ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে হোয়াইট হাউসে কী অদ্ভুত জিনিস দেখলেন জোহরান মামদানি
Published: 26th, November 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তিনি সেখানে দেখা সবচেয়ে ‘অদ্ভুত জিনিসটি’ প্রকাশ করেছেন।
ওয়েবভিত্তিক ‘দ্য অ্যাডাম ফ্রিডল্যান্ড শো’–তে এই ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক নেতা বলেন, ট্রাম্পের পড়ার বইপত্রের মধ্যে তিনি একটি ‘ইউএফসি’ কফি টেবিল বুক দেখতে পান। তিনি বলেন, জুনে হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে মিক্সড মার্শাল আর্টসের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, সে ব্যাপারে তাঁর ‘কোনো ধারণাই ছিল না’।
নিজের সেই দিনের কথা স্মরণ করে ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি বলেন, ‘সভার সময়ের অপেক্ষায় আমি বসে আছি। আর আমার সামনে ছিল এসব বিভিন্ন কফি টেবিল বুক।’
জোহরান মামদানি আরও বলেন, ‘এবং সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল “হোয়াইট হাউসে ইউএফসি”। আমার কোনো ধারণাই ছিল না, আর আমি কেবল সেটি উল্টেপাল্টে দেখছিলাম।’
বইটিতে মারামারির ছবি দেখা গেছে কি না জানতে চাইলে নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, আসলে সেগুলো শুধু দেখানোর জন্য, যাতে বোঝানো যায় যে ইউএফসির অষ্টভুজ আকৃতির লড়াইয়ের খাঁচা সাউথ লনে বসালে কেমন দেখাত।
আমেরিকার ২৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ট্রাম্প চলতি বছরের জুলাইয়ে এই ইভেন্টের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এটি ২০২৬ সালের ১৪ জুন প্রেসিডেন্টের ৮০তম জন্মদিনের সঙ্গে মিলিয়ে আয়োজন করার কথা রয়েছে।
জোহরান মামদানিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। তিনি হেসে উত্তর দেন, ‘না’।
ট্রাম্প একজন ফ্যাসিবাদীহোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠকের কয়েক দিন পরেই এনবিসির সঙ্গে অন্য এক সাক্ষাৎকারে জোহরান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তিনি ট্রাম্পকে এখনো একজন ‘ফ্যাসিবাদী’ ও ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবে দেখেন।
গত রোববার এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’–এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোহরানকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি এখনো ট্রাম্পকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি মনে করেন কি না।
উত্তরে জোহরান মামদানি বলেন, ‘অতীতে আমি যা কিছু বলেছি, আমি সেগুলোয় বিশ্বাস করি.
হোয়াইট হাউসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যৌথ আলাপচারিতার সময় এক সাংবাদিক যখন জোহরান মামদানির কাছে জানতে চান, তিনি এখনো প্রেসিডেন্টকে ফ্যাসিবাদী মনে করেন কি না, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই নবনির্বাচিত মেয়রের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
জোহরান মামদানিকে বাধা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ঠিক আছে। আপনি শুধু এটাই বলতে পারেন। এটাই সহজ...এটা ব্যাখ্যা করার চেয়ে সহজ। আমি কিছু মনে করি না।’
এ মুহূর্তটি দ্রুতই অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায় এবং অনেকেই দুজনের মধ্যকার অপ্রত্যাশিত সৌহার্দ্য লক্ষ করেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’
শুক্রবারের ভূমিকম্পে তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকা শহর। আতঙ্কে যে যে অবস্থায় ছিলেন সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে ছুটে গেছেন। আবার কেউ কেউ ঘরেই রয়ে গেছেন, কারণ ঢাকায় খোলা জায়গা কোথায়, যেখানে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া যায়! এই ভূমিকম্পের সময়কার ভিডিও ফুটেজের পাশাপাশি নানা মানুষের অনুভূতির কথায় এখন সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মধ্যে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্স নবজাতকদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ভিডিও এখন ভাইরাল।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পে কাঁপছে চারপাশ। চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার এক নবজাতককে দুই হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। আরেকজন নার্সও দৌড়ে গিয়ে আরেক নবজাতককে ধরেন। ঘটনাটি রাজধানীর শ্যামলীর ডক্টরস কেয়ার হাসপাতালের।