ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় এক নারীর (৪৫) মরদেহ উদ্ধারের পর এ ঘটনায় করা মামলায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল। তারা জানিয়েছে, ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে গ্রেপ্তার তিনজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক জহিরুল আলম, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তার ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালতের বিচারক আশরাফুল ইসলাম তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। বুধবার রাত পৌনে আটটায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পিবিআই।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার করিয়াগ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম (৪৩), হবিগঞ্জের মো.

হোসেন ওরফে শফিক (৪০) ও মো. রুমান মিয়া (২৪)। শহিদুল, হোসেন ও রুমান আখাউড়ায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। শহিদুল কাঁচাবাজারের দারোয়ান।

নিহত নারী স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। নিহত নারীর মেয়ে গতকাল মঙ্গলবার আখাউড়া থানায় একটি মামলা করেন। এদিন রাতেই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসামিদের জবানবন্দির বরাতে পিবিআই জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আখাউড়া পৌরসভা কার্যালয় এলাকায় ওই নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর লাশ উদ্ধার করে থানা–পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে অজ্ঞাতনামা একটি নম্বর থেকে ফোন করে ওই নারীকে ডেকে নিয়ে যান আসামিরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে সবজির আড়ত থেকে জানানো হয়, আখাউড়া পৌরসভা কার্যালয়ের পুরোনো টিনের চালা দেওয়া ভবনের পাশে এক নারীর লাশ পাওয়া গেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি শনাক্ত করেন মেয়ে। লাশের গলায় কালো দাগ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল। লাশের পাশে পুরুষের একজোড়া জুতা পড়ে ছিল।

পুলিশ জানায়, ওই নারীর মেয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। দ্রুত মামলাটি তদন্ত শুরু করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিবিআই। তারা ঘটনাস্থল–সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে। ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আসামি শহিদুল ফোন করার ১৪ মিনিট পর সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ১৮ মিনিটে ওই নারী ঘটনাস্থলের দিকে যান। এর পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, হোসেন ও রুমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শচীন চাকমা জানান, ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ওই নারীকে ধর্ষণ করেন শহিদুল। এরপর তাঁর সহযোগী হোসেন ও রুমান ধর্ষণ করতে চাইলে ওই নারী বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পা বেঁধে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে আসামিরা তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। হোসেন গলা চেপে ধরেন, শহিদুল দুই হাত এবং রুমান দুই পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে ওই নারীর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে তাঁরা পালিয়ে যান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় গ র প ত র কর র দ ব গত র ত ত ন আস ম ওই ন র ক আস ম র প ব আই

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার দেওয়া নথিকে অনুসরণ করে যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা তৈরি করেছেন ট্রাম্প

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা মস্কোর দেওয়া নথিপত্রের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। গত অক্টোবরে ওই নথিপত্রগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছিলেন রুশ কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।

গত অক্টোবরে ওয়াশিংটনের হাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া ওই নথিগুলোয় যুদ্ধ বন্ধে মস্কোর বিভিন্ন শর্তের কথা উল্লেখ ছিল বলে জানিয়েছে সূত্র। যেমন একটি শর্ত হলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া। এর ঠিক আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প।

এ বিষয়ে জানতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ওয়াশিংটনে রুশ ও ইউক্রেন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রয়টার্স। তবে মন্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও এ পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এবং আর্মি সেক্রেটারি ড্যান ড্রিসকল ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে দেখা করবেন।

তবে কী ভেবে রুশ নথির ওপর ভরসা করে ট্রাম্পের প্রশাসন নিজেদের শান্তি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ দেশটির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা পরিকল্পনায় থাকা রাশিয়ার শর্তগুলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন, ইউক্রেনীয়রা হয়তো সব শর্ত মানবে না।

যুক্ত ছিলেন ট্রাম্পের জামাতাও

সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়া নথিগুলো জমা দেওয়ার পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে ফোন দিয়েছিলেন মার্কো রুবিও। সেখানে নথিপত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তাঁরা। চলতি সপ্তাহে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক নথিপত্র পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছিলেন মার্কো রুবিও।

আরেকটি বিষয় হলো রুশ নথি থেকে পুরো ২৮ দফা পরিকল্পনা বা এর কিছু অংশ তৈরির সময় ট্রাম্পের জামাতা জেরাড কুশনার, ট্রাম্পের দূত উইটকফ ও রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা কিরিল দমিত্রিয়েভ আলোচনা করছিলেন বলে জানিয়েছে সূত্র। এই আলোচনার বিষয়ে অবগত আছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হোয়াইট হাউসের হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তাও।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় রুশ প্রভাবের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় গত মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন থেকে। তাতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও পুতিনের আলাপ নিয়ে ক্রেমলিনের কর্মকর্তা ইউরি উশাকভকে ফোন দিয়েছিলেন উইটকফ। ফোনকলের রেকর্ড অনুযায়ী, তখন উশাকভ ও উইটকফ সম্ভাব্য একটি ২০ দফা পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরে দমিত্রিয়েভের সঙ্গে উইটকফ ও জেরাড কুশনারের আলোচনায় সময় এই পরিকল্পনা আরও বিস্তৃত করা হয়।

ক্ষোভের মুখে পরিকল্পনা সংশোধন

২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার মতো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ইউরোপে ইউক্রেনের মিত্রদেশগুলোও। এ নিয়ে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। গত রোববার জেনেভায় শুরু হয় ওয়াশিংটন-কিয়েভ আলোচনা। এবিসি নিউজের খবর অনুযায়ী, ওই আলোচনার পর ২৮ দফা পরিকল্পনা থেকে ৯টি দফা বাদ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি—দুই দলের সিনেটরদের একটি দল জানিয়েছিল, ২৮ দফা পরিকল্পনা কোনো মার্কিন প্রস্তাব নয়, বরং রাশিয়ার ‘ইচ্ছাপূরণের তালিকা’ বলে তাদের কাছে উল্লেখ করেছিলেন রুবিও। যদিও হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে যে রুবিও এভাবে ওই কথা বলেননি।

পরে গতকাল মঙ্গলবার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, সবশেষ আলাপ-আলোচনার পর সংশোধিত যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাকে শান্তিচুক্তির একটি কাঠামো হিসেবে সমর্থন করছেন তাঁরা। তবে এই চুক্তির সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়—রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ের দফাটি বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বোঝাপড়া করতে চান জেলেনস্কি।

‘পরিকল্পনার পর্যালোচনা প্রয়োজন’

জেনেভায় আলোচনার পর ট্রাম্পের পরিকল্পনার বর্তমান যে রূপ দাঁড়িয়েছে, তা ‘ব্যাপক হারে পর্যালোচনার প্রয়োজন বলে আজ বুধবার উল্লেখ করেছেন ক্রেমলিনের কর্মকর্তা উশাকভ। সংশোধিত এই পরিকল্পনা নিয়ে চলতি সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।

উশাকভের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আবুধাবিতে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের মধ্যে ‘খুবই সংবেদনশীল কিছু বিষয়’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল বন্দিবিনিময় ইস্যু। আবুধাবিতে রুশ কর্মকর্তারা মার্কিন আর্মি সেক্রেটারি ড্রিসকলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

পরে রাশিয়ার টেলিভিশন সাংবাদিক পাভেল জারুবিনকে উশাকভ বলেন, সংশোধিত পরিকল্পনাটি রাশিয়ার কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। এই পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা ও আলোচনা প্রয়োজন। পরিকল্পনার কিছু বিষয় ইতিবাচকভাবে নেওয়া হয়েছে। তবে অনেকগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা হতে হবে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা জানাল ইউক্রেন, ক্রেমলিন কী বলছে১২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