দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড এনেছে মেঘনা ব্যাংক
Published: 15th, October 2025 GMT
দেশে প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য (রিসাইকেলড) প্লাস্টিকের তৈরি ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড সেবা চালু করেছে মেঘনা ব্যাংক। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে মেঘনা ব্যাংক মোট দুই ধরনের ভিসা প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড বাজারে এনেছে। একটি হলো গ্রিন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড ও অন্যটি উইমেন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড।
নতুন এই উদ্যোগে একজন গ্রিন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ডধারী বছরে দুই লাখ টাকার বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। অন্যদিকে উইমেন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী একজন নারী গ্রাহক বছরে এক লাখ টাকার বেশি সুবিধা পাবেন।
মেঘনা ব্যাংক জানায়, প্রচলিত কার্ডের তুলনায় ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদানে তৈরি এসব কার্ড উৎপাদনের ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমেছে। কার্ড এনভায়রনমেন্টাল ক্যালকুলেটর অনুযায়ী, এ ধরনের কার্ড উৎপাদনে শক্তির ব্যবহার ৪১ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া কার্ড উৎপাদনে যেসব বর্জ্য হয়, তা–ও পুনরায় কার্ড তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। কার্ড তৈরিতে হ্যালোজেন উপাদানের ব্যবহারও ৫২ শতাংশ কমেছে।
যেসব সুবিধা পাওয়া যাবেমেঘনা ব্যাংকের এই দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ডধারীরা সাধারণ ব্যাংকিং সেবার বাইরে বিভিন্ন লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডে সুবিধা ও ক্যাশব্যাক অফার পাবেন। এর পাশাপাশি ভ্রমণে বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে নানা সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
গ্রিন প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, মারমেইড ইকো রিসোর্ট, রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, ফোর্টিস ডাউনটাউন রিসোর্ট, গ্র্যান্ড রিভার ভিউ হোটেল ও রিসোর্টে এক রাত থাকলে আরেক রাত ফ্রিতে থাকা যাবে।
এ ছাড়া আড়ং, যাত্রা বাংলাদেশ, নর্থ অ্যান্ড কফি রোস্টার্স, যাত্রাবিরতি, রুয়েন বুসাবা, বান বুসাবা, ভল্ট ঢাকা, হারলান, টাইম জোন, ব্র্যাক নার্সারি ও গ্রিন লাইন পরিবহনে গ্রিন প্লাটিনাম কার্ডধারীরা ৪৩ হাজার ও উইমেন প্লাটিনামে ৩৭ হাজার পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা পাবেন।
এই দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ডধারীরা পাঁচ তারকা হোটেলে একটি খাবার কিনলে আরেকটি খাবার ফ্রি পাবেন। সেই সঙ্গে ভ্রমণে শেয়ারট্রিপ ও ওয়ান্ডার ওম্যানে ছয় মাস পর্যন্ত শূন্য শতাংশ ইএমআই সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিশ্বের দেড় হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাউঞ্জে নানা সেবা পাবে মেঘনা ব্যাংকের কার্ডধারীরা। এসব কার্ড ব্যবহারে জুয়েলারি, ফিটনেস, প্রসাধনী ও স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ ছাড় পাওয়া যাবে।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো.
গ্রাহকেরা এই নতুন কার্ডের জন্য মেঘনা ব্যাংকের কল সেন্টারে কলের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে অথবা যেকোনো মেঘনা ব্যাংক শাখায় গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজ দিয়ে এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে।
মেঘনা ব্যাংকের হেড অব কার্ডস মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘গ্রিন প্ল্যাটিনাম ও উইমেন প্ল্যাটিনাম কার্ড কেবল প্রিমিয়াম সুবিধা নয়। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের গ্রিন ভবিষ্যতে অবদান রাখার সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য বিশ্বমানের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি দেশে গ্রিন ব্যাংকিং সংস্কৃতি গড়ে তোলা।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইম ন প ল র ব যবহ র র জন য ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
ভাত দেওয়ার মুরোদ না থাকা গোঁসাইয়ের কিল কেন শিক্ষকের পিঠে
দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে একটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে দেখা যায়, ছেঁড়া শার্ট পরা একজন মানুষকে হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাঁদের আচরণ দেখে মনে হতে পারে, তাঁরা হয়তো কোনো ভয়ংকর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছেন।
অথচ বাস্তবতা হলো, যাঁকে এভাবে টেনে নেওয়া হচ্ছে, তিনি একজন শিক্ষক। তাঁর ‘অপরাধ’ নিজের সামান্য বেতনের সঙ্গে কিছু ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা যোগ করার দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ানো।
আর সেই ‘অপরাধে’ই একজন গরিব শিক্ষককে লাঠিপেটা করা হলো, পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হলো, হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে মাটিতে ফেলা হলো।
গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর মানুষ নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। হয়তো সেই স্বপ্ন দেখা মানুষদের একজন ছিলেন এই শিক্ষক।
আরও পড়ুনএমপিও শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন-ভাতা নিয়ে আর কত ‘তামাশা’ ১১ অক্টোবর ২০২৫জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল মানুষের সেই আশা আকাঙ্ক্ষার কথা শোনা, পূরণ করতে পারুক বা না পারুক অন্তত আশ্বস্ত করা। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
