ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও ভবনের কারিগরি নিরীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে গঠিত কারিগরি উপকমিটি ইতিমধ্যেই ছয়টি হল পরিদর্শন করেছে।

আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও ছয়টি হল পরিদর্শন করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শামসুন নাহার হল, ড.

কুদরাত-ই-খুদা হোস্টেল, শহীদ অ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেল, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী ছাত্রীনিবাস এবং কবি সুফিয়া কামাল হল পর্যবেক্ষণ করা হবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ সদস্যের উপস্থিতি সাপেক্ষে পরিদর্শনের সময়সূচির পরিবর্তন হতে পারে।

সাম্প্রতিক বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন আবাসিক হল ও ভবনের কারিগরি নিরীক্ষণ, মূল্যায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে সভাপতি করে কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেশন কমিটির অধীন চারটি উপকমিটিও গঠন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এসব উপকমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবাসিক হল–ভবনসমূহ পরিদর্শন, কারিগরি নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম সমাপ্ত করবে। পরিদর্শন শেষে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এ–সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকৌশল দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট হলে সংরক্ষিত থাকবে। কারিগরি মূল্যায়নে ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত হলে শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ, বন্ধ থাকবে ডাইনিং ও ক্যানটিন২৩ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হল পর

এছাড়াও পড়ুন:

থানায় বাদীকে মারধর করেছিলেন রংপুরের সেই উপপুলিশ কমিশনার শিবলী

রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগে থানায় মামলা করতে আসা বাদী মো. পলাশ হাসানকে মারধরের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি মারধরের সময় থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য মোছা. মৌসুমি আক্তারের কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা, পুলিশ পাঠিয়ে বাবা–ছেলেকে থানায় নিয়ে যাওয়া ও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার যে অভিযোগ ছিল, সেটারও সত্যতা পাওয়া গেছে।

তবে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে উপকমিশনারের কার্যালয়ে যাওয়া বাবা মো. মাহবুব আহমেদ ও ছেলে হাবিবুর রহমানকে গালাগালি, পুলিশ সদস্যকে লাঠি আনার নির্দেশ ও তাঁদের মারতে উদ্যত হওয়ার অভিযোগের আংশিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি।

গত ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের কোতোয়ালি থানায় ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগে সাবেক উপকমিশনার শিবলী কায়সারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একটি অভ্যন্তরীণ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ঘটনার পর থানা-পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগে ভুক্তভোগী ব্যক্তির একটি মামলা নিলেও আসামির তালিকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি।

শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে আসা বাদীকে থানায় পেটানোর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ কর্মকর্তা শিবলীর বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশনা দেয়। ২৫ জুলাই তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শিবলী কায়সার রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার থাকা অবস্থায় গত ১৩ মার্চ ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার পক্ষে তাঁর ব্যবস্থাপক মো. পলাশ হাসান কোতায়ালি থানায় চাঁবাজির বিষয়ে একটি এজাহার নিয়ে যান। এজাহারে শিবলী কায়সারের নাম রয়েছে শুনে থানায় গিয়ে বাদীকে মারধর করেন। পলাশকে মারধর করার এক পর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল মৌসুমি আক্তারের রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে বাবা মো. মাহবুব ও তাঁর ছেলে হাবিব চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে শিবলী কায়সারের কার্যালয়ে গেলে তাঁদের গালাগালি ও মারতে উদ্যত হন ও সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী অসদাচরণসহ ছয়টি অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিভাগীয় মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর শিবলী কায়সার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিএনপির রংপুর অঞ্চলের এক নেতাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ভুয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করে বিভিন্নজনকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একাধিক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর আগে পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া ও একজন পুলিশ সুপারকে মারধর করার অভিযোগে শিবলী কায়সারকে দুইবার লঘুদণ্ড দিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর।

রংপুর-৩ সদর আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু প্রথম আলোকে বলেন, শিবলী কায়সার বিভাগীয় মামলা থেকে বাঁচতে তাঁর কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। রাজি না হওয়ায় তিনি ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করে বিভিন্নজনকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, তাঁরা এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন দেননি। তিনি বলেন, ‘আমি নাকি ফ্যাসিস্ট ওবায়দুল কাদেরকে বাসায় রেখেছিলাম। তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক লোন পরিশোধ করেছি। এটা কত বড় মিথ্যা তথ্য সেটা ব্যাংকে খোঁজ নিলেই পাওয়া যাবে। আমি জমি বিক্রি করে ২০২২ সালে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেছি।’

বিভাগীয় মামলা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবলী কায়সার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে কী এসেছে, সেটা তাঁর জানা নেই। এটা কারও জানার কথা নয়। এ বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই। গোয়েন্দা প্রতিবদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ওবায়দুল কাদের ও পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারকে পাচারে সামসুজ্জামান সামু মর্মে দুটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন আইজিপিকে দিয়েছিলাম। প্রত্যেক পুলিশ সুপারের গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।’

আরও পড়ুনরংপুরে উপপুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ, থানায় বাদীকে পিটুনি১৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • থানায় বাদীকে মারধর করেছিলেন রংপুরের সেই উপপুলিশ কমিশনার শিবলী