ভোট গ্রহণে অসংগতি চোখে পড়েনি, তবে ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি ছিল
Published: 16th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণে কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি। তবে ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি ছিল।
ভোট গ্রহণ শেষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন রাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম। রাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ৯ সদস্যের এই কমিটি গঠন করেছিলেন উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব৷
সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় কমিটির সদস্য সাবেক অধ্যাপক মো.
ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা, প্রার্থীদের এজেন্ট এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি, ভোট গ্রহণ সম্পর্কে জানতে চেয়েছি৷ এ সম্পর্কিত একটা লিখিত প্রতিবেদন আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠিয়েছি। সার্বিকভাবে বলা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে।’
সব মিলিয়ে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলো—এই প্রশ্নে পর্যবেক্ষণ কমিটির সভাপতি বলেন, ‘কয়েকটা হলে ভোটার বেশি ছিল। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা হয়নি। ফলে লম্বা লাইন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে জায়গা বা স্থান নির্ধারণ করা উচিত ছিল। এটা ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে। কিন্তু ভোট গ্রহণের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। আমাদের পর্যবেক্ষণে ভোট গ্রহণে কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি৷ তবে ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি ছিল৷ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
শহীদুল্লাহ কলাভবনে এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকার বিষয়ে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবিরের অভিযোগের বিষয়ে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। ভোটার ও এজেন্টদের প্রশ্ন করেছি৷ তাঁরা কোনো অভিযোগ করেননি। তাঁরা মনে করেন, ভোট ভালোভাবেই হয়েছে।’
রাকসু নির্বাচনে ‘লাইন জ্যামিংয়ের’ অভিযোগ প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মন্নুজান এবং বিজয় ২৪ হলসহ কয়েকটা হলের ভোটারসংখ্যা বেশি থাকা সত্ত্বেও জায়গার সংকুলান না হওয়ায় লম্বা লাইন ছিল। এটা একটা ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ছিল।’
এক প্রশ্নের জবাবে পর্যবেক্ষণ কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করতে একসঙ্গে সব কেন্দ্রে যেতে পারিনি। একটা একটা করে কেন্দ্রে গিয়েছি। প্রতিটি কেন্দ্রে সব দলের এজেন্ট ছিল৷ জিজ্ঞেস করলেও ভোটের বিষয়ে তাঁরা কোনো অভিযোগ করেননি। কেউ জাল ভোটের অভিযোগও করেনি।’
ভুয়া সাংবাদিক কার্ড বানিয়ে এবং টি-শার্ট পরিয়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ করানোর অভিযোগ নিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘ফেসবুকে দেখেছি, সরাসরি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করেননি৷’
ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পর্যবেক্ষণ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। এখন আমি কাউকেই চিনি না। কে বহিরাগত, বর্তমানে আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ট গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
বঞ্চিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্য অন্যায়ভাবে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁদেরও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার।
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিগত সরকারের আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর চাকরিতে বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচার ও প্রতিহিংসার শিকার হওয়া অবসরপ্রাপ্ত ও বরখাস্ত করা কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
এ সময় কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ, কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মুহম্মদ শামস-উল-হুদা, মেজর জেনারেল (অব.) শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ শফিউল আজম এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মুহাম্মদ শাফকাত আলী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক উপস্থিত ছিলেন।
কতজনের জন্য কী কী সুপারিশপ্রেস উইং জানায়, কমিটি মোট ৭৩৩টি আবেদন পায়। যাচাই-বাছাই করে ১৪৫টি আবেদনের ব্যাপারে সুপারিশ করে। তাঁদের স্বাভাবিক অবসর দেওয়া, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে কমিটি।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীতে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার ১১৪ জন কর্মকর্তা সম্পর্কে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর দেওয়া, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। এর মধ্যে চারজনকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
নৌবাহিনীর ১৯ জন কর্মকর্তাকে (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর প্রদান, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
এ ছাড়া বিমানবাহিনীর ১২ জন কর্মকর্তাকে (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর প্রদান, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
যা বললেন প্রধান উপদেষ্টাপ্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন আপনাদের এই কাজটি করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল সামান্য কিছু অনিয়ম হয়তো হয়েছে, কিন্তু আপনারা যে পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে এনেছেন, তা রীতিমতো ভয়াবহ। এটা কল্পনার একেবারে বাইরে।’
এ সময় কমিটির প্রধান আবদুল হাফিজ জানান, আবেদনপত্র পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটি গত ১৯ আগস্ট প্রথম সভা আহ্বান করে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সেন্ট্রাল অফিসার্স রেকর্ড অফিস, আইএসপিআর, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলা হয়। নিজ নিজ বাহিনী গঠিত বোর্ড যাঁদের বিষয়ে সুপারিশ করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো নৈতিক স্খলনজনিত শাস্তি কিংবা অভিযোগ ডোসিয়ারে লিপিবদ্ধ ছিল না।
এই কমিটি নিজ নিজ বাহিনী গঠিত বোর্ডের সুপারিশ আমলে নিয়ে সেগুলোর বাইরেও বিবেচনা উপযুক্ত আবেদনগুলোয় প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং আবেদনকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সুপারিশ করেছে।
কমিটির অনুসন্ধানপ্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির অনুসন্ধানে জানা যায়, আবেদনকারীদের মধ্যে ছয়জন কর্মকর্তাকে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অপবাদ দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিভিন্ন মেয়াদে (১ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত) গুম করে রাখা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এমনকি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, পরে ওই কর্মকর্তার স্ত্রীকে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এক বছরের শিশুসহ বিনা বিচারে দুই দফায় দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে রাখা হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাযজ্ঞের নারকীয় ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে একটি ভুয়া ঘটনা (ব্যারিস্টার তাপস হত্যা প্রচেষ্টা মামলা) সাজিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে। পাঁচজন কর্মকর্তা ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইতে কর্মরত থাকাকালে তাঁদের মিথ্যা অভিযোগে কিংবা বিনা অভিযোগে চাকির থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিছু কর্মকর্তা বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দরবারে প্রশ্ন করার জন্য সেনাসদর কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। একপর্যায়ে ওই দরবারে ব্যাপক হইচই ও হট্টগোল হওয়ায় পাঁচজন কর্মকর্তাকে অযথা দায়ী করা হয় এবং তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। চারজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (লেফটেন্যান্ট পদবির) ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার কারণে তাঁদের কোনো একটি দলের অনুসারী হিসেবে অথবা জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় বলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে।