ছাত্রত্ব চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত। ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ায় ঢাবি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তার ডাকসু পদও অবৈধ। ২০১৯ সাল থেকে আমার সংগ্রাম চালু ছিল। ২০২৫ সালে এসে ন্যায়বিচার পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০১৯ স ল জ এস প

এছাড়াও পড়ুন:

হারিয়ে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, সেফ হোমে ছয় বছর কাটিয়ে ফিরলেন ঘরে

বাবার সঙ্গে ভোলা থেকে চট্টগ্রামে বেড়াতে আসে এক কিশোরী। এরপর হারিয়ে যায়। ভবঘুরে হয়ে সড়কের ধারে কাটছিল জীবন। এরই মধ্যে ধর্ষণের স্বীকার হয় সে। হয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা। পুলিশ তাকে সড়ক থেকে উদ্ধার করলেও পরিবারের নাম-ঠিকানা ঠিকভাবে বলতে না পারায় আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে (সেফ হোম)। সেখানে এক ছেলেশিশুর জন্ম দেয় ওই কিশোরী।

ঘটনাটি ছয় বছর আগের। হারিয়ে যাওয়া সেই কিশোরীর বয়স এখন ২১। এক আইনজীবীর সহায়তায় অবশেষে বাবার খোঁজ পেয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার আদালত তাঁকে তাঁর বাবার জিম্মায় তুলে দেন।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কিশোরী থাকা অবস্থায় ওই নারী রিকশাচালক বাবার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরে বেড়াতে আসেন। তাঁকে বাসায় রেখে রিকশা নিয়ে বের হন বাবা। তিনি কৌতূহলবশত ঘর থেকে বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। বাবাও তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাননি। সড়কে ভবঘুরের মতো তাঁর জীবন কাটছিল। এর মধ্যেই তিনি ধর্ষণের শিকার হন, হয়ে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা। ২০১৯ সালের মে মাসে তাঁকে কোতোয়ালি থানার পুলিশ উদ্ধার করে। তবে পুলিশের কাছে বিস্তারিত কিছুই বলতে পারছিলেন না তিনি। পুলিশই তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই শম্পা হাজারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর উদ্ধার কিশোরীকে আদালতে পাঠানো হয়। কোনো অভিভাবক না পাওয়ায় উদ্ধার কিশোরীকে হাটহাজারীর নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া তার শিশুটির বয়স এখন সাড়ে পাঁচ বছর। বর্তমানে নগরের রৌফাবাদের ছোট মণি নিবাসে রয়েছে শিশুটি।

বাবার কাছে অবশেষে মেয়ে ফিরতে পেরেছে—এটিতেই আমার আনন্দ। অসহায় মানুষের হাসিতেই আমি জীবনের সুখ খুঁজে পাই। সেফ হোমে জন্ম নেওয়া শিশুটিকেও ছোট মণি নিবাস থেকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে শিগগিরই আদালতে আবেদন করা হবে।তুতুল বাহার, আইনজীবী

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অবস্থিত মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের উপতত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে রয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় বছর আগে কৈশোর বয়সে আসা ওই নারী আমাদের সেফ হোমেই ছিলেন। এক আইনজীবী তাঁর অভিভাবকদের খুঁজে বের করেছেন। আদালতের নির্দেশে ওই নারীকে অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’

যে আইনজীবী ওই নারীকে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে সহায়তা করেন, তাঁর নাম তুতুল বাহার। ২৭ বছরের আইনি পেশায় অভিভাবকহীন শতাধিক নারী-শিশুকে জিম্মায় নিয়ে নিজের বাসায় রেখেছেন তুতুল বাহার। অনেককে বিয়ে দিয়েছেন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আর অসহায় মানুষের পক্ষে বিনা মূল্যে মামলা লড়েছেন ২২ হাজারের বেশি।

জানতে চাইলে তুতুল বাহার জানান, হাটহাজারীর সেফ হোমে থাকা এক নারীকে সম্প্রতি পরিবারের জিম্মায় দিতে আদালতে আবেদন করেন তিনি। ওই নারীর বাড়িও ভোলায়। তাঁর মাধ্যমে ২০১৯ সাল থেকে সেফ হোম থাকা ওই নারীর বিষয়ে জানতে পারেন। এরপর ভোলা ও চট্টগ্রামের নানা জায়গায় যোগাযোগের মাধ্যমে ওই নারীর পরিবারকে খুঁজে বের করেন। তাঁকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে বিনা খরচে আইনি সহায়তা দেন তুতুল বাহার।

২৭ বছরের আইনি পেশায় শতাধিক অভিভাবকহীন নারী-শিশুকে জিম্মায় নিয়ে নিজের বাসায় রেখেছেন তুতুল বাহার। অনেককে বিয়ে দিয়েছেন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আর অসহায় মানুষের পক্ষে বিনা মূল্যে মামলা লড়েছেন ২২ হাজারের বেশি।

জানতে চাইলে তুতুল বাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার কাছে অবশেষে মেয়ে ফিরতে পেরেছে, এটিতেই আমার আনন্দ। অসহায় মানুষের হাসিতেই আমি জীবনের সুখ খুঁজে পাই। সেফ হোমে জন্ম নেওয়া শিশুটিকেও ছোট মণি নিবাস থেকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে শিগগিরই আদালতে আবেদন করা হবে।’

হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে দীর্ঘদিন পর ফিরে পেয়ে আপ্লুত তাঁর বাবা। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর মেয়েকে পুরো চট্টগ্রাম শহর তন্নতন্ন করে খুঁজেছিলেন তিনি। মাইকিং করেছেন, কিন্তু পাননি। আইনজীবী তুতুল বাহার তাঁর মেয়েকেই শুধু খুঁজে দেননি, বিনা খরচে আইনি সব সহযোগিতা করেছেন। মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি তিনি।

ওই বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে জন্মের পর থেকেই মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তাই হারিয়ে যাওয়ার সময় বয়সে কিশোরী হলেও বিস্তারিত ঠিকানা কাউকে জানাতে পারেনি। ধর্ষণের বিষয়েও সে পুলিশকে কিছুই জানাতে পারেনি। হারিয়ে যাওয়ার পর কিছু মানুষ আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে, আবার একজন মানুষ মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সব মানুষ খারাপ নয়, ভালো মানুষ এখনো আছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাকসু নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি ছাত্র ইউনিয়নের
  • হারিয়ে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, সেফ হোমে ছয় বছর কাটিয়ে ফিরলেন ঘরে