কয়েকজন উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন: জামায়াতের সেক্রেটারি
Published: 16th, October 2025 GMT
কয়েকজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, আপনি যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছেন, দুই-একজন উপদেষ্টা আপনাকে চারিপাশে ঘিরে, আপনার এই গণতন্ত্রের উত্তরণের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য একটি বিশেষ দলের সাথে গোপন সম্পর্ক রেখে নানাভাবে আপনাকে নানান সময় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এর থেকে আপনি সাবধান থাকবেন, সতর্ক থাকবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মাল্টিপারস মিলনায়তনে ‘জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি: গণভোট ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন গোলাম পরওয়ার।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘একটা বড় দল তো এটাকে বলেছিলেন যে আমরা আগামী পার্লামেন্টে এটা আলোচনা করে ঠিক করি। আবার বলেছেন, আদালতে চলেন, নানা ধারার কথা বলেছিলেন। তার অর্থ হলো এগুলোকে আদালতে নেওয়া, আর আগামী পার্লামেন্টের কথা বলে ভেতরে পাকানো নতুন ষড়যন্ত্রের দিকে বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, নিঃস্বার্থভাবে জাতির নতুন মুক্তির স্বপ্ন যাঁরা দেখছেন, সেই সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে ঐক্যমত কমিশনে যে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেই ভূমিকার কাছে ওই সব বড় দল দাবিদারদের আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে।’
আগামীকাল জাতীয় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামী যাবে কি না, তা নিয়েও কথা বলেছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছি, আমাদের প্রয়োজনীয় যে সমস্ত সমস্যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, তার যে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, সেগুলো আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের কোনো সুযোগ যদি আমরা দেখি, তাহলে আমাদের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি থাকবে না। আমরা আমন্ত্রণ পেয়েছি, কিন্তু আমরা চিন্তা করছি, আমরা কালকে কী ভূমিকা রাখব।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনি এসেছিলেন এ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে, আপনি ইচ্ছা করে আসেননি এবং এসেও আপনি বলেছেন যে “আমার দেশ শাসন করার কোনো ইচ্ছা নাই। আমি একটা স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দিয়ে আমি আমার কাজে ফিরে যেতে চাই।” আমরা খুব দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, আপনি যে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছেন, দুই-একজন উপদেষ্টা আপনাকে চারিপাশে ঘিরে, আপনার এই গণতন্ত্রের উত্তরণের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করার জন্য একটি বিশেষ দলের সাথে গোপন সম্পর্ক রেখে নানাভাবে আপনাকে নানান সময় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এর থেকে আপনি সাবধান থাকবেন, সতর্ক থাকবেন।’
নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি জানিয়ে তার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের একই দিন যদি গণভোট হয়, হিসাব করে আমরা দেখেছি, প্রচুর ভোটার কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবে না। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে, সময় শেষ হয়ে যাবে। ভোটার জানতে পারবে না যে কী কী সংস্কার করছে, গণভোটে ‘হ্যাঁ’, ‘না’ কী হলো। তাই ভোটারকে মাথা ঠান্ডা করে জানার ও ভোট দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে।’ নভেম্বরেই গণভোট হওয়ার উপযুক্ত সময় বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ, সাবেক সচিব জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ইউছুপ আশরাফ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ভ র ন ত কর র চ ষ ট গ ল ম পরওয় র ন উপদ ষ ট কর ছ ন আপন ক গণভ ট ইউন স ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: গোলাম পরওয়ার
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকার নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করলেও সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে জাতির সামনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু ব্যক্তির কুপরামর্শে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, যা নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।’
আজ রোববার বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত আট–দলীয় জোটের সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। আট দলের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মধ্যে এটি প্রথম সমাবেশ।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মন্ডলের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হক আজাদ, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি আনোয়ারুল হক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ হক্কানী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পরিবর্তনের বার্তায় বাংলাদেশের সব মানুষকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা এবং অন্যান্য দল সরকারের নির্বাচনী ঘোষণাকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।’ তিনি জুলাই সনদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করেই গণভোট আয়োজন করা হলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে। সাংবিধানিক, বিচার বিভাগীয় ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত অনেক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এগুলো সম্পর্কে জনগণকে আগে জানাতে হবে। জনগণ না জেনে কোথায় “হ্যাঁ” বলবে আর কোথায় “না” বলবে?’
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। একটি বিশেষ দলের গোপন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ইচ্ছেমতো ডিসি, এসপি ও ওসি নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে নষ্ট করা হচ্ছে। প্রশাসন যদি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে হামলা বন্ধ করতে না পারে, তবে তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে দিনের বেলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পর খুলনার আদালতের চত্বরে দুজনকে গুলি করে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে দেশে প্রকাশ্যে এইভাবে কোর্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়, সেই প্রশাসনের দায়িত্বে নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতি হবে না, ভোটকেন্দ্রে হত্যা হবে না, আমাদের জানমালকে তারা খুন করে ভোটাধিকার লুট চাইবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নাই।’
দেশের সরকার ও পথের পরিবর্তন হলেও জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হক আজাদ। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ১৯৭১, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, প্রতিপক্ষ ঘায়েল হয়েছে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আন্দোলন হয়েছিল, সেই ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’