বন্দরের মদনপুর টু মদনগঞ্জ সড়কের হাজীপুর এলাকায় চোর ও ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পরিণত হয়ে উঠেছে ভয়ংকর ছিনতাই ফাঁদ-এ। এক শ্রেণীর পেশাদার চোর ও ছিনতাইকারীরা প্রতিদিন সংঘবদ্ধভাবে এসব চুরি ও ছিনতাই কাজ চালিয়ে আসছে।

এসব দৃশ্য ওই সড়কে চলাচল করা সাধারণ মানুষের কাছে নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার হলেও প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে চোর ও ছিনতাইকারী চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

প্রতিদিনই তারা ওই সড়কে চলাচল করা বিভিন্ন কোম্পানীর কন্টেইনার,কভার্ডভ্যান ও ট্রাকসহ সব ধরণের পরিবহণ থেকে মূল্যবান মালামাল ও পণ্য সরিয়ে নিচ্ছে। ট্রাক থেকে চাউলের বস্তা চুরি করার এমনই একটি দৃশ্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সড়কে চলাচল করা জনৈক অটোচালক জানান,এই রাস্তায় সব সময় ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে থাকে। বিশেষ করে রাস্তার পাশে ওরা দলবেধে প্রস্তুত থাকে সুযোগ বুঝে কখনো বিভিন্ন কোম্পানীর চলন্ত লোড গাড়ি থেকে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এসব মালামাল নিতে ওদের সময় লাগে ২ থেকে ৩মিনিট।

এই চক্রটি কেবল চলন্ত পরিবহণ থেকেই মালামাল চুরি করে না ওই রাস্তায় চলাচল করা বিভিন্ন অটো,মিশুক ও সিএনজি যাত্রীদেরকেও অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা,মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ারও ঘটনা ঘটছে অহরহ।

ভয়ংকর এই ছিনতাই চক্রটির কারণে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

ঢাকার মালিবাগ থেকে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী রিপন মিয়া জানান,আমরা এখানে আমাদের এক আত্নীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি সকালে গাড়ি থেকে নামতেই চিনতাইকারীরা আমাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার মোবাইল পকেটে থাকা নগদ ৩০হাজার টাকা,আমার ওয়াইফের হাতের চুড়ি, কানের দুল এমনকি নাকফুলটাও তারা নিয়ে যায়।

জনবহুল এড়িয়ায় তারা প্রকাশ্যে ছিনতাই করে এখানে কি প্রশাসনের তৎপরতা নেই? ওই রাস্তায় চলাচল করা পথচারী যাত্রী সাধারণদের অনেকেই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,প্রশাসনের অদক্ষতার কারণে বন্দরের বিভিন্ন অঞ্চলের অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হাজীপুরের এসব ছিনতাই ঘটনাগুলোই তার উদাহারণ।

তারা আরো জানান,চোর ও ছিনতাইকারী চক্রটি সাধারণতঃ ফরাজীকান্দার হাজী কাজীম উদ্দিনের নির্মাণাধীন মিল থেকে শুরু কে দেলোয়ার হোসেনের পেট্রোল পাম্পের সামনে এবং হাজীপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এড়িয়াতেই এসব অপকর্ম করে থাকে।

এক সময় এই জোনটিতে রাতের বেলা পুলিশী টহল ও তৎপরতা জোরদার থাকলেও ইদানীং তা আর দেখা যায় না যে কারণে ভয়ংকর চক্রটি একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে চলেছে।

সচেতন মহলের দাবি, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে অনতিবিলম্বে হাজীপুর জোনটিতে পুলিশী তৎপরতা জোরদার অন্যথায় একটি স্থায়ী চেকপোষ্ট স্থাপন করা হোক। 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ছ নত ই চ র ও ছ নত ই

এছাড়াও পড়ুন:

বাউলদের ওপর হামলা দেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাউল, মরমি শিল্পী, লোকসংগীতশিল্পী, মঞ্চ ও যাত্রাশিল্পী এবং সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর ধারাবাহিক হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের ৪০ জন লেখক, শিল্পী, শিক্ষক, সংগীতশিল্পী ও অধিকারকর্মী। আজ সোমবার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেশের চিরায়ত সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, নাগরিক অধিকার ও সংবিধানের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে—উগ্রবাদী গোষ্ঠী যেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও মানবতাবাদী চেতনাকে নিশানা করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আরও দুঃখজনক হলো, রাষ্ট্র নীরব থেকে অনেক ক্ষেত্রে এসব তৎপরতায় মদদ দিচ্ছে।’

বিবৃতিদাতারা অভিযোগ করেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে নানা অজুহাতে সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কখনো ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে, কখনো সামাজিক আচরণ বা পোশাকের কারণে মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাউল-ফকিরদের ওপর হামলা, চুল কেটে হেনস্তা, নারীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তি, নারী-অধিকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি—এসব ঘটনায় তাঁরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই জেলায় পুলিশের উপস্থিতিতেই বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিবৃতিদাতাদের মতে, এসব ঘটনা শুধু বিচ্ছিন্ন নয়; বরং পরিকল্পিতভাবে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর আঘাতের অংশ।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাউল, লালন ও লোকসংগীতের চেতনার ওপর আঘাত করে সমাজে বৈচিত্র্য, সাম্য ও মানবতাবাদী সংস্কৃতিকে ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। অথচ সরকারের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে। এতে গণতন্ত্র বিশ্বাসী মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে, আর শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরাও নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, উগ্রবাদী তৎপরতা দমনে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। নিপীড়নের শিকার শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা। একই সঙ্গে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের অবিলম্বে মুক্তিও দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন—নাট্য নির্দেশক অসীম দাশ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম আরিফ উদ্দিন আহমেদ, নাট্যকর্মী মুবিদুর রহমান সুজাত, চলচ্চিত্র ও সংগীতশিল্পী আলমগীর কবির, লেখক ও সাংবাদিক আহমেদ মুনির, প্রকাশক দীপংকর দাশ, লেখক জাহেদ মোতালেব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী ভাস্কর রায়, উন্নয়নকর্মী দেবাশীষ সেন, সংগীতশিল্পী রাসেল চৌধুরী, কবি রিমঝিম আহমেদ, স্বরূপ সুপান্থ, জয়দেব কর, চিত্রশিল্পী ইরফান জুয়েল, কবি ও প্রকাশক মনিরুল মনির, চৌধুরী ফাহাদ, কবি নৈরিত ইমু, চলচ্চিত্র নির্মাতা পংকজ চৌধুরী, অনুবাদক মাহমুদ আলম, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আসমা বীথি, সাংবাদিক শিউলি শবনম, লেখক রোকসানা বন্যা, কাজী রুনু বিলকিস, শিল্পী ও শিক্ষক জিহান করিম, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ মজুমদার, সাংবাদিক ফজলে এলাহী, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী শাহরিয়ার পারভেজ, অধিকারকর্মী ইউসুফ সোহেল, জাবেদ চৌধুরী, সংস্কৃতিকর্মী সাবিলা তানজিনা, সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুন, ইফতেখার ফয়সাল, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী রমেন দাশগুপ্ত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে ছিনতাইচক্রের ভয়ংকর ফাঁদ হাজীপুর
  • বাউলদের ওপর হামলা দেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত