নতুন রাজধানীর কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
Published: 16th, October 2025 GMT
শূন্যতা মানুষকে নতুন রূপে গঠনের সুযোগ এনে দেয়। স্বাধীনতা-উত্তর নতুন বাংলাদেশ গঠনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, রাজনৈতিক শূন্যতার কারণে সেটা বারবার পরাভুত হয়েছে। দেশ গঠনের স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক আমলে নিলে বলতে হয়, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবি-জন্ম অস্থির আর পিচ্ছিল সময়ে। ফলে দেখা যাবে রাজপথ থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে কিংবা অবক্ষয়ী ক্ষমতা বদলের লড়াই থেকে কবিতার ভাষা নির্মাণে শূন্যতার বিপরীতে রুদ্রর কবি-জন্মে এক লৌকিক উচ্চকিত স্বর। অনমিত স্বরের কারণে কেউ কেউ রুদ্রকে ‘স্লোগানের কবি’ বলে বাতিল করতে চান। বস্তুত কবিতা স্বাপ্নিক আকাঙ্ক্ষার ভাষা হয়ে উঠলে স্লোগান কিংবা প্রবাদে রূপান্তরিত হয়। ফলে ‘স্লোগান হলে কবিতা ক্লিশে হয়ে যায়’—তর্কটি পুরোনো ও ক্লিশে। এমন চিন্তা কিছুটা পশ্চাৎপদ। মানুষ বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে ভবিষ্যত নির্মাণ করতে পারে না। সেটা সম্ভবও নয়। কবি হিসেবে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সেই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করেননি; বরং আমলে নিয়ে গণমানুষের কাতারে হাজির থেকেছেন নানা লড়াই-সংগ্রামে। সামাজিক শূন্যতা আর রাজনৈতিক বাস্তবতাই রুদ্রকে কবি বানিয়েছে। তবে প্রশ্ন থাকে—তাঁর কবিতার গড়ন কী?
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা কবিতার একজন জাত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১)। জাত কবি এ জন্য—শুরু থেকে রুদ্র কবিতার পেছনে অপব্যয় করেননি। কবিতা দিয়েই ৩৫ বছরের জীবনে শুরু আর শেষ। যেন কবিতার অব্যয় তাঁকে গ্রাস করেছিল আমৃত্যু। তাঁর মানসটাই অন্তর্গতভাবে কবি হয়ে জন্ম নিয়েছিল। শব্দ ছুঁলেই যেন কবিতা তাঁর কাছে কুর্নিশ করে। মুহূর্তকে সময় করে তোলা কাব্যে সহজ নয়। কারণ, কবিতায় সেটা সমকালকে অতিক্রম করতে হয়। এটা স্মৃতিকে কাব্যে পরিণত করার এক আরাধ্য কৌশল। এ কৌশল কৃত নয়, অধরাকে শিল্পের কৌশলে বাগে আনার পথ।
অনমিত স্বরের কারণে কেউ কেউ রুদ্রকে ‘স্লোগানের কবি’ বলে বাতিল করতে চান। বস্তুত কবিতা স্বাপ্নিক আকাঙ্ক্ষার ভাষা হয়ে উঠলে স্লোগান কিংবা প্রবাদে রূপান্তরিত হয়। ফলে ‘স্লোগান হলে কবিতা ক্লিশে হয়ে যায়’—তর্কটি পুরোনো ও ক্লিশে।ভাষার এমন স্বতঃস্ফূর্ততা আর অভিব্যক্তির বাসনা তাঁকে সহজ কাব্যকাঠামো দিয়েছে। কবিতা নিয়ে তাঁর জবানবন্দি (সাক্ষাৎকার ফারুক মঈনউদ্দীন, চিত্রবাংলা, ঢাকা, ২ মে ১৯৮২) এমন—‘কবিতার সংজ্ঞা দেয়া খুব কঠিন। যে লেখাটি সমকালের স্মৃতি বা স্বপ্নকে তুলে আনতে সক্ষম এবং একই সাথে সমকালকে অতিক্রমের যোগ্যতা রাখে তাকেই বোধহয় কবিতা বলা যেতে পারে। অবশ্য তা হবে কবিতার অন্যান্য ব্যাকরণের শর্ত সাপেক্ষে।’
