হিন্দু-অধ্যুষিত খুলনার বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হতে পারেন জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই নেতার প্রার্থিতা নিয়ে ইতিমধ্যে এলাকায় আলোচনা চলছে। কৃষ্ণ নন্দী নিজেও প্রার্থিতার বিষয়ে দল থেকে ইতিবাচক সংকেত পেয়েছেন বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

কৃষ্ণ নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল যদি আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করে, তাহলে আমি ওখানে প্রার্থী হব, ভোট করব। দল খুলনা-১ আসনের জন্য আমাকে কিছুটা নিশ্চিত করেছে। সেটা এখন আমার মুখ দিয়ে শোনা ঠিক হবে না। দলের সিগন্যাল না পেলে তো মানুষ বলত না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দল আমাকে মোটামুটি নিশ্চিত করেছে। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর আমি শিগগির এলাকায় যাব। আমি এখনই না গেলেও আমার লোকজন এলাকায় যাচ্ছে।’

ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় গোলাম পরওয়ারের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিটি সমাবেশেই সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি ছিল। ২০০৩ সালে জামায়াতে যোগ দেওয়া কৃষ্ণ নন্দী ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি। খুলনা-১ আসনে তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা থাকলেও সেখানে আগে থেকেই বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলার সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্র থেকে আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছি। তবে কথা রয়েছে পরবর্তী পর্যায়ে আমরা প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারব। এই মাসের ১৫ থেকে ১৬ তারিখের দিকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কিছু এলাকায় আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও উপজাতি প্রার্থী দেব। সেই আলোকে কিছু কথাবার্তা চলছে এখন। যেটা শুনছেন, সেটা চূড়ান্ত কোনো রিপোর্ট নয়। প্রার্থী চূড়ান্তের রিপোর্টটা কিছুদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।’

খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও খুলনা-১ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জেলার সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এখানে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান (পাপুল) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা পার্থ দেব মণ্ডল গণসংযোগ করছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে দাকোপ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর কুমার রায়ও আলোচনায় আছেন।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত খুলনা-১ আসনে ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনো জেতেনি। এখানে সব সময় সংখ্যালঘু প্রার্থী জিতেছেন। একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান সব সময় দুর্বল ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনকার খুলনা-১ আসনটি খুলনা-৫ নামে ছিল। প্রথম এমপি হন কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান প্রফুল্ল কুমার শীল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেতেন প্রফুল্ল কুমার। ১৯৯৬ সালে জয়ী হন শেখ হাসিনা। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ হারুনুর রশিদ। কিন্তু সংখ্যালঘু প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। যদিও পঞ্চানন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে শপথ নেন। ২০০১ সালে আবার জয়ী হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী জন আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০২৪ সালে জয়ী হন ননী গোপাল মণ্ডল। সব মিলিয়ে আসনটিতে সব সময় সংখ্যালঘু প্রার্থীই এমপি হয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ছ ক ষ ণ নন দ এল ক য় প রথম ব এনপ আওয় ম ১ আসন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের প্রার্থিতা নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বললেন, ‘দল আমাকে মোটামুটি নিশ্চিত করেছে, প্রস্তুতি নিচ্ছি’

হিন্দু-অধ্যুষিত খুলনার বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হতে পারেন জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই নেতার প্রার্থিতা নিয়ে ইতিমধ্যে এলাকায় আলোচনা চলছে। কৃষ্ণ নন্দী নিজেও প্রার্থিতার বিষয়ে দল থেকে ইতিবাচক সংকেত পেয়েছেন বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

কৃষ্ণ নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল যদি আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করে, তাহলে আমি ওখানে প্রার্থী হব, ভোট করব। দল খুলনা-১ আসনের জন্য আমাকে কিছুটা নিশ্চিত করেছে। সেটা এখন আমার মুখ দিয়ে শোনা ঠিক হবে না। দলের সিগন্যাল না পেলে তো মানুষ বলত না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দল আমাকে মোটামুটি নিশ্চিত করেছে। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর আমি শিগগির এলাকায় যাব। আমি এখনই না গেলেও আমার লোকজন এলাকায় যাচ্ছে।’

ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় গোলাম পরওয়ারের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিটি সমাবেশেই সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি ছিল। ২০০৩ সালে জামায়াতে যোগ দেওয়া কৃষ্ণ নন্দী ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি। খুলনা-১ আসনে তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা থাকলেও সেখানে আগে থেকেই বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলার সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্র থেকে আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছি। তবে কথা রয়েছে পরবর্তী পর্যায়ে আমরা প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারব। এই মাসের ১৫ থেকে ১৬ তারিখের দিকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কিছু এলাকায় আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও উপজাতি প্রার্থী দেব। সেই আলোকে কিছু কথাবার্তা চলছে এখন। যেটা শুনছেন, সেটা চূড়ান্ত কোনো রিপোর্ট নয়। প্রার্থী চূড়ান্তের রিপোর্টটা কিছুদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।’

খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও খুলনা-১ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জেলার সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এখানে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান (পাপুল) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা পার্থ দেব মণ্ডল গণসংযোগ করছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে দাকোপ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর কুমার রায়ও আলোচনায় আছেন।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত খুলনা-১ আসনে ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনো জেতেনি। এখানে সব সময় সংখ্যালঘু প্রার্থী জিতেছেন। একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান সব সময় দুর্বল ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনকার খুলনা-১ আসনটি খুলনা-৫ নামে ছিল। প্রথম এমপি হন কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান প্রফুল্ল কুমার শীল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেতেন প্রফুল্ল কুমার। ১৯৯৬ সালে জয়ী হন শেখ হাসিনা। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ হারুনুর রশিদ। কিন্তু সংখ্যালঘু প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। যদিও পঞ্চানন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে শপথ নেন। ২০০১ সালে আবার জয়ী হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী জন আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০২৪ সালে জয়ী হন ননী গোপাল মণ্ডল। সব মিলিয়ে আসনটিতে সব সময় সংখ্যালঘু প্রার্থীই এমপি হয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