১০ বছর পর রাবির গোল্ড মেডেলিস্ট রফিকুলের মাস্টার্সের ফল প্রকাশ
Published: 26th, November 2025 GMT
দীর্ঘ এক দশকের ভোগান্তি ও জটিলতা পেরিয়ে সিজিপিএ ৪.০০ পেয়ে মাস্টার্সের ফলাফল পেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রিভিউ শেষে তার মাস্টার্সের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
রাবিতে চালু হলো কাঙ্ক্ষিত ই-কার
রাবিতে পাঁচ দোকানে অভিযান, জরিমানা
রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে আসা তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, রফিকুল ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে ফলিত গণিত বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষেই তিনি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরের বছর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। শুরু হয় বিরোধীদের দমন-পীড়ন। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে শিবির করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়। তবে জেল থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আবার প্রথম হন রফিকুল। অনার্সে ৩.
২০১৪ সালে বিভাগে দুজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে রফিকুল এপিয়ার্ড সনদ দিয়ে আবেদন করেন। এরপরই শুরু হয় নতুন জটিলতা। একই বছর বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামসুল আলম সরকারের বিরুদ্ধে নম্বরপত্র টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়, যার সঙ্গে রফিকুলকেও জড়ানো হয়। যদিও পরবর্তীতে তদন্তে এর সত্যতা মেলেনি।
বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান খান আকাশ তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজান উদ্দিনের কাছে রফিকুলের ব্যাপারে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ দেন এবং বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে মানববন্ধনও করান বলে ছাত্রশিবিরের জোর অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত থিসিস জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগে রফিকুলের ছাত্রত্ব বাতিল করেন সুপারভাইজার।
জুলাই অভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরের ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের কাছে রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহালের আবেদন করেন রফিকুল। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিভিউ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সিন্ডিকেটে রিভিউ কমিটি গঠন করে। কমিটি যাচাই করে থিসিস পুনঃসংশোধনের নির্দেশ দেয়। সংশোধিত থিসিস মূল্যায়নের পর আজ তার ফল প্রকাশ করা হয়।
ফল প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় রফিকুল ইসলাম বলেন, “২০১৫ সালে আমার ছাত্রত্ব বাতিলের পর প্রায়ই দোয়া করতাম, আল্লাহ আমার মৃত্যুর পূর্বে হলেও আমার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দিও, আমার মায়ের জীবদ্দশায় তার চোখের পানির প্রতিদান দিও। মহান রব আমার দোয়া কবুল করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এ সম্মান ফিরে পেতে অনেকের ত্যাগ রয়েছে, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার পেছনে যেসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “রফিকুল ইসলাম ভাই রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক শিক্ষা সম্পাদক ছিলেন। ভাইটির ওপর করা ফ্যাসিবাদী জুলুমের যুগাবসান ঘটল আজকে। জেলে থেকে পরীক্ষা, অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, মাস্টার্সেও ৪.০০ পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। এত ভালো ফলাফল। তাই জেলে ভরেও শান্তি হলো না। আটকে রাখা হয় ফলাফল। এক দিন-দুদিন নয়, ১২ বছর পর আজ ফলাফল পেলেন তিনি।”
রাকসু ভিপি আরো বলেন, “এভাবে ছাত্রশিবিরের কত ভাই যে শুধু একাডেমিক হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে গেছেন কিন্তু সার্টিফিকেট উঠাতে দেয়নি- এরকম ভাইয়ের সংখ্যা ভূরি ভূরি। ছাত্রশিবিরের ত্যাগ তিতীক্ষার শেকড় এই ক্যাম্পাসের অনেক গভীরে। আমাদের বিজয় তাদের স্যাক্রিফাইসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।”
রফিকুলের ওপর তৎকালীন প্রশাসন ও সংশিষ্ট শিক্ষকরা যে আচরণ করেছেন, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম বলেন, “এর মাধ্যমে তারা শুধু ছেলেটির রেজাল্টই নষ্ট করেনি, তার জীবনের ছন্দও নষ্ট হয়েছে। সেজন্য যে বিচার তিনি চান, আমার ধারণা- তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন বলেন, “তার ওপর সত্যিই জুলুম করা হয়েছে। তার রেজাল্টের জন্য একটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটির অধীনেই আজকের এই রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। যারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল, অলরেডি সেই পাঁচজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। চেয়ারম্যান পদ বাতিলসহ অ্যাকাডেমিক কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা হয়েছে।”