২রুদ্র কবিতার সংজ্ঞায় বারকয় ‘স্মৃতি বা স্বপ্ন’–এর কথা বলেছেন। কেন বলেছেন? উত্তর সহজ—স্মৃতি হচ্ছে অতীতবাহিত জীবনের সেই অংশ, যা বর্তমানেও বাহিত হয়। আজ বাদে কাল মানে বর্তমানকে বহন করতে হয়। এটা ফেলা আসা সময়ের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত ঘটনার না ভোলা মনের কুঠুরি, যা ছবি হয়ে ভাসে। ভাষা হয়ে থাকে। বর্তমানকে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে। স্মৃতি তো একই সঙ্গে আনন্দদায়ক সুন্দর নতুবা উশৃঙ্খল সংবেদনার জাগরিত সত্তা। নিছক অতীতের ঘটনা কিংবা মনের সংবেদনার স্মৃতিই লেখাই তো কবিতা নয়। তাই রুদ্র ‘বোধহয়’ ভাবের আশ্রয় নিয়েছেন। ভাববাচ্যে বোধহয় সংশয়ী অর্থবোধক। ‘হতে পারে’ কিংবা ‘হতে পারে না’—এমন সংশয় কবিকে কল্পনাপ্রবণ করে তোলে। অনির্দিষ্ট কল্পনাই তো কাব্যের প্রথম শর্ত। এমনকি দর্শনের ধারণার সূত্রপাত কল্পনায়। আর কল্পনার সঙ্গে রূপকাশ্রয়ী ভাষাই কবিতা সৃষ্টির অমোঘ পথ। রুদ্র সেই পথ অনুসরণ করেছেন। এক কাব্যগ্রন্থ থেকে আরেক কাব্যগ্রন্থ বারবার বদল করেছেন ভাষার গতিপথ।
‘তিরিশি উন্মুল আধুনিকতা’র রুদ্র যে সমালোচনা করেছেন, ভাষার ক্ষেত্রে তা থেকে মুক্ত হতে পারেননি তিনি। অবশ্য তিনি সরল ভাষায় স্বীকার করেছেন, ‘ভাষার দিক থেকে আধুনিক কবিতার চালু ভাষাই ছিল ওটাতে।’ কবির এমন সৎ ভাষণ পরের কাব্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯) রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর প্রথম কবিতার বই। আহমদ ছফার বুক সোসাইটি ছিল বইটির প্রকাশক। প্রথম কাব্যগ্রন্থে রুদ্র প্রবল-প্রতাপে একজন দুরন্ত কবির উপস্থিতি জানান দেন। অনুপ্রাসের কারণে বইটির নামেও ধ্বনিগত ঝংকার আছে। আছে বেদনার্ত আর্তনাদ, কষ্টগাথা হাহাকার। বিপদসংকুল জনপদের হতাশা, যন্ত্রণা আর ক্ষোভ এ গ্রন্থের আশ্রয়। মানব সংবেদনার এক অবিচ্ছেদ্য বিচ্ছেদের কাব্যগ্রন্থ উপদ্রুত উপকূল। কেন অবিচ্ছেদ্য বিচ্ছেদ? কবিতায় তিনি গ্রাম আর শহরকে উপজীব্য করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন গ্রাম আর নগরের বিচ্ছেদ কত দূর। গ্রাম ছেড়ে আসা মানুষের দুটো জিনিস সঙ্গ হয়। একটি তাঁর আত্মপরিচয়, অন্যটি ফেলে আসা দিনের স্মৃতি। নাগরিক জীবনে মানুষ অবিচ্ছেদ্যভাবে স্মৃতিকেই বয়ে বেড়ায়। ভাব বিচ্ছেদের এই অবিচ্ছেদ্য রূপান্তরকে তিনি কাব্যজ্ঞান করতেন। অবশ্য বইটি নিয়ে রুদ্রের ভাষ্য, ‘জীবনকে জান্তবভাবে বিচার করা যুক্তিসংগত নয় বরং তা অবাস্তব। মানুষকে মানুষ হিশেবে নেয়া উচিত। হিশেব নিকেশ কোরে জীবন চলে না, যারা চালাতে যায় তারা হয় নিজেকে প্রতারনা করে, নয়তো জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’
রুদ্র কি গ্রাম আর নগরের মিলন চেয়েছেন? না, প্রথম গ্রন্থে তিনি এক জান্তবনগরকে দেখিয়েছেন। যে নগর অমানবিকতার, নির্মম অত্যাচারের। যে নগর খাণ্ডবদাহনের, অবর্ণনীয় হত্যার। যে নগর হতাশার, করুণ আশাহতের। যে নগর অসম জীবনের, নষ্ট বেদনার। যে নগর ভুল বোধের, ভুল চেতনার। যে নগরে প্রেম নেই, আছে শুধু তিষ্ঠ ক্ষণকালের হাহাকার। কবিতায় বিষয়-আশয়ে তিনি এমন এক নগর উপস্থাপন করেছেন, যে নগর অবক্ষয়ের অনন্য নজির। আধুনিক কবিতার নানা উপাদান তাঁর কবিতার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। প্রথম গ্রন্থের কাব্য প্রবণতা বিচার করলে দেখা যাবে, রুদ্র মূলত শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী ঘরানারই কবি। তবে কাঠামোগতভাবে তাঁর কবিতা গদ্যধর্মীই বটে। মজার ব্যাপার হলো, ‘তিরিশি উন্মুল আধুনিকতা’র রুদ্র যে সমালোচনা করেছেন, ভাষার ক্ষেত্রে তা থেকে মুক্ত হতে পারেননি তিনি। অবশ্য তিনি সরল ভাষায় স্বীকার করেছেন, ‘ভাষার দিক থেকে আধুনিক কবিতার চালু ভাষাই ছিল ওটাতে।’ কবির এমন সৎ ভাষণ পরের কাব্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
