‘আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো’ এবারের বিপিএল!
Published: 26th, November 2025 GMT
ততক্ষণে প্রশ্নবানে জর্জরিত বিসিবির পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার আহমেদ মিঠু। সেই স্রোতেই একটি প্রশ্ন এলো, ‘‘এবারের বিপিএলের হট সিটে আপনি। কতটা স্বস্তি নিয়ে শুরু করতে পারছেন। মনে হচ্ছে না, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে দিয়েছেন?’’
উত্তরটা এলো প্রত্যাশিত, ‘‘অবশ্যই। এটা কঠিন কাজ। আমরা যদি সাত-আট মাস পেতাম তাহলে সুন্দর গুছিয়ে নিতে পারতাম। মিথ্যা বলে তো লাভ নেই, আমরা আগুন নিয়েই খেলা করছি। এখন পরিষ্কার বিপিএল যদি না করতে পারি তাহলে মনে করবেন বিপিএল ফিনিশড।’’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আয়োজন হবে আর বিতর্ক থাকবে না এটা হতেই পারে না! বারবার কথা দিয়েও কথা রাখতে না পারার স্পষ্ট উদাহরণ বিপিএল। যেখানে আয়োজকদের শুরু করে, ফ্রাঞ্চাইজিরাও একই সুতোয় গাঁথা। আগামী বিপিএলও বিতর্কের বাইরে যাচ্ছে না তা মাঠে গড়ানোর আগেই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।
এত দিন পাঁচ দল নিয়ে বিপিএল আয়োজনের কথা বলা হচ্ছিল। হুট করেই একটি দল যোগ করা হয়েছে। ইফতেখার আহমেদের ভাষ্য, ‘‘দুটি কারণে নেওয়া হয়েছে বাড়তি একটি দল। এক, স্থানীয় খেলোয়াড়দের কথা চিন্তা করে। নতুন একটি দল আসলে অন্তত ১৫টি স্থানীয় ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পাবে। দ্বিতীয়, ফিক্সচার তৈরিতে সহজ হয়। নয়তো দেখা যায়, প্রতিটি দিনেই খেলায় ব্যস্ত থাকতে হয়। খেলোয়াড়দের বিশ্রামের সময় থাকে না।’’
চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের সঙ্গে ষষ্ঠ দল হিসেবে যুক্ত হয়েছে নোয়াখালী এক্সপ্রেস। দলটি কিনেছে দেশ ট্রাভেলস। নোয়াখালী দল এর আগেও তারা কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু বিসিবি তাদের কাগজপত্রে সন্তুষ্ট হতে না পেরে বাতিল করে দেয় তাদের ফ্রাঞ্চাইজির আবেদন। কিন্তু হুট করেই আবার তাদেরকে নিয়ে বিপিএল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিসিবি।
বিতর্ক! বিপিএল! একেবারেই সমার্থক শব্দ। দুইবার নিলামের তারিখ চূড়ান্ত করেছিল বিসিবি। কিন্তু নিলামের আয়োজন এবং ফ্রাঞ্চাইজিদের পেশাদারিত্বের ঘাটতি থাকায় বিসিবি বাধ্য হয়েছে ৩০ নভেম্বর নিলাম আয়োজন করতে। যদি ওই তারিখে নিলাম অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ১৯ ডিসেম্বর সিলেটে পর্দা উঠবে বিপিএলের। শেষ হবে ১৬ জানুয়ারি। এর আগে ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সিলেট ও ঢাকা বাদে খেলা হবে চট্টগ্রামে।
কেন বারবার বিপিএলের নিলাম পেছাল? উত্তরটা ইফতেখার আহমেদের মুখ থেকেই শুনুন, ‘‘আমরা ১০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি চেয়েছিলাম পাঁচ ফ্রাঞ্চাইজির থেকে। কিন্তু পুরোপুরি পাইনি। ২ কোটি ফ্রাঞ্চাইজি ফি সবাই দিয়েছে। কিন্তু ১০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে পারছে না অনেকেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি সব সময়কার মতো না। কেউ চেক দিচ্ছে। কেউ পে অর্ডার। কেউ অন্য অ্যাসেট। আবার নতুন করে একটা দলও যুক্ত হয়েছে। তাই সবাইকেই সময় দিতে হবে।’’
জটিলতার শেষ নেই। নিলামের বাকি মাত্র চারদিন। অথচ বিসিবি ব্যাংক গ্যারান্টি পায়নি অন্তত তিনটি প্রতিষ্ঠানের। যদিও তিনটি নাকি দুইটি এটা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন ইফতেখার আহমেদও। দুইবার দুই রকম সংখ্যা বলাতে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। তবে সেই জটিলতা উৎরানোর উপায় জানা না থাকলেও নিলামের আগে কিংবা নিলামের পর যদি ফ্রাঞ্চাইজিরা ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে না পারে তাহলে বিসিবি টিম চালাবে সেই সিদ্ধান্তও হয়েছে।
‘‘কেউ ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে না পারলে বিসিবি টিম চালাবে। আমাদের কাছে আর্থিক স্বচ্ছতা সবার আগে। খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্টের পারিশ্রমিক যদি দিতে না পারে তাহলে কিভাবে হবে? যদি তারা দিতে না পারে তাহলে বিসিবির লোক ঠিক করাই আছে। তারা গিয়ে কেবল দায়িত্ব বুঝে নেবে।’’
