দেশের সব ধরনের আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত মোট গ্রাহকের ৭৫ শতাংশের বেশি ডিজিটাল সেবা পান না। উল্টোভাবে বলা হলে, একটি মাত্র ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করেন, এমন গ্রাহক ২৪ শতাংশ বেশি। এমন সব সেবার আওতায় থাকা মোট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণার এক জরিপে এ তথ্যগুলো উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়, আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত মোট গ্রাহকের হিসাবের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকগুলোর শাখার আমানতকারী, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) এজেন্ট ও গ্রাহক, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবার এজেন্ট ও গ্রাহক, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী এবং অ্যাপ ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংকের আমানতকারী। এমএলএস গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। অন্যরা অন্যান্য সেবার গ্রাহক। এই হিসাবে এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের গ্রাহকদের রাখা হয়নি।

আজ বুধবার বিআইবিএম আয়োজিত ব্যাংকের আর্থিক সেবা খাতে ডিজিটাল রূপান্তর ও পণ্য ব্যবহার নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। আলোচনায় ‘ব্যাংকের আর্থিক সেবা খাতে রিটেইল ব্যাংকিংয়ে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রভাব ও ব্যাংকিং পণ্য উদ্ভাবন’ নিয়ে একটি গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএমের চার শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা মিলে মোট ৩২টি ব্যাংক ও ৩২০ জন রিটেইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারী গ্রাহককে প্রশ্ন–উত্তরের মাধ্যমে গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন।

অনুষ্ঠানে গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম ও সহযোগী অধ্যাপক শামসুন নাহার মমতাজ। অনুষ্ঠানে অনলাইন মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের ‘এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর’ ফারুক এম আহমেদ ও সুপারনিউমারারি অধ্যাপক আলী হোসেন প্রধানিয়া। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রয়।

আলোচনা সভায় গবেষণার নানা গ্রাহক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল সেবা নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে সব ধরনের আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত ডেলিভারি চ্যানেলের সংখ্যা ৬ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখে। আর চলতি বছরে এসব ডেলিভারি চ্যানেলের ৮৮ শতাংশ দখল রয়েছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ব্যাংক খাতের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন–উত্তরের ভিত্তিতে তৈরি জরিপে ডিজিটাল পণ্য ও অবকাঠামো সফলতার সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এটিএম সেবা। আর ব্যাংকগুলো তাদের সেবার ডিজিটাল রূপান্তরে মোট বার্ষিক বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি অর্থ খরচ করে। আর দেশের ৭১ শতাংশের বেশি গ্রাহক স্মার্টফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বিআইবিএমের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, গত ২০ থেকে ২৫ বছরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ডিজিটাল রূপান্তরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে বিনিয়োগ হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ডিজিটাল চ্যানেল তৈরির জন্য খরচ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল রূপান্তরে সবচেয়ে বড় বাধা হলো প্রযুক্তি ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগের খরচ। এ ছাড়া আছে সাইবার প্রতারণার ঝুঁকি। এ অবস্থায় দেশের ৬৮ শতাংশের বেশি ব্যাংক এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আটকে আছে।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, অনেক দেশে বড় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ফিনটেক প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর ফারুক এম আহমেদ বলেন, ডিজিটালাইজেশনকে অনেক সময় বাড়তি ব্যয় হিসেবে দেখা হয়। তবে এই খরচ আসলে বিনিয়োগ। তিনি প্রস্তাব করেন যে ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে অন্তত একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড জ ট ল র প ন তর র আর থ ক স ব গ র হক র অন ষ ঠ ন ব যবহ র উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত ৭৫ শতাংশ গ্রাহকই ডিজিটাল সেবার বাইরে

দেশের সব ধরনের আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত মোট গ্রাহকের ৭৫ শতাংশের বেশি ডিজিটাল সেবা পান না। উল্টোভাবে বলা হলে, একটি মাত্র ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করেন, এমন গ্রাহক ২৪ শতাংশ বেশি। এমন সব সেবার আওতায় থাকা মোট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণার এক জরিপে এ তথ্যগুলো উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়, আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত মোট গ্রাহকের হিসাবের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকগুলোর শাখার আমানতকারী, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) এজেন্ট ও গ্রাহক, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবার এজেন্ট ও গ্রাহক, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী এবং অ্যাপ ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংকের আমানতকারী। এমএলএস গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। অন্যরা অন্যান্য সেবার গ্রাহক। এই হিসাবে এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের গ্রাহকদের রাখা হয়নি।

আজ বুধবার বিআইবিএম আয়োজিত ব্যাংকের আর্থিক সেবা খাতে ডিজিটাল রূপান্তর ও পণ্য ব্যবহার নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। আলোচনায় ‘ব্যাংকের আর্থিক সেবা খাতে রিটেইল ব্যাংকিংয়ে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রভাব ও ব্যাংকিং পণ্য উদ্ভাবন’ নিয়ে একটি গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএমের চার শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা মিলে মোট ৩২টি ব্যাংক ও ৩২০ জন রিটেইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারী গ্রাহককে প্রশ্ন–উত্তরের মাধ্যমে গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন।

অনুষ্ঠানে গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম ও সহযোগী অধ্যাপক শামসুন নাহার মমতাজ। অনুষ্ঠানে অনলাইন মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের ‘এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর’ ফারুক এম আহমেদ ও সুপারনিউমারারি অধ্যাপক আলী হোসেন প্রধানিয়া। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রয়।

আলোচনা সভায় গবেষণার নানা গ্রাহক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল সেবা নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে সব ধরনের আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত ডেলিভারি চ্যানেলের সংখ্যা ৬ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখে। আর চলতি বছরে এসব ডেলিভারি চ্যানেলের ৮৮ শতাংশ দখল রয়েছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ব্যাংক খাতের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন–উত্তরের ভিত্তিতে তৈরি জরিপে ডিজিটাল পণ্য ও অবকাঠামো সফলতার সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এটিএম সেবা। আর ব্যাংকগুলো তাদের সেবার ডিজিটাল রূপান্তরে মোট বার্ষিক বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি অর্থ খরচ করে। আর দেশের ৭১ শতাংশের বেশি গ্রাহক স্মার্টফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বিআইবিএমের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, গত ২০ থেকে ২৫ বছরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ডিজিটাল রূপান্তরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে বিনিয়োগ হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ডিজিটাল চ্যানেল তৈরির জন্য খরচ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল রূপান্তরে সবচেয়ে বড় বাধা হলো প্রযুক্তি ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগের খরচ। এ ছাড়া আছে সাইবার প্রতারণার ঝুঁকি। এ অবস্থায় দেশের ৬৮ শতাংশের বেশি ব্যাংক এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আটকে আছে।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, অনেক দেশে বড় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ফিনটেক প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর ফারুক এম আহমেদ বলেন, ডিজিটালাইজেশনকে অনেক সময় বাড়তি ব্যয় হিসেবে দেখা হয়। তবে এই খরচ আসলে বিনিয়োগ। তিনি প্রস্তাব করেন যে ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে অন্তত একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