আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে দুর্নীতিই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ। দেশটিতে ‘স্টেট ক্যাপচার’ অর্থাৎ রাষ্ট্রের নীতি এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে অল্পসংখ্যক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক এলিটদের স্বার্থ পূরণ হয়।

চলতি নভেম্বরে চূড়ান্ত হওয়া ‘দ্য গভর্ন্যান্স অ্যান্ড করাপশন ডায়াগনস্টিক অ্যাসেসমেন্ট (জিসিডিএ)’–এ দেখা যায়, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মনীতি ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারে না, জনসম্পদ রক্ষা করতেও ব্যর্থ হয়।

১৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে ‘স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসা ও ক্ষয়কারী’ দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করছে, জনগণের আস্থা কমাচ্ছে ও আর্থিক স্থিতি নষ্ট করছে।
আইএমএফের এ প্রতিবেদন পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে তৈরি। এতে সতর্ক করা হয়, যদি ‘এলিট সুবিধা কাঠামো’ ভেঙে না দেওয়া যায়, তবে দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলতেই থাকবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি সরকারের সব স্তরেই আছে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় তখন, যখন ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতগুলো নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ করে; বিশেষ করে যেসব খাত রাষ্ট্র বা সরকারি মালিকানাধীন কিংবা এর সঙ্গে যুক্ত থাকে।

১৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে ‘স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসা ও ক্ষয়কারী’ দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করছে, জনগণের আস্থা কমাচ্ছে ও আর্থিক স্থিতি নষ্ট করছে।

আইএমএফ বলছে, সুশাসন ও জবাবদিহি বাড়ানো গেলে পাকিস্তান বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুফল পেতে পারে। এ রকম সংস্কারে দেশটির জিডিপি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়তে পারে। ২০২৪ সালে তাদের জিডিপি ছিল ৩৪০ বিলিয়ন (৩৪ হাজার কোটি) ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন উদীয়মান অর্থনীতিতে সংস্কারের অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, পাঁচ বছরে সুশাসনসংক্রান্ত সংস্কার বাস্তবায়ন করলে পাকিস্তানের জিডিপি ৫ থেকে ৬.

৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।’

পাকিস্তান সরকারকে অর্থনৈতিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন বলেন, দুর্নীতির মামলায় জবাবদিহিহীনতা দেশটির উন্নয়ন সম্ভাবনাকে ধরে ধরে খাচ্ছে।

দুর্নীতির মামলায় জবাবদিহিহীনতা দেশটির উন্নয়ন সম্ভাবনা ধরে ধরে খাচ্ছে। আইনকানুন ও জবাবদিহির নীতি ঠিকমতো প্রয়োগ না করলে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো খুব সহজে নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। আর অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এ সমস্যাকে অবশ্যই সবার আগে সমাধান করতে হবে।স্টেফান ডারকন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক

অধ্যাপক ডারকন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আইনকানুন ও জবাবদিহির নীতি ঠিকমতো প্রয়োগ না করলে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো খুব সহজে নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। আর অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এ সমস্যাকে অবশ্যই সবার আগে সমাধান করতে হবে।’

নিচে আইএমএফের প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—দুর্বলতাগুলো কোথায়, কী নীতিগত সুপারিশ করা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।

আইএমএফ প্রতিবেদন কী বলছে

১৯৫৮ সাল থেকে পাকিস্তান মোট ২৫ বার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের সামরিক কিংবা বেসামরিক—প্রায় সব সরকার আইএমএফের কাছে গেছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে তার বৈদেশিক লেনদেনের সমস্যাকে প্রতিফলিত করছে।  

২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিট ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠীদের দেওয়া সুবিধা দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ।

সর্বশেষ বর্তমান সহায়তা কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সময় শুরু হয়েছে। জিসিডিএ প্রকাশিত হয়েছে এমন সময়, যখন আগামী মাসে আইএমএফ নির্বাহী বোর্ড ১.২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ডলার ঋণ ছাড়ের অনুমোদন দিতে পারে। এটি ৩৭ মাসের ৭ বিলিয়ন (৭০০ কোটি) ডলারের প্যাকেজের অংশ।

২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য ঋণখেলাপি হওয়া থেকে বাঁচে। এর আগে আইএমএফ ৯ মাসের পুরোনো চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় ৩৭ মাসের চলতি কর্মসূচি।

আইএমএফ বলছে, পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী শাসন–সূচকে নিয়মিতই নিচের দিকে থাকে। ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের স্কোর একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে; যা বিশ্বের মধ্যে ও দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপদের কাতারে।

