ডিজিটাল সাবমিশন প্ল্যাটফর্ম পুঁজিবাজারে গতি বাড়াবে: সাইফুদ্দিন
Published: 26th, November 2025 GMT
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে স্মার্ট ডিজিটাল সাবমিশন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন বলেছেন, এ নতুন সিস্টেমের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট ও প্রকাশনা দ্রুত, নিরাপদ ও রিয়েল-টাইমে জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বাজারে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গতি বাড়াবে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারে মাল্টিপারপাস হলে ডিএসইর স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমে ‘রেগুলেটরি সাবমিশন মডিউল ও সিএসই অনবোর্ডিং’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
সাইফুদ্দিন বলেন, ‘‘এই উদ্যোগটি চাইনিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শুরু হয়, যেখানে বিপিএমভিত্তিক কার্যপ্রবাহ অটোমেশন ধারণা গ্রহণ করা হয়। ডিএসই’র দুজন কর্মী ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে এবং সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইন-হাউস টিমের সহায়তায় স্থানীয় সিস্টেম উন্নয়নে কাজ করছেন। ফলে ডিএসই এখন নিজস্ব সক্ষমতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য একটি কার্যকর ডিজিটাল সাবমিশন ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরেছে। এটি বাজারে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও শক্তিশালী করবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আর্থিক তথ্য জমা শুধু পিডিএফ–এ সীমাবদ্ধ থাকবে না। ডিএসই অগ্রসর হবে এআই পাঠযোগ্য ও মেশিন রিডেবল ডেটা ফরম্যাট, এক্সবিআরএল ভিত্তিক সাবমিশনের দিকে। এটি হবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায় পাঠযোগ্য আর্থিক তথ্য অবকাঠামোর ভিত্তি, যা স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বাজার গবেষণা, বিশ্লেষণ ও ডেটা ইন্টেলিজেন্স সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে।’’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘আজ পুঁজিবাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে ডিএসই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিগত অবকাঠামোতে নেতৃত্ব ধরে রাখলেও এতদিন নথি জমা ও রিপোর্টিংয়ের বড় অংশ ম্যানুয়াল ও হার্ড কপিনির্ভর ছিল, যা বিনিয়োগ কার্যচক্রকে ধীর ও জটিল করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই অনলাইন রিপোর্টিং চালু করেছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে, গ্রাহককেন্দ্রিক চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিএসই উন্নয়ন করেছে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম।’’
আজ থেকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, রেগুলেটরি রিপোর্ট, আর্থিক বিবরণী ও প্রয়োজনীয় নথি সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে এবং হার্ড কপি সাবমিশন পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডিএসই পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অবঃ) বলেন, ‘‘দেশে অনেক বিশেষজ্ঞ থাকলেও বাস্তবে কাজ শুরু করতে প্রায়ই সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সক্ষমতার অভাব দেখা যায়। কিন্তু ডিএসই ও সিএসই’র সাম্প্রতিক উদ্যোগ—মাত্র ১৫ দিনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজস্ব চেষ্টায় স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম তৈরি ডিজিটাল সক্ষমতায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।’’
জাতির কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলে ডিজিটাল উন্নয়ন, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও নিজস্ব উদ্ভাবন অব্যাহত রাখা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফিনান্সিয়াল কাউন্সিল রিপোর্টিংয়ের নির্বাহী পরিচালক নাবিল জে আহমেদ বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারের ডিজিটাইজেশন বহু বছর ধরে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও বর্তমান উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’’
তিনি উল্লেখ করেন, হাজারো ফাইল ম্যানুয়ালি পর্যালোচনা করতে দীর্ঘ সময় লাগে। বিশেষ করে একটি অডিট ফাইল পর্যালোচনায় এক সপ্তাহ লেগে যায়—যা ডিজিটাইজেশন জরুরি করে তুলেছে। এফআরসি ইতোমধ্যে নিজস্ব এআই ডাটাবেস ও টুলস তৈরি করছে, যা বিশ্লেষণ, ক্রস-চেক ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।’’
ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘মাত্র দুই সপ্তাহের চায়না ট্রেনিংয়ের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ও অন্যান্য সহযোগী বিভাগ যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, তা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং চীনের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার সঠিক সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রমাণ। বিদেশে বসে বিনিয়োগকারীরা ব্লুমবার্গ থেকে বাংলাদেশের কোম্পানির বেশি তথ্য পাচ্ছেন, যা স্থানীয়ভাবে তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্ট করে। নতুন প্ল্যাটফর্ম ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তবে ডেটার প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।’’
বিএপিএলসি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য মো.
এই ডিজিটাল সাবমিশন কোম্পানিগুলোর গভারনেন্স কস্ট কমাবে, রিপোর্টিং প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং ভবিষ্যতে লিস্টিংয়ে আগ্রহী নতুন কোম্পানিগুলোর জন্যও একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ডিএসই’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রবিউল ইসলাম প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে রেগুলেটরি সাবমিশন মডিউল ও সিএসই অনবোর্ডিং-এর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ঢাকা/এনটি//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল য টফর ম অন ষ ঠ ন ল ইসল ম ও স এসই র জন য এসই র ড এসই
এছাড়াও পড়ুন:
প্রবাসী ভোটাররা ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন
সব প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার ‘পোস্টাল ব্যালটের’ মাধ্যমে ভোট দেওয়ার জন্য ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। এর আগে নিবন্ধনের জন্য অঞ্চলভেদে সময়সীমা আলাদা ছিল। আজ বুধবার রাত ১২টা থেকে নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
আজ বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এটি আগে অঞ্চলভেদে ভাগ করা থাকলেও এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটি আজ রাত ১২টায় উন্মুক্ত করা হবে। ফলে বিশ্বের যেকোনো অঞ্চল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।
পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের জন্য এখন আর কোনো অঞ্চলভেদে পৃথক সময়সীমা থাকছে না উল্লেখ করে আখতার আহমেদ বলেন, ‘পাঁচ দিন করে ওই লিমিটেশন আর থাকছে না। এখন ওপেন। যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে করতে পারেন।’ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা সমাধানে কমিশন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এ ছাড়া আগামী শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ‘মক ভোটিং’ আয়োজনের কথাও জানান ইসির এই জ্যেষ্ঠ সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ‘মক ভোটিং’ রিহার্সাল করব।...যেহেতু জাতীয় সংসদের নির্বাচন এবং গণভোট—দুটি একসঙ্গে হচ্ছে, কাজেই আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে আরেকটু ঝালাই করে নিতে চাই।’
গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হওয়ার অধ্যাদেশ জারি হয়েছে উল্লেখ করে আখতার আহমেদ বলেন, দায়িত্বের আভাস পাওয়ার পর থেকেই তাঁরা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন। কাগজে-কলমে ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিও আগেই শুরু হয়েছে এবং অগ্রিম প্রস্তুতির এগিয়ে রাখছেন বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন ঘিরে অপতথ্য রোধে ইসির সঙ্গে কাজ করবে টিকটিক
এর আগে বেলা তিনটার পর আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে গুজব, অপতথ্য ছড়ানো বন্ধে করণীয় ঠিক করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টিকটক’–এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ও টিকটকের নয়জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সম্মেলনকক্ষে ‘‘আ কনভারসন উইথ টিকটিক অন ইলেকশন ইন্ট্রিগ্রিট’ শীর্ষক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে টিকটকের সাউথ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ও গভর্নমেন্ট রিলেশনস হেড ফেরদৌস মুত্তাকিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করা যে আমাদের প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনী বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয় না। আমাদের একটি বড় দল রয়েছে। নির্বাচন সুরক্ষার বিষয়ে পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আমরা কয়েক মাস আগে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা তাদের বলেছি যে আমরা আপনাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব, যাতে আমাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়।’
টিকটকে অনেক ভুয়া অ্যাকাউন্ট আছে, যার মাধ্যমে গুজব, অপতথ্য ছড়ানো হয়, এগুলো রোধে কী করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস মুত্তাকিম বলেন, ‘এসব তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের ভিন্ন ভিন্ন অনেক ব্যবস্থা আছে। আমরা সব সময়ই এসব নিয়ে কাজ করি। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, নির্বাচনের সময়ে অবশ্যই আমাদের বিশেষ নজর থাকে। কিন্তু সারা বছরই এই কাজ চলতে থাকে।’