এদিকে আগের বছরের বিপিএলের কয়েকটি ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছিল সন্দেহ। ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে উঠেছিল ফিক্সিংয়ের অভিযোগ। বিষয়টির তদন্ত করতে বিসিবি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল।
বিসিবি জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ৯০০ পাতার সেই প্রতিবেদনে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণও তুলে ধরেছে কমিটি। তবে এখনো তাদের নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় অভিযুক্তরা এবারের বিপিএলে খেলতে পারবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইফতেখার আহমেদ।
বিদেশি ক্রিকেটার ৫০০ জন বিপিএলে নিজেদের নাম রেজিষ্ট্রার করেছিল। তার মধ্যে ২৫০ জনকে চূড়ান্ত করেছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান আইএমজি এবার কাজ করছে না। আগামী আসর থেকে তারা কাজ শুরু করবেন।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইফত খ র আহম দ ফ র ঞ চ ইজ র র র ব প এল ব প এল র
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
ঢাকার সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে মেসে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই বিভাগের আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। আজ বুধবার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্তু দেওয়ান, তরিকুল ইসলাম; ২৮তম ব্যাচের মেহেদী হাসান, আসিফ রহমান (লাবিব); ৩২তম ব্যাচের আসাদুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, নাঈম ও মেহেদী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসচিব কনক চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই আইন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে একটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে আটজন শিক্ষার্থীর নাম এসেছে, তাঁদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডির তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। উভয় কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে সিন্ডিকেটে উত্থাপনের মাধ্যমে যাঁদের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আট শিক্ষার্থীর নামে পৃথক সাময়িক বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শের আলীকে (৩৩তম ব্যাচ, প্রথম সেমিস্টার) র্যাগিং ও নৃশংস নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে র্যাগিংয়ে আপনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থী। উক্ত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনার স্বার্থে আপনাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। এই আদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
গত সোমবার দিবাগত রাতে সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকার একটি মেসে ভুক্তভোগী শের আলীকে মেসে থেকে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সাময়িক বহিষ্কৃত আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। আহত শের আলী রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি আশুলিয়ার একটি মেসে থাকেন।
এ ঘটনায় আজ বুধবার সকালে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভে যোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা। দুপুরের দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীর সহপাঠীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকেলের দিকে অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ানের পক্ষেও ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা অন্তুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ করেন। পরে বিকেল সোয়া চারটার দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুনমধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, প্রতিবাদে সহপাঠীদের অবস্থান২৫ নভেম্বর ২০২৫