চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় কনসার্টে পুলিশের গুলিতে আহত নাজির শরিফ (২৩) নগর ছাত্রদলের কর্মী। তিনি নগর ছাত্রদলের সদস্যসচিব শরিফুল ইসলামের অনুসারী বলে জানা গেছে। কনসার্টে গোলাগুলির খবরে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। ঘটনায় আহতের পর তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দলের নেতা–কর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

এর আগে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে আটটায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ের কনভেনশন সেন্টার এলাকায় গুলির এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর আহত শরিফকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বাঁ কাঁধের নিচে গুলি লাগে। সেখানে থাকা নেতা–কর্মীরা জানান, পুলিশের গুলিতে শরিফ আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সদস্যসচিব শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আহত শরিফ ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রদলের কর্মী। দলে তাঁর কোনো পদ নেই। ঝামেলা হচ্ছে শুনে কনসার্ট এলাকায় খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি কেন্দ্রে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গতকাল জিইসি কনভেনশন সেন্টারে কনসার্টের আয়োজন করে একটি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যান্ড দল ‘আর্টসেল’–এর গান পরিবেশনের কথা ছিল। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া কনসার্ট সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছিলেন আয়োজকেরা। তবে কনসার্ট শুরুর পর সেখানে দুই পক্ষের ঝামেলা হয়। এ সময় কনভেনশন সেন্টারে ভাঙচুর চালানো হয়।

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, কনভেনশন সেন্টারের ফটকের বাইরে মানুষের জটলা। ফটকের ভেতরেও এক পাশে কিছু মানুষ। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা জটলার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছেন সাদাপোশাকে থাকা এক পুলিশ সদস্য। তাঁর পেছনে শটগান হাতে ছুটে আসেন আরও একজন। মুহূর্তেই সামনের জটলা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর সেখানে ছাত্রদলের একটি পক্ষ উপস্থিত হয়। স্লোগান দেওয়া পক্ষের সঙ্গে ছাত্রদলের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ভাঙচুর শুরু করে স্লোগান দেওয়া পক্ষটি। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোড়ে। সে সময় বাইরে থাকা কয়েকজন আহত হন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কনভেনশন সেন্টারের ফটক বন্ধ। এর বাইরে লোকজনের জটলা। জিইসি মোড়, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে ও ওমরগণি এমইএস কলেজের সামনে লাঠিসোঁটা হাতে বেশ কয়েকজন তরুণ–যুবককে দেখা যায়। তবে লাঠিসোঁটা হাতে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) নিষ্কৃতি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কনসার্টের অনুমতি ছিল না। সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আটটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কাউকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়নি। পুলিশের গুলি কারও গায়ে লেগেছে কি না, সেটি জানা নেই।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে ভাঙচুর, গোলাগুলি২১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কনভ নশন স ন ট র ত রদল র ক ছ ত রদল র কনস র ট ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা

জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।

দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপট

হাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’

এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)

আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।

দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকত

এই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯

আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।

আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