৩রুদ্রর কবিতায় নতুন মাত্রা কী? বলা যায়, উপদ্রুত উপকূল কাব্যগ্রন্থে বেশির ভাগ কবিতা রুদ্র তাঁর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটেই লিখেছেন। সময়কে তিনি ইতিহাসের দায় করে নিয়েছেন। সাহিত্যচিন্তা রচনায় রুদ্র দায়কে দেখেছেন এভাবেই, ‘নিসন্দেহে জীবনের বাইরের কিছুকে আমরা আমাদের লেখার বিষয়বস্তু করতে অপারগ। অর্থাৎ আমাদের সকলেরই লেখার বিষয়বস্তু জীবন—যা-কিছু নিয়ে জীবন এবং জীবনকে নিয়ে যা-কিছু তাই।’ বিদ্যমান জগদ্দল রাজনৈতিক সমাজ আর অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তিনি সত্যিই একজন সোচ্চার কণ্ঠ। দায় তাঁর মানবিক পরিসরের, গণতান্ত্রিক সমাজের। ফলে সমকালে সংঘটিত ঘটনার প্রতিক্রিয়া তাঁর কবিতাকে স্লোগানমুখর করে তুলেছিল। নিছক স্লোগান তো কবিতা নয়! স্লোগানকে কবিতা করে তুলতে তিনি ধ্বনি আশ্রয়ী হয়েছেন। ধ্বনির ভেতরের সুর আর লয়ের কারণে তাঁর কবিতা কণ্ঠলালিত্য পেয়েছে। বলা চলে, শ্রুতমুখর কবিতার এক অনন্য কবি তিনি। আমরা এমন কাব্যের নাম দিয়েছি উপযোগবাদী কবিতা।
উপযোগবাদী কবিতা কী? নিজের সময়ের প্রতি দায়, নির্যাতিত মানুষের প্রতি দায়, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতি দায়, সমাজের প্রতি দায়, দেশের প্রতি দায়, পৃথিবীর প্রতি দায়, জীবন-প্রকৃতির প্রতি দায়—দায়ের এমন অনেক ফিরিস্তির কথা আমরা বলতে পারি। উপযোগবাদী কবিতা মূলত সমকালীন সমাজ-বাস্তবতার কথা বলে। কবিতার প্রধান উপজীব্য বিষয়—সাম্য আর মানবিক মর্যাদা, জীবন আর মানুষ, ন্যায়বিচার আর শ্রেণিহীন সমাজ। কিন্তু উপযোগবাদী কবিতা যখন শিল্পের দায় মেটায়, তখন সেটা নিজের সমকালকে অতিক্রম করে। মানুষ, দেশ, সমাজ আর রাষ্ট্র সংকটে পড়লে এমন কবিতার কাছে দ্বারস্থ হতে হয় সবাইকেই। যেকোনো লড়াই-সংগ্রামে, দাবিদাওয়া–চাহিদায়, মুক্তির বাসনায় উপযোগবাদী কবিতাই সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ভাষা। অতীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ জাতীয় কবিতা মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, ঠিক তেমনি চব্বিশের ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর দেয়ালে, পোস্টারে রুদ্রের কবিতা শোভা পেয়েছে। অবশ্য উপযোগবাদী কবিদের আমাদের সমাজ আদর করে ডাকে ‘সময়ের কণ্ঠস্বর’। তবে একটি কথা না বললেই নয়। উপযোগবাদী কবিতার বড় দোষ, কবিতায় অতিকথনের ভার বইতে হয়। রুদ্রর কবিতাও সেই দোষে খানিকটা দুষ্ট।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ স্বল্পায়ুর বহুলপ্রজ লেখক। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩৫ বছর। স্বল্প লেখকজীবনে তিনি অবিরল লিখেছেন কবিতা, গান, গল্প, নাটক, চিত্রনাট্যসহ নানা ধরনের লেখা। কম বয়সে চলে যাওয়ায় আমরা রুদ্রর সাহিত্যের পূর্ণ বিকাশ দেখতে পাইনি।দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থে ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম’ কবিতার স্বর নিচু। কারণ, ভাষায় আঞ্চলিক শব্দের মিশাল। আত্ম-অন্বেষণের পথ খুঁজেছেন। জাতিসত্তার মর্মমূল উৎসের কাছে ফিরে যেতে চেয়েছেন। জাতি-গোত্র, ধর্ম-সম্প্রদায়ের বিভেদহীন সমাজ চেয়েছেন তিনি। সবচে বড় ব্যাপার, রুদ্র কবিতায় সমাজের সংকটের কথা বলেছেন বারবার। বিপরীতে বলেছেন স্বপ্নের কথা। সাহিত্যচিন্তা রচনায় সেই বাসনার তালিকা পাই আমরা—‘আমরা তো এক সুন্দর পৃথিবীর কথা লিখতে চাই। আমরা তো এক অপরূপ পৃথিবীর স্তবগান লিখতে চাই। আমরা তো ওই মেঘ, ওই বিকেলের সোনালি আলোর নিচে রেশমের মতো ঝিলমিল মেঘের সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে চাই। আমরা তো মত্ত গর্জনময় পৌরুষ সাগরের স্তব করতে চাই। আমরা তো শস্যের ডগায় একটা সোনালি ফড়িং-এর অপরূপ ডানার কারুকাজের প্রশংসা করতে চাই। আমরা তো পৃথিবীর সেই সুন্দর নারীর নাকের ডগার মিহি লোমে দূরতম স্বাতি নক্ষত্রের ঝ’রে পড়ার সুষমা জানাতে চাই। আমরা তো এক তরুন তরুনীর উদ্দাম স্বপ্নময়তার ছবি লিখতে চাই। আমরা তো একটি স্বাস্থ্যবান লাবন্যময় শিশুর কথা লিখতে চাই। চাই এক সুস্থ সবল কৃষকের কথা লিখতে। যে কবি গানের আসরে বোসে ভাতের কথা ভাবে না—গানের সৌন্দর্যর কথা ভাবে। আমরা তো সেই সুখি মেয়েটির কথা লিখতে চাই যে ভালোবেসে প্রিয় মানুষের কাছে গেছে।’ তাঁর এ বাসনার স্ফূরণ দেখতে পাই আমরা ‘মানুষের মানচিত্র’ কাব্যগ্রন্থে।
‘মানুষের মানচিত্র’ মূলত স্বপ্নগ্রস্ত ঘোরের এক কাব্যগ্রন্থ। তিনি এমন এক দেশের মানচিত্র এঁকেছেন যে দেশ ক্ষমতাতান্ত্রিক নয়, যে দেশ গণতান্ত্রিক গণমানুষের। যে দেশ বাক্স্বাধীনতা হরণের নয়, যে দেশ মুক্ত মনের। যে দেশ খুনের নয়, স্বাভাবিক জীবনের। যে দেশ নির্যাতকের নয়, যে দেশ মানবিকতার। যে দেশ নিষ্ঠুরতার নয়, যে দেশ প্রেমের। যে দেশ স্বৈরাচারের প্রকোষ্ঠের নয়, যে দেশ জনগণের। যে দেশ শ্রেণি শোষণের নয়, যে দেশ সমবণ্টনের। রুদ্রের কবিতার এসব স্বপ্নের দিকে তাকালে আমরা অভূতপূর্ব এক দেশ দেখতে পাই। তবে বাস্তবতার নিরিখে স্বপ্নের সেই দেশ এক ‘ইউটোপিয়া’। এমনকি এ দেশ টমাস মুরের ইউটোপিয়া নয়। যেখানে নতুন মানচিত্রের স্বাধীন রূপরেখা পাওয়া যাবে। মনে হয় রুদ্রের মানচিত্রের পুরো দেশটাই একটা শ্রেণিহীন সমাজের নতুন রাজধানী। যেখানে জীবন আর প্রাণপ্রকৃতি একাকার। সেই রাজধানীর স্বাধীন একজন কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। আমরা তাঁকে সালাম জানাই।
৪রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ স্বল্পায়ুর বহুলপ্রজ লেখক। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩৫ বছর। স্বল্প লেখকজীবনে তিনি অবিরল লিখেছেন কবিতা, গান, গল্প, নাটক, চিত্রনাট্যসহ নানা ধরনের লেখা। কম বয়সে চলে যাওয়ায় আমরা রুদ্রর সাহিত্যের পূর্ণ বিকাশ দেখতে পাইনি। ফলে তিনি আমাদের কাছে তরুণই রয়ে গেছেন। তিনি আমাদের কাছে প্রৌঢ় নন, চির তরুণ এক কবি। তারুণ্যের স্পর্ধাও বটেন। উত্তাল সময়ের সাহসের অনন্য নজির তিনি। কবির কাজ মানুষের মনের কথা বলা। তিনি সাহিত্যে সেই কর্মটি করেছেন। কবিতায় তিনি ভালোবাসা বিলিয়েছেন অবলীলায়। প্রেমে আর সংগ্রামে কণ্ঠকে উচ্চকিত করেছেন। ফলে পাঠকপ্রিয় হয়েছেন বিস্তর। মূলত ধ্বনি আশ্রয়ী কবিতা ও গান রুদ্রকে গণমানুষের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। সময়ের ভাষ্য রূপে সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতির সংকটে তার কবিতা গণমানুষের মুখে ভাষা জুগিয়েছে।
