এনা পরিবহনের মালিক এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা
Published: 26th, November 2025 GMT
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনা ট্রান্সপোর্টের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চাঁদাবাজির মাধ্যমে ১০৭ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ টাকা অর্থ উপার্জন করে তা বিভিন্ন স্তরে লেনদেনের মাধ্যমে ঘুরিরে–ফিরিয়ে সাদাটাকা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
আজ বুধবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল অপরাধ ইউনিট রমনা থানায় মামলাটি করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তাঁর পরিবারের ১৯৯টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। আর উত্তোলন হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭ কোটি টাকা। চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্জিত এসব অর্থ ‘স্ট্রাকচারিং’ বা ‘স্মার্ট লেয়ারিং’ কৌশল ব্যবহার করে নানা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সাদাটাকা দেখানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে মানি লন্ডারিং করা হয়েছে।
সিআইডি বলছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বিভিন্ন ব্যাংক, ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, বাংলাদেশ মালিক পরিবহন সমিতি এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া রেকর্ডপত্রের ওপর ভিত্তি করে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে সিআইডি। অনুসন্ধান চলাকালে আদালতের আদেশে ধানমন্ডিতে ২টি ফ্ল্যাট এবং রূপগঞ্জের ২টি প্লট জব্দ করা হয়; যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আদালতের আদেশে তাঁদের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়, যার মূল্য প্রায় ১১০ কোটি টাকা। গত ৩ জুলাই থেকে এই আদেশ কার্যকর করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আশির দশকের পরে পরিবহন সেক্টরে যাত্রা শুরু করেন। পার্টনারশিপে একটি পুরোনো বাস কেনার মাধ্যমে তাঁর ব্যবসার সূচনা হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি প্রায় ২০টি বাসের মালিক হয়ে ওঠেন। অল্প সময়েই তিনি পরিবহন মালিকদের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন। বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। প্রথমে বিএনপির রাজনীতি, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও লাভ করেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিচয় খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে বেপরোয়া করে তোলে উল্লেখ করে সিআইডি বলছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতন পর্যন্ত টানা ১৬ বছর তিনি ধারাবাহিকভাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নতুন বাস নামালেই তাঁকে চাঁদা দিতে হতো জানিয়ে সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এনায়েত উল্লাহ ও তাঁর সহযোগীরা সিন্ডিকেট গড়ে বিভিন্ন অজুহাতে বাসমালিকদের কাছ থেকে প্রকাশ্য চাঁদা আদায় করতেন। দৈনিক চাঁদার পাশাপাশি মাসিক চাঁদাও নেওয়া হতো এবং নতুন বাস কোনো রুটে নামাতে হলে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা দিতে হতো। নতুন বাস কেনার সময় মালিকদের সেই বাসের একটি ভাগও এনায়েতকে দিতে বাধ্য করা হতো, না হলে বাসটি সড়কে চলতে পারত না। এর ফলে অনেক কোম্পানি বিক্রির সময় মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে চাঁদা পরিশোধ করত।
আরও পড়ুনখন্দকার এনায়েত উল্লাহর ১৮২টি গাড়ি জব্দের আদেশ০৪ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর বহন ম ল ক ক পর বহন স আইড
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে বাউলদের মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে হামলা, আহত ২
মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার বিচার ও বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার দুপুরে শহরের আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে একদল যুবক এই হামলা চালান বলে অভিযোগ। হামলাকারীদের মারধরে দুজন বাউলশিল্পী আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুরে ‘সম্প্রীতির ঐক্য, ঠাকুরগাঁও’ ব্যানারে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে মানববন্ধন আহ্বান করেন বাউলশিল্পীরা। কিন্তু মানববন্ধন শুরুর আগে বেলা দেড়টার দিকে আদালত চত্বর এলাকায় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি শামসুল চিশতি ও ঠাকুরগাঁও পৌরসভার হঠাৎপাড়ার মোকলেস পাগলা নামে দুজন বাউলশিল্পীকে পেয়ে তৌহিদী জনতার ব্যানারে ৪০ থেকে ৫০ জনের একদল যুবক তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করেন।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারোয়ার আলম খান বলেন, বাউলশিল্পীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু মানববন্ধনের আগে কোর্ট চত্বর এলাকায় বাউলদের ওপর হামলা চালান একদল যুবক। বাউলশিল্পীদের লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বলেন, কর্মসূচি পালনের জন্য বাউলশিল্পীরা আদালত চত্বরে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ মিছিল নিয়ে এসে বাউলশিল্পীদের ওপর হামলা চালান। প্রত্যেক মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাউলশিল্পীদের মারপিটের ঘটনা দুঃখজনক।