এসব সোনা শুধু শেখ হাসিনার নয়, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও: দুদক
Published: 26th, November 2025 GMT
অগ্রণী ব্যাংকের দুটি লকার খুলে যে ৮৩২ ভরি (৯ হাজার ৭০৭ দশমিক ১৬ গ্রাম) সোনা পাওয়া গেছে, সেগুলো ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একার নয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বোন শেখ রেহানা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদসহ পরিবারের সদস্যদের নামে ওই সব সোনা জমা রাখা হয়েছিল নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে। এসব সোনার মধ্যে স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি সোনার নৌকা ও হরিণ রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা এসব সোনা বৈধ না অবৈধ, সেটা যাচাই-বাছাই করা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মতিঝিলে অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা লকারে স্বর্ণালংকারের পাশাপাশি সোনার নৌকা ও হরিণ পাওয়া গেছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান বাতিল চায় বাম জোট
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) অভিযুক্ত হলেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণার বিধানকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে এ ধরনের ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা পদত্যাগের কমপক্ষে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারবেন না, এমন বিধান যুক্ত করারও দাবি জানিয়েছে তারা।
আজ বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর দেওয়া এক স্মারকলিপিতে ১৪ দফা দাবি জানিয়েছে বাম জোট। এর আগে ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং সবার জন্য নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবিতে’ ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন জোটের নেতা–কর্মীরা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জোটের পক্ষ থেকে এ কথাগুলো জানানো হয়েছে।
বাম জোটের ১৪ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা; জামানত ও নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধিসহ আরপিওর অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল; জামানত পাঁচ হাজার টাকা, নির্বাচনী ব্যয় পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ; কালোটাকা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িক ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা বিধান; পোস্টার–লিফলেট, প্রার্থীদের পরিচিতি সভাসহ নির্বাচনী ব্যয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বহন করা; সব আসনেই ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা; নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের জন্য অপেক্ষা না করে সুয়োমোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) হিসেবে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে কমিশনের দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ভোটারদের প্রতিনিধি প্রত্যাহারের বিধান যুক্ত করা।
বাম জোটের দাবির মধ্যে আরও আছে নির্বাচনী এলাকার শিক্ষক–কর্মকর্তাদের একই এলাকায় পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে অন্য এলাকায় নিয়োগ দেওয়া; জেলা প্রশাসক–উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া; তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচনে ভোট দেওয়া, ফল ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র, তথ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনের কাজে নিয়োজিতদের কমিশনের অধীনে রাখা এবং যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেওয়া ও উসকানি সৃষ্টিকারীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।
স্মারকলিপি দেওয়ার আগে আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনের কাছে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে যান বাম জোটের নেতা–কর্মীরা। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে নির্বাচন কমিশন ভবনের ফটকে বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশ হয়।
এ সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা শাহজাহান চৌধুরীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে বাম জোটের নেতারা বলেন, ‘শাহজাহান চৌধুরী জামায়াতের সভায় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশকে তাদের কথায় চলতে হবে বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরও কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, তা দেখে আমরা বিস্মিত।’
জোটের নেতারা বলেন, কালোটাকা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করা হলেও নির্বাচন কমিশন সেগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না; বরং নির্বাচনে জামানতের টাকা বৃদ্ধি করে এবং নির্বাচনের ব্যয়সীমা বাড়িয়ে সৎ, সাধারণ মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনে কালোটাকার মালিক ও লুটেরা ধনীদের দৌরাত্ম্যই বেড়ে যাবে।
বাম জোটের নেতারা আরও বলেন, সব আসনে ‘না’ ভোটের বিধান না রেখে শুধু একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোট থাকবে, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক বিধান যুক্ত করে চোর বা ডাকাতের মধ্যে মন্দের ভালো বেছে নিতে বলা হচ্ছে। এতে ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আইসিটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) মামলায় কেউ অভিযুক্ত হলেই নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না, এটা কোনো সভ্য দেশের নিয়ম হতে পারে না।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ও সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী বক্তব্য দেন। সমাবেশের পর বাম জোটের প্রতিনিধিদল সিইসিকে লেখা স্মারকলিপি কমিশনের অতিরিক্ত সচিবের কাছে হস্তান্তর করে।