আইএমএফের প্রতিবেদনের মূল বিষয় হলো ‘স্টেট ক্যাপচার’ ধারণা। সংস্থাটির মতে, এর অর্থ হলো, দুর্নীতি এক রীতি হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রকৃতপক্ষে সরকার পরিচালনার প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্র প্রায়ই সাধারণ জনগণের ক্ষতির বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীকে সমৃদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।

দুর্নীতি ও সুশাসন একে-অপরের সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি সুশাসন দুর্বল করে, দুর্বল সুশাসন আবার দুর্নীতি বাড়ায়।সাজিদ আমিন জাভেদ, ইসলামাবাদের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ  

আইএমএফ হিসাব কষে দেখেছে, এ ‘এলিট সুবিধা’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর জন্য দেওয়া ভর্তুকি, কর ছাড় ও লাভজনক সরকারি চুক্তি—প্রতিবছর অর্থনীতির লাখো কোটি ডলার খেয়ে ফেলে। সঙ্গে কর ফাঁকি আর নিয়মনীতি নিজেদের মতো বদলে নেওয়ায় প্রকৃত বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

এসব নতুন তথ্য নয়। ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিট ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠীদের দেওয়া সুবিধা দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ।

লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক আলী হাসনাইন বলেন, ‘আইএমএফের বর্ণনা সঠিক হলেও এটা নতুন কিছু নয়। কীভাবে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত গোষ্ঠী ভূমি, ঋণ, শুল্কছাড় ও নিয়মকানুন থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়, তা ২০২১ সালের ইউএনডিপির প্রতিবেদনসহ দেশীয় অনেক গবেষণায় দেখানো হয়েছে।’

আলী হাসনাইন আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আইএমএফ যা বলেছে, বিশ্বব্যাংক এবং পাকিস্তানের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো বহু আগেই তা বলেছে। সেটি হলো, ক্ষমতাবান গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা রক্ষায় নিয়মকানুন বানায়।’

ফ্রান্সের প্যারিসে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (ডানে)। ২২ জুন ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষমত ব ন গ ষ ঠ আইএমএফ র র জন ত ক ব শ বব স শ সন র অর থ ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অভিজাত শ্রেণি কীভাবে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে খেয়ে ফেলছে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে দুর্নীতিই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ। দেশটিতে ‘স্টেট ক্যাপচার’ অর্থাৎ রাষ্ট্রের নীতি এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে অল্পসংখ্যক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক এলিটদের স্বার্থ পূরণ হয়।

চলতি নভেম্বরে চূড়ান্ত হওয়া ‘দ্য গভর্ন্যান্স অ্যান্ড করাপশন ডায়াগনস্টিক অ্যাসেসমেন্ট (জিসিডিএ)’–এ দেখা যায়, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মনীতি ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারে না, জনসম্পদ রক্ষা করতেও ব্যর্থ হয়।

১৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে ‘স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসা ও ক্ষয়কারী’ দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করছে, জনগণের আস্থা কমাচ্ছে ও আর্থিক স্থিতি নষ্ট করছে।
আইএমএফের এ প্রতিবেদন পাকিস্তান সরকারের অনুরোধে তৈরি। এতে সতর্ক করা হয়, যদি ‘এলিট সুবিধা কাঠামো’ ভেঙে না দেওয়া যায়, তবে দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলতেই থাকবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি সরকারের সব স্তরেই আছে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় তখন, যখন ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতগুলো নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ করে; বিশেষ করে যেসব খাত রাষ্ট্র বা সরকারি মালিকানাধীন কিংবা এর সঙ্গে যুক্ত থাকে।

১৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানে ‘স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসা ও ক্ষয়কারী’ দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করছে, জনগণের আস্থা কমাচ্ছে ও আর্থিক স্থিতি নষ্ট করছে।

আইএমএফ বলছে, সুশাসন ও জবাবদিহি বাড়ানো গেলে পাকিস্তান বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুফল পেতে পারে। এ রকম সংস্কারে দেশটির জিডিপি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়তে পারে। ২০২৪ সালে তাদের জিডিপি ছিল ৩৪০ বিলিয়ন (৩৪ হাজার কোটি) ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন উদীয়মান অর্থনীতিতে সংস্কারের অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, পাঁচ বছরে সুশাসনসংক্রান্ত সংস্কার বাস্তবায়ন করলে পাকিস্তানের জিডিপি ৫ থেকে ৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।’