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এটিকে কম্পনের তীব্রতার দিক থেকে স্মরণকালের নজিরবিহীন বলছেন ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞরা। নরসিংদীর মাধবদীতে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। এ ভূমিকম্পকে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী কমলা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস। এর মানে হলো এমন ভূমিকম্পে উল্লেখযোগ্য প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। সৌভাগ্যবশত সেই বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শক্তিশালী কম্পন ঢাকাবাসী কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। সবাই ক্ষণিকের জন্য হলেও মৃত্যুর ভয় পেয়েছেন। এই মানুষদের তালিকায় ছিলেন চিকিৎসক ইব্রাহীমও থাকলেও তিনি নিজের জীবনের চেয়ে দায়িত্বকে এগিয়ে রেখেছেন।
শুক্রবার তিনি নিজে এবং তাঁর সঙ্গে দায়িত্বে থাকা দুই নার্স যে কাজটি করেছিলেন, দায়িত্বরত অবস্থায় বেশির ভাগ চিকিৎসকই এমন করেছেন বা করতেন বলে উল্লেখ করেন ইব্রাহীম সরদার।গতকাল শনিবার বিকেলে কথা হলো ইব্রাহীম সরদারের সঙ্গে। তিনি হাসপাতাল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন গতকাল। তারপর থেকে তিনি ফেসবুকে এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষের শুভকামনায় ভাসছেন।
সবাই যখন নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, আপনি তা না করে কেন নবজাতককে জড়িয়ে ধরে ছিলেন—জানতে চাইলে ইব্রাহীম সরদার টেলিফোনে বললেন, ‘আমি হাসপাতালটিতে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অন্য সময়ও চোখের সামনে বাচ্চাদের মৃত্যু দেখি। গতকাল মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’
হাসপাতালটির এনআইসিইউতে তখন তিনটি নবজাতক এবং চার বছরের কম বয়সী চারটি শিশু ভর্তি ছিল। ইব্রাহীম সরদার জানালেন, তিনি যে নবজাতককে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসপাতালের নথিতে মায়ের নাম অনুযায়ী তার নাম ‘বেবি অব সায়মা’। বয়স ছিল মাত্র ৭ দিন। জন্মের পর কান্না না করা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনিসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার।
ইব্রাহীম বললেন, ‘আমার মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা হিসেবে অ্যালার্ম সেট করা আছে। ভূমিকম্প শুরুর ২-৩ সেকেন্ড আগে অ্যালার্ম বাজলে আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে যাই। কাঁপুনি বাড়লে আমি একজনকে ধরি। দায়িত্বে থাকা নার্স নিপা বিশ্বাস এবং মুক্তা আক্তারও অন্য দুই নবজাতকের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। সিসিটিভিতে অবশ্য একজন নার্সকে দেখা যাচ্ছে।’
চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার বলেন, ‘আমি বা আমার সঙ্গে থাকা নার্সরা সেই সময় নিজেদের মৃত্যুর চিন্তা করি নাই। শুধু মনে হয়েছে, নবজাতকদের মাথা বা শরীরের ওপর কিছু পড়তে পারে। যেকোনোভাবে হোক ওদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। ঘটনার পর আমি নিজে দুই নার্সকে এই ভালো কাজের জন্য ট্রিট দিয়েছি।’
ফেসবুকে খুব একটা সরব নন ইব্রাহীম সরদার। তিনি বললেন, ‘আমি ফেসবুকে আলোচিত কেউ না। আমার এ পোস্ট আলোচনার জন্ম দেবে, তা-ও বুঝতে পারিনি। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান সিসিটিভির ফুটেজটি দেন। হাসপাতালের দুজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের একজন চিকিৎসক ফজলে রাব্বি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি আমার মেডিকেল কলেজের বড় ভাই। ফজলে রাব্বিকে ট্যাগ করে সিসিটিভি ফুটেজটি ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছিলাম।’
শুক্রবার এই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন ইব্রাহীম সরদার। শনিবার সকালে বাসায় ফেরেন। বিকেলে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘ফেসবুকে আমার পোস্টটি আলোচনায় এসেছে, তা এখন বুঝতে পারছি। অনেকেই ফোন দিয়েছেন, ফেসবুকে মন্তব্য করার পাশাপাশি আমার পোস্ট শেয়ার করেছেন। অনেকে ফোন করছেন।’
৪৮তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত ইব্রাহীম সরদার বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর আমার বড় বোন ফোন দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেছিলেন। তাঁকেও বলেছি মারা গেলে তো যেকোনো জায়গাতেই মারা যেতে পারি। বাসায় যাওয়ার পথে বা বাসায় গিয়েও মারা যেতে পারি।’
ভূমিকম্পের সময় হাসপাতালে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নবজাতকদের ধরে রাখেন চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার এবং নার্স নিপা বিশ্বাস ও মুক্তা আক্তার