২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট সব পরীক্ষাকেন্দ্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

দেশের ৯টি সাধারণ ও কারিগরি এবং মাদ্রাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩। ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮। সেই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এদিক এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, এবার পাসের হারে সব চেয়ে এগিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১। অন্য বোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা রোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৪৮ দশমিক ৮৬, রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪০, যশোর ৫০ দশমিক ২০, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯, ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২ দশমিক ৬৭।

আরও পড়ুনএইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন৩ ঘণ্টা আগে

এদিকে ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার সারা দেশে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এবার জিপিএ–৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।

শিক্ষার্থীরা ফলাফল দেখবেন যেভাবে

১.


সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট (Result) কর্নারে ক্লিক করে বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের EIIN–এর মাধ্যমে ফলাফল ডাউনলোড করতে পারবেন। সব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে Result কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের EIIN এন্ট্রি করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবেন।
২.
পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফলাফল সংগ্রহ করতে পারবেন।
৩.
নির্ধারিত Short Code–16222–এ এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল পাবেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এসএমএসের মাধ্যমে HSC Board Name (First 3 Letters) Roll Year টাইপ করে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে শিক্ষার্থীদের।
উদাহরণ: HSC Dha 123456 2024 লিখে 16222–তে পাঠাতে হবে।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় গত ২৬ জুন। লিখিত পরীক্ষা গত ১৯ আগস্ট শেষ হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২১ থেকে ৩১ আগস্ট। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেন।

আরও পড়ুনসর্বোচ্চ পাসের হার কোন বোর্ডে, দেখুন ফলাফল১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র ফল ফল প ও সমম ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে মিসাইলে, ভূমধ্যসাগরে জলদস্যুদের গুলিতে আমরা মরবই?

১৭ নভেম্বর প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠার একটি খবরের শিরোনাম হলো, ‘লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর উপকূলে নৌকা ডুবে ৪ বাংলাদেশির মৃত্যু’। আল–জাজিরার সূত্রে খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ১৩ নভেম্বর রাতে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের উদ্দেশে পাড়ি দিতে যাওয়া দুটি নৌকা লিবিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। এর মধ্যে একটি নৌকায় বাংলাদেশ থেকে আসা ২৬ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে চারজন মারা যান। অন্যদের উদ্ধার করা হয়।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের লাওখণ্ডা গ্রামে। দুজনেই তরুণ। এনামুল শেখের বয়স ২৭ আর আনিস শেখের বয়স ২৫। গত ১০ অক্টোবর তাঁরা বাংলাদেশ ছাড়েন। চার ভাইয়ের মধ্যে এনামুল ছিলেন সবার ছোট। পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতেই তাঁর এই অগস্ত্যযাত্রা। আর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন নার্সের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আনিসের। তাঁদের সংসারে সাড়ে তিন বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে।

আরও পড়ুনএত উন্নয়নের পরও কেন ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরছে আমাদের তরুণেরা২৬ আগস্ট ২০২৩

ভাগ্য ফেরাতে ইতালি যাওয়ার জন্য তাঁরা মাদারীপুরের একজন দালালকে ২১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। লিবীয় রেড ক্রিসেন্টের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়ানো মৃতদেহ গাড়িতে তোলা হচ্ছে। প্রিয়জনদের লাশ দেশে কবে ফিরবে, শেষ দেখাটা দেখতে পাবেন কি না, সেটাই এখন স্বজনদের একমাত্র আর্তনাদ।

মাদারীপুরের টগবগে তরুণ মুন্না তালুকদার। মাত্র ১৯ বছরে থেমে গেছে তাঁর জীবন। সাড়ে ২২ লাখ টাকায় বডি কন্ট্রাক্ট বা শরীর চুক্তি করে ইতালি পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেই বডিটাই এখন মায়ের কাছে ফিরবে কি না, সেটাই বড় সংশয়। দালালেরা বলেছে, জলদস্যুদের গুলিতে রাজৈর উপজেলার বায়েজিদ শেখ নামের আরেক তরুণের সঙ্গে মুন্না গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে মুন্নার মা রাবেয়া বেগমের সেই আর্তিই শোনা যাচ্ছে: ‘দালাল আমার বাবারে বডি কন্ট্রাক্ট (শরীর চুক্তি) কইরা নিছে। বলছে, য্যামনে হোক, ইতালি লইয়া যাইবে। সাড়ে ২২ লাখ টাকা লইয়া ভাগছে। ওরা আমার বাবারে খারাপ নৌকায় দিয়া মাইরা ফালাইছে। দয়া কইরা আমার বাবার বডি (শরীর) আম্মেরা আইনা দেন। আম্মেগো পায় ধরি, আমার বাবার লাশটা আইনা দেন।’ (আম্মেগো পায় ধরি, আমার বাবার লাশটা আইনা দেন’ ১৯ নভেম্বর, ২০২৫)

সাড়ে ১৫ বছর বলি, আর ৫৪ বছর বলি, এতগুলো বছরের জঞ্জাল দেড় বছরে ধুয়ে–মুছে ফেলা অসম্ভব। যে তরুণদের কর্মসংস্থানের বঞ্চনা নিয়ে চব্বিশের অভ্যুত্থানের সূচনা, তাঁদের কর্মসংস্থান, জীবনমান পাল্টানোর দৃশ্যমান কোনো প্রচেষ্টা, উদ্যোগ কোথাও দেখা যায়নি। বরং নতুন সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর আবির্ভাব হতে দেখছি। আর ধীরে ধীরে বাদ পড়ে গেছেন শ্রেণি–পেশা–জাতি–লিঙ্গ নির্বিশেষে অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীরা।

প্রথম আলোর মাদারীপুর প্রতিনিধি অজয় কুণ্ডুর একই প্রতিবেদনে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ইতালিযাত্রার একটা পথরেখা জানা যায়। ১২ অক্টোবর ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে ঘর ছাড়েন মুন্না। প্রথমে তাঁকে সৌদি আরবে নেওয়া হয়। পরে ওমরাহ হজ করতে যান মুন্না। হজ শেষে তাঁকে কুয়েত নেওয়া হয়। সেখানে কয়েক দিন রেখে নেওয়া হয় মিসরে। তারপর উড়োজাহাজে লিবিয়ার বেনগাজিতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে লিবিয়ার মিসরাতা শহরের নেওয়া হয়। ১ নভেম্বর মুন্নাকে লিবিয়ার উপকূল থেকে নৌকায় ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মুন্নাকে তুলে দেয় দালাল চক্র। মুন্নাকে বহন করার নৌকাটি ভূমধ্যসাগরের কিছু দূর যাওয়ার পরই মাফিয়াদের (জলদস্যুদের) হামলার শিকার হয়।’

ভাগ্য বদলাতে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পথে বাংলাদেশি তরুণদের এই আত্মহনন নতুন নয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নৌকা ডুবে ৮ বাংলাদেশি মারা যান। ২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোটের হস্তক্ষেপে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। এর পর থেকে দেশটি দারিদ্র্য ও গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে লিবিয়া হয়ে ওঠে বিশ্বের সংঘাতকবলিত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলো থেকে ইউরোপমুখী অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যতম ট্রানজিট রুট।

আরও পড়ুনটাইটানের ধনী অভিযাত্রীরা বনাম ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির হতভাগারা২৩ জুন ২০২৩

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার বরাতে ২০২৪ সালের মে মাসে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৪-২০২৪ সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত অন্তত ২৮৩ জন বাংলাদেশি লিবিয়া হয়ে ইউরোপ পাড়ি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে জীবন হারিয়েছেন। লিবিয়ায় অভিবাসী ও শরণার্থীদের আটকে নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও নিয়মিত। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশি তরুণেরা কেন এমন মরিয়া হয়ে বডি কন্ট্রাক্ট করছেন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপযাত্রা সবচেয়ে বিপজ্জনক রুটগুলোর একটি। ২০১৪-২০২৪—এই ১০ বছরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই পথে পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।

বাংলাদেশি তরুণদের জীবন বাজি রেখে ভাগ্য ফেরানোর এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ২৫ বছরের যুবক আকরাম হোসেন ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে মিসাইলের আঘাতে নিহত হওয়ার পর সবার নজরে আসে। ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখে তিনি রাশিয়ায় যান। কিন্তু দালালেরা তাঁকে রুশ সেনাবাহিনীতে ‘চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা’ হিসেবে নিয়োগ করে। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে পাঠানো হয় ইউক্রেনে। গত ১৪ এপ্রিল সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ধারদেনা করে সাত লাখ টাকা জোগাড় করে পরিবার তাঁকে পাঠিয়েছিল রাশিয়ায়।

অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা যাচ্ছেন অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। এমন ঘটনা কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশিদের নামও উঠে আসছে প্রায় সময়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশে এইচআইভির নীরব বিস্তার, আগামী প্রজন্ম কি নিরাপদ?
  • যুদ্ধ ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের আয়ের রেকর্ড, তালিকায় মাস্কের স্পেসএক্সও
  • ব্যবসা-বাণিজ্যে কমলেও ভোক্তাঋণে বড় প্রবৃদ্ধি কেন
  • শেখ হাসিনার বিচার: ন্যায়বিচার বনাম ন্যায়সংগত বিচারপ্রক্রিয়ার প্রশ্ন
  • ১২ বলে ফিফটি আর ৩২ বলে সেঞ্চুরি করলেন অভিষেক, ছক্কার নতুন রেকর্ড
  • এসএসসি ও এইচএসসিতে নম্বর বাড়ানোর সংস্কৃতি ফিরবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা
  • বিগ ফোর-এর জায়গায় কি উচ্চশিক্ষার নতুন গন্তব্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেন
  • ইউক্রেনে মিসাইলে, ভূমধ্যসাগরে জলদস্যুদের গুলিতে আমরা মরবই?
  • এইচএসসিতে বৃত্তি পাচ্ছেন সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী, দেখুন বোর্ডভিত্তিক তালিকা
  • স্বাস্থ্যে প্রকল্প থেকে সরছে সরকার: ১৭ মাস বেতনহীন, চাকরি হারানোর শঙ্কা