ঢাকা/ফাহিম/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম গঠন কর পর ক ষ র ওপর প রথম ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
‘বেগম খালেদা জিয়ার হার্ট ও চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে’
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবারো ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হার্ট ও চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে হাসপাতালের সামনে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের একথা জানান।
এমএফ সিদ্দিকী বলেন, “গত কয়েক মাস ধরেই উনি খুব ঘন ঘন আক্রান্ত হচ্ছিলেন। আজকে আমরা যে কারণে এখানে (এভারকেয়ার হাসপাতালে) ভর্তি করিয়েছি সেটা হচ্ছে, উনার কতগুলো সমস্যা একসঙ্গে দেখা দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, উনার চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৬
ভূমিকম্পে হুড়োহুড়িতে আহত ২৯ শ্রমিক এখনো হাসপাতালে
‘উনার হার্টের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। উনার হার্টে পারমানেন্ট পেসমেকার আছে এবং হার্টে উনার স্ট্যান্ডিং করা হয়েছিল, রিং পড়ানো হয়েছিল। তারপরেও উনার মাইট্রোস্টেনোসিস নামে একটা কন্ডিশন আছে, সেজন্য চেস্টে হওয়াতে উনার একসাথে হার্ট এবং ফুসফুস দুটোই এ্যাট এ টাইম আক্রান্ত হওয়াতে উনার খুব রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস হচ্ছিল। সেজন্য এখানে আমরা খুব দ্রুত ওনাকে নিয়ে এসেছি।”
বেগম খালেদা জিয়া ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন জানিয়ে এফএম সিদ্দিকী বলেন, “হাসপাতালে আনার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যে পরীক্ষাগুলো করা দরকার তা করেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে যে রিপোর্ট পেয়েছি, সে অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডের সবাই বসে উনাকে এন্টিবায়োটিক দিয়েছি। উনাকে যেভাবে প্রাথমিক এবং জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার দরকার ছিল সেটা দিয়েছি।”
“আশা করছি, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আরো কিছু রিপোর্ট আসবে। উনি আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। আমরা মনে করছি, নেক্সট ১২ ঘণ্টায় উনার পরবর্তী পরিস্থিতি কী হয় সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে উনি আমাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা এবং মনিটরিংয়ের মধ্যে আছেন। কেবিনেই তিনি আছেন।”
এর আগে, রাত ৮টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে আছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নেওয়ার পরপর কিছু টেস্ট করা হয়। এরপর অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকাদারের সভাপতিত্বে মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। এই বৈঠকে অধ্যাপক এফএস সিদ্দিকী, ডা. জাফর্ ইকবাল, ডা. জিয়াউল হক, ডা. মামুন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম এবং লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি ডা. জুবাইদা রহমান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জনহোপকিংস হসপিটালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশ নেন।
অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, “মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যাডামের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।”
অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “আমরা বলতে চাই, ম্যাডামের জন্য ডেফিনেটলি সুচিকিসার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করে নিবিড়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অত্যন্ত উৎকন্ঠিত কোনো বিষয় আমরা মনে করছি না।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করছি, উনার চিকিৎসাটা যদি এখন যেভাবে শুরু হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ তাহলে আগামী ১২ ঘণ্টার পর মেডিকেল বোর্ড আবার বসবেন। বসার পর পরবর্তী উনার স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কি ধরনের চিকিৎসার পরিবর্তন আনা যায়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা বোর্ড নেবেন।”
তিনি জানান, লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও উনার সহধর্মিনী জুবাইদা রহমান তাদের ‘আম্মু’র ব্যাপারে সর্বাক্ষনিক যোগাযোগ রাখছেন। ম্যাডামের ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিনী সৈয়দা শামিলা রহমান এখানেই আছেন, উনাদের আত্বীয়-স্বজনরা ম্যাডামের চিকিৎসার ব্যাপারে সবসময় সহযোগিতা ও খোঁজ-খবর রাখছেন।
বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন উল্লেখ করে জাহিদ জানান, ম্যাডাম আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
৭৯ বছর বয়েসী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে দেশে ফেরেন। সূত্র: বাসস।
ঢাকা/মাসুদ