পাকিস্তান সরকারকে অর্থনৈতিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক স্টেফান ডারকন বলেন, দুর্নীতির মামলায় জবাবদিহিহীনতা দেশটির উন্নয়ন সম্ভাবনাকে ধরে ধরে খাচ্ছে।

দুর্নীতির মামলায় জবাবদিহিহীনতা দেশটির উন্নয়ন সম্ভাবনা ধরে ধরে খাচ্ছে। আইনকানুন ও জবাবদিহির নীতি ঠিকমতো প্রয়োগ না করলে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো খুব সহজে নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। আর অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এ সমস্যাকে অবশ্যই সবার আগে সমাধান করতে হবে।স্টেফান ডারকন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক নীতির অধ্যাপক

অধ্যাপক ডারকন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আইনকানুন ও জবাবদিহির নীতি ঠিকমতো প্রয়োগ না করলে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলো খুব সহজে নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। আর অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে এ সমস্যাকে অবশ্যই সবার আগে সমাধান করতে হবে।’

নিচে আইএমএফের প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—দুর্বলতাগুলো কোথায়, কী নীতিগত সুপারিশ করা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।

আইএমএফ প্রতিবেদন কী বলছে

১৯৫৮ সাল থেকে পাকিস্তান মোট ২৫ বার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের সামরিক কিংবা বেসামরিক—প্রায় সব সরকার আইএমএফের কাছে গেছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে তার বৈদেশিক লেনদেনের সমস্যাকে প্রতিফলিত করছে।  

২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিট ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠীদের দেওয়া সুবিধা দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ।

সর্বশেষ বর্তমান সহায়তা কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সময় শুরু হয়েছে। জিসিডিএ প্রকাশিত হয়েছে এমন সময়, যখন আগামী মাসে আইএমএফ নির্বাহী বোর্ড ১.২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ডলার ঋণ ছাড়ের অনুমোদন দিতে পারে। এটি ৩৭ মাসের ৭ বিলিয়ন (৭০০ কোটি) ডলারের প্যাকেজের অংশ।

২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য ঋণখেলাপি হওয়া থেকে বাঁচে। এর আগে আইএমএফ ৯ মাসের পুরোনো চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় ৩৭ মাসের চলতি কর্মসূচি।

আইএমএফ বলছে, পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী শাসন–সূচকে নিয়মিতই নিচের দিকে থাকে। ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের স্কোর একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে; যা বিশ্বের মধ্যে ও দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপদের কাতারে।

আইএমএফের প্রতিবেদনের মূল বিষয় হলো ‘স্টেট ক্যাপচার’ ধারণা। সংস্থাটির মতে, এর অর্থ হলো, দুর্নীতি এক রীতি হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রকৃতপক্ষে সরকার পরিচালনার প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্র প্রায়ই সাধারণ জনগণের ক্ষতির বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীকে সমৃদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।

দুর্নীতি ও সুশাসন একে-অপরের সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি সুশাসন দুর্বল করে, দুর্বল সুশাসন আবার দুর্নীতি বাড়ায়।সাজিদ আমিন জাভেদ, ইসলামাবাদের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ  

আইএমএফ হিসাব কষে দেখেছে, এ ‘এলিট সুবিধা’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর জন্য দেওয়া ভর্তুকি, কর ছাড় ও লাভজনক সরকারি চুক্তি—প্রতিবছর অর্থনীতির লাখো কোটি ডলার খেয়ে ফেলে। সঙ্গে কর ফাঁকি আর নিয়মনীতি নিজেদের মতো বদলে নেওয়ায় প্রকৃত বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

এসব নতুন তথ্য নয়। ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিট ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠীদের দেওয়া সুবিধা দেশের জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ।

লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক আলী হাসনাইন বলেন, ‘আইএমএফের বর্ণনা সঠিক হলেও এটা নতুন কিছু নয়। কীভাবে রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত গোষ্ঠী ভূমি, ঋণ, শুল্কছাড় ও নিয়মকানুন থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়, তা ২০২১ সালের ইউএনডিপির প্রতিবেদনসহ দেশীয় অনেক গবেষণায় দেখানো হয়েছে।’

আলী হাসনাইন আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আইএমএফ যা বলেছে, বিশ্বব্যাংক এবং পাকিস্তানের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো বহু আগেই তা বলেছে। সেটি হলো, ক্ষমতাবান গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা রক্ষায় নিয়মকানুন বানায়।’

ফ্রান্সের প্যারিসে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (ডানে)। ২২ জুন ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