অথচ ঘটছে ঠিক উল্টোটা। দিন যত যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে তাদের সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শিক্ষকদের মনোবল ভাঙা। একদিকে বলা হচ্ছে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, অন্যদিকে সেই মেরুদণ্ডেই লাঠি চালানো হচ্ছে।
এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে শিক্ষকেরা ন্যায্য দাবি তুললেই তাঁদের ‘শিক্ষা’ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষিতদের বেতন বাড়ানোর মতো অর্থ সরকারের নেই; কিন্তু সাউন্ড গ্রেনেড আছে। ভাতা বাড়ানোর সক্ষমতা নেই; কিন্তু জলকামান চালানোর বাজেট আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা নতুন নয়, অন্তত তিনটি ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যায়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ অক্টোবর এমপিওভুক্তির দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সামনে আন্দোলন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরা। সেখানে তাঁদের ওপর লাঠিপেটা করা হয়, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়।
শিক্ষকদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার শুধু তাঁদের অধিকার নয়, রাষ্ট্রের আত্মসম্মানেরও প্রশ্ন। এখনই সময়, সরকারকে সংলাপের টেবিলে বসে বলপ্রয়োগের পরিবর্তে সংবেদনশীলতার চর্চা শুরু করার। কারণ, যাঁরা জাতির মেরুদণ্ড, তাঁদের ভাঙলে রাষ্ট্র কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেন ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা; তাঁদের ওপরও চালানো হয় লাঠিপেটা, ছোড়া হয় সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান।
১০ ফেব্রুয়ারি ‘সুপারিশপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবৃন্দ তৃতীয় ধাপ (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ)’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করলে তাঁদের ওপরও একইভাবে লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়।
সর্বশেষ ১২ অক্টোবর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সরাতে গিয়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। এতে কয়েকজন আহত হন এবং কয়েকজনকে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তোলে।
বাংলাদেশ এখন এক গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সময় পার করছে। এই সময়টা কেবল ক্ষমতার পরিবর্তনের নয়; বরং রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারণেরও সময়। আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা নির্ভর করছে আজ কাদের কথা শোনা হচ্ছে, আর কাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে তার ওপর।
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর স্পষ্ট হচ্ছে, শুধু সরকারের রূপ বদলেছে, রাষ্ট্রের চরিত্র বদলায়নি। সংস্কারের নামে দিস্তা দিস্তা কাগজে সুপারিশমালা লেখা হচ্ছে, কিন্তু কৌশলের রং আগের মতোই: দাবি তুললেই লাঠি, প্রতিবাদ করলেই জলকামান, কথা বললেই ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’।
আরও পড়ুননন-এমপিও শিক্ষক: একুশ শতকের শ্রমদাস!১২ ডিসেম্বর ২০১৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকা ও পরবর্তী সময়ে বিরূপ পরিস্থিতির এক বছর না যেতেই পুলিশ আবারও পুরোনো চেহারায় ফিরে এসেছে। বলপ্রয়োগ ছাড়া সংকট মোকাবিলার কোনো প্রয়াস চোখে পড়ে না। সামাজিক মনস্তত্ত্ব বা সংলাপনির্ভর শান্তি-কৌশলের কোনো প্রয়োগও দেখা যায় না। শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেয়ে তারা বলপ্রয়োগেই বেশি অভ্যস্ত। কখনো কখনো মনে হয়, প্রতিটি প্রতিবাদ যেন যুদ্ধ, আর প্রতিটি আন্দোলনকারী যেন শত্রু।
সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে—প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার আছে। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন—দুটিই বলছে, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ অপরাধ।
কিন্তু বাস্তবে আন্দোলনরত মানুষদের ওপর পুলিশের জলকামান, লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার থামছে না। নাগরিকের ওপর রাষ্ট্রের এই মারমুখী আচরণ পুরোনো বন্দোবস্তের স্মৃতি জাগায়।
ফিরে আসি শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রসঙ্গে। মর্যাদার দিক থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকেরা সমাজে নিচের সারিতে অবস্থান করেন, বেতন-ভাতার দিক থেকেও তাঁদের অবস্থা শোচনীয়।
আরও পড়ুনবেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের ভাগ্য ৩২ বছরেও বদল হলো না ১২ মে ২০২৪বেসরকারি শিক্ষকদের অবস্থা আরও করুণ। তবু তাঁদের হাতেই জাতির ভবিষ্যৎ গঠনের ছাঁচ। অথচ তাঁরাই যখন ন্যায্য প্রাপ্য দাবি করেন, তখন রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া যেন সেই স্বামীর মতো—যিনি নিজের আয়ে স্ত্রীকে ঠিকমতো খাওয়াতে পারেন না, অথচ প্লেটে খাবার কম পড়লে বউকেই মারধর করেন।
এই বাস্তবতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতার নয়; এটি নৈতিক দেউলিয়াত্বেরও প্রতিচ্ছবি। একটি জাতির পতন কখন হয়? যখন কলম থাকে নত, আর অস্ত্রের ঝনঝনানির শব্দ থাকে ‘ঊর্ধ্বে’। শিক্ষকদের ওপর রাষ্ট্রের এমন আচরণের পর প্রশ্নটা আবারও ফিরে আসে—যাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর, তাঁদের ভাঙছি কেন?
শিক্ষকদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার শুধু তাঁদের অধিকার নয়, রাষ্ট্রের আত্মসম্মানেরও প্রশ্ন। এখনই সময়, সরকারকে সংলাপের টেবিলে বসে বলপ্রয়োগের পরিবর্তে সংবেদনশীলতার চর্চা শুরু করার। কারণ, যাঁরা জাতির মেরুদণ্ড, তাঁদের ভাঙলে রাষ্ট্র কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
সৈয়দ রিফাত মোসলেম প্রথম আলোর প্রতিবেদক