ঢাকায় বিএনপির প্রার্থী সানজিদা ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা
Published: 26th, November 2025 GMT
চার বিয়ে নিয়ে একটি মন্তব্যের জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সানজিদা ইসলামের (তুলি) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হোসাইন মোহাম্মদ আনোয়ার নামের এক ব্যবসায়ী আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালতে এই মামলা করেন।
বাদীর আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার ঘটনায় আমরা আদালতে মামলা করেছি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১ অনুযায়ী ধর্মচর্চার অধিকার হলো মানুষের মৌলিক অধিকার। ‘বিবাহ’ হলো ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতিনীতি ও বিধান। পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ৩ নম্বর আয়াত অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ ৪টি পর্যন্ত বিবাহ করতে পারবেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ (শরিয়ত) অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট, ১৯৩৭’ ধারা (২) অনুযায়ী বিবাহ, ভরণপোষণ, তালাক ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যমান পক্ষগণ যদি মুসলিম হন, সে ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়াহ আইন প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো নাগরিক ধর্ম প্রতিপালন না–ও করতে পারে, কিন্তু ধর্মকে অপমান করা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার অধিকার কারও নেই।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিবাদী সানজিদা ইসলাম তুলি ইসলামে বিবাহ ইস্যুতে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ইসলাম ধর্মকে অপমান করেছেন এবং মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছেন, যা দণ্ডবিধির ২৯৫(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়ে সানজিদা ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ১৫ নভেম্বর ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টের কথা উল্লেখ করেন। ওই পোস্টে তিনি বলেছিলেন, ‘আজ নারীর অধিকার নিয়ে বলতে গিয়ে আমি চার বিয়ের ব্যাপারে ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। কোরআন ও সুন্নাহতে একাধিক বিয়ের অনুমতি আছে, তবে শর্ত হলো ন্যায়বিচার (সুরা নিসা ৪:৩)। ইসলামে একজন পুরুষ সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারে, তবে কঠোর শর্ত হলো—প্রতিটি স্ত্রীকে সময়, অর্থ, অধিকার ও মর্যাদায় পূর্ণ সমান ন্যায়বিচার করতে হবে। কোরআন স্পষ্ট নির্দেশ দেয়: যদি ন্যায়বিচার করা সম্ভব না হয়, তবে ‘একটিতেই সীমাবদ্ধ থাকো’ (সুরা আন-নিসা ৪:৩)।’
সানজিদা ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে—ইসলাম নারীর সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তাই শুধু আইনের একটি অংশ ধরে নয়, পুরো নির্দেশনা অনুসারে চলা জরুরি। সমাজের দায়িত্ব হলো নারীর সকল অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। তাই আমার বক্তব্য ছিল শুধু এই—আমাদের বোনদের ধোঁকা দিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করা, তাদের হক থেকে বঞ্চিত করা এবং প্রতারণা করা ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলাম ন্যায়, স্বচ্ছতা ও আমানতের ওপর জোর দেয়, প্রতারণার ওপর নয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত তাবতাবাই কে, কীভাবে হিজবুল্লাহতে যোগ দিলেন
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহরতলিতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কর্মকর্তা হাইথাম আলী তাবতাবাইকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। প্রায় এক বছর আগে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। তারপরও গতকাল রোববার হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রথমে তাবতাবাইকে হত্যার দাবি করে। পরে হিজবুল্লাহ থেকে তাঁর নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চলা যুদ্ধে ইসরায়েল ইরান–সমর্থিত হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের বড় অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর হাইথাম আলী তাবতাবাইকে হিজবুল্লাহর ‘চিফ অব স্টাফ’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
হাইথাম আলী তাবতাবাই কে
তাবতাবাইয়ের জন্ম লেবাননে, ১৯৬৮ সালে। তাঁর বাবা ইরানি বংশোদ্ভূত এবং মা লেবানিজ। লেবাননের একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্রটি বলেছে, তিনি (তাবতাবাই) হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন না, তবে তিনি গোষ্ঠীর ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের’ প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি সিরিয়া ও ইয়েমেনে হিজবুল্লাহর মিত্রদের সঙ্গে লড়াই করতে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, হাইথাম আলী তাবতাবাই ১৯৮০–এর দশকে হিজবুল্লাহতে যোগ দেন। তিনি হিজবুল্লাহর অভিজাত বাহিনী রাদওয়ান ফোর্সসহ বিভিন্ন বাহিনীতে একাধিক উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইসরায়েল গত বছর লেবাননে স্থল অভিযান চালিয়ে রাদওয়ান ফোর্সের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করেছিল।
গত বছরের যুদ্ধে তাবতাবাই হিজবুল্লাহর ‘অপারেশনস ডিভিশনের’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধে অন্যান্য শীর্ষ কমান্ডাররা নিহত হলে তাবতাবাই ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়েছিলেন বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী আরও দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর হাইথাম আলী তাবতাবাই চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য তাদের প্রস্তুতি পুনর্গঠনের কাজে ব্যাপকভাবে নিযুক্ত ছিলেন।
লেবানিজ নিরাপত্তা সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, অন্য শীর্ষ হিজবুল্লাহ কর্মকর্তারা নিহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাবতাবাইকে দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল এবং গত বছর তিনি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুনবৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত৫ ঘণ্টা আগে