ট্রাম্পের চাটুকারিতা করেই কি পাকিস্তানের কূটনীতিকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন শাহবাজ
Published: 17th, October 2025 GMT
গাজায় যুদ্ধবিরতি, উপত্যকার পুনর্গঠন এবং সংঘাতপরবর্তী কূটনীতি—এসব বিষয় নিয়েই ছিল মিসরের পর্যটন শহর শারম আল-শেