চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে হামলায় দুই ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিহত মিলন আলীর ছেলে সাদেক আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ ছাড়া হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা হয়েছে।

নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, হত্যা মামলায় ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলা ছাড়া হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও দুটি মামলা করা হয়েছে। সব কটি মামলা করেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম (তুহিন) ও আবু তাহের (খোকন) পক্ষের কর্মীরা।

ওসি মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, পুলিশ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। স্থানীয় গ্রামবাসী এজাহারভুক্ত এক আসামির জামাতাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। হামলাকারীরা আমিনুল ইসলামের অনুসারী হলেও মামলায় আমিনুল ইসলামকে আসামি করা হয়নি।

গত মঙ্গলবার নাচোল উপজেলার মারকইল এলাকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম ও আবু তাহেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে ওই ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৪ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় মিলন আলী ও রাতে আলম আলী নামের দুই ভাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে মারকইল সাহাপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত মিলন ও আলম আলীর লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন স্বজনেরা। একই হামলায় আহত–নিহত ব্যক্তিদের দুই ভাই মো.

আমিরুল ও মো. শরিফুল এবং ভাতিজা মো. তুষার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুই ভাইয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নেওয়ার জন্য গ্রামে এসেছেন। স্থানীয় ফুলবাড়ি, সনকার, মারকইল গ্রামের যৌথ কবরস্থানে তাঁদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

নিহতের স্বজনেরা জানান, হামলাকারীরা নিহত দুই ভাইয়ের বাড়ির জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে চার ভাই ও দুই ভাতিজাকে গুরুতর আহত করেন। মিলন আলীর ছেলে রাব্বানী এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আরও পড়ুনচাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে হামলায় আহত ১৪, বাড়িঘর ভাঙচুর১৪ অক্টোবর ২০২৫

বাড়ির বাইরে চারদিক খোলা একটি ছোট চালের নিচে দড়ির খাটে শুইয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতাল থেকে আসা আমিরুল ইসলামকে। তাঁর এক পা ভাঙা। পায়ের পাতা থেকে উরু পর্যন্ত প্লাস্টার করা হয়েছে। তাঁকে ঘিরে কাঁদছিলেন তারা বানু নামে ছোট বোন ও তাঁদের এক ফুপু।

অপ্রকৃতিস্থের মতো করে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই ভাইকে আল্লাহর কাছে জমা দিয়্যা আইনু। চার ভাই, দুই ভাতিজা গেছনু দুই গাড়িতে কইর‍্যা। ফিইর‍্যা আইনু এক গাড়িতে। এক ভাতিজাও আল্লাহর কাছে বুঝিন চইল্যা যাইবে। ভালো হয়্যাছে, ভালো হয়্যাছে! এ্যার চাহ্যা আর কী ভালো হইবে। সব আল্লাহর ইচ্ছা।’

পুলিশ সুপার রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, রোববার আমিনুল ইসলামের অনুসারী তরিকুল আলমকে সালাম গ্রুপের লোকজন মারধর করেন। এর জেরে মঙ্গলবার আমিনুলের লোকজন ওই হামলা চালান।

আরও পড়ুননাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের২২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ন ল ইসল ম র ল ইসল ম র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

মেক্সিকোতে বারে বন্দুক হামলায় নিহত ৭, আহত ৫

মেক্সিকোর হিদালগো অঙ্গরাজ্যের তুলা শহরের একটি বারে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন পাঁচজনেরও বেশি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। 

পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) তুলা শহরের লা রেসাকা বারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি পিকআপে করে আসা হামলাকারীরা কোনো সতর্কতা ছাড়াই বারের ভেতরে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।

রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় ৬০ মাইল (৯৭ কিলোমিটার) উত্তরে অবস্থিত শহরটিতে গুলিবর্ষণের পর ঘটনাস্থলে চারজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো তিনজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার পরপরই ফেডারেল এবং রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান শুরু করেছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

হিদালগো কর্তৃপক্ষ জানায়, তুলা অঞ্চলটি জ্বালানিচোরাচালানকারীদের সক্রিয় অপরাধী চক্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত। সম্প্রতি এক কার্টেল নেতাকে গ্রেপ্তারের পর থেকে স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এ হামলার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০০৬ সালে কার্টেল দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে মেক্সিকোতে অপরাধমূলক সহিংসতায় প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ১ লাখ ২০ হাজারেও বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