কবিতার এমন সামাজিক দায়কে রুদ্র অস্বীকার করেননি; বরং তিনি ক্লেদজ সমাজের নানা চ্যুতিবিচ্যুতির অবক্ষয়ী ক্ষমতা কাঠামোর ক্ষতচিহ্নগুলো কবিতায় ধারণ করেছেন। সংকটকালে যে মধ্যবিত্ত লড়াইয়ের মাঠ থেকে পালায়, রুদ্র সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিপরীতে দাঁড়িয়ে যান। মূলত তাঁর কাছে এ দাঁড়িয়ে থাকা শুধু সামাজিক দায় নয়, ভবিষ্যতের স্বপ্নের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। রাজনৈতিক শূন্যতাকে কবিতায় তিনি সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। দেখিয়েছেনও। সামাজিক দায় এ জন্য—রুদ্র গ্রাম আর শহরের বিভেদকে সমান বিভেদ আকারে দেখেছেন। ফলে তিনি শহরের সংকটের মোকাবিলায় গ্রামীণ রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি কখনো কখনো সেই রূপককে শহর করে তুলেছেন, যা বিভেদহীন কবির নতুন সমাজের এক স্বাপ্নিক আকাঙ্ক্ষা। যার জন্য সময়ে অসময়ে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ আমাদের সামনে হাজির থাকবেন। সেটাই একজন কবির অতীত আর বর্তমানের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব চ ছ দ য গণম ন ষ র গ র ম আর র জন ত ক ব স তবত র এমন স বল ছ ন স ন দর ম নব ক জ বন র আম দ র গ রন থ র দ রক শ ন যত স বল প নত ন ম কর ছ ন প রথম সমক ল অবশ য সময় র
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ছাত্র ফেডারেশনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান
ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে সোনারগাঁওয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সোনারগাঁও আঞ্চলিক কমিটি। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এদিন ছাত্র ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ সোনারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।
পাশাপাশি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ছিল সোনারগাঁও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সোনারগাঁও মেরিট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও জিআর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাসেবক (ভলেন্টিয়ার) সংগ্রহ কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়।
কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন সংগঠক ফয়সাল হোসেন, নাজমুল হাসান শান্ত, আরিয়ান আহমেদ জুনায়েদ, সফিউল্লাহসহ সোনারগাঁও শাখার নেতৃবৃন্দ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা সাইদুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন সোনারগাঁও শাখার সম্পাদক মোবাশ্বির হোসাইন ও যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম হিমেল।
এ সময় ছাত্র নেতা সাইদুর রহমান বলেন, “ডেঙ্গু শুধু একটি রোগ নয়, এটি আমাদের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার প্রতিফলন। প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার ও মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে।
পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ছাত্র সমাজ এই সচেতনতা তৈরিতে মাঠে আছে এবং থাকবে। স্বাস্থ্যই মানুষের মৌলিক অধিকার, এ অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের আন্দোলনের অংশ।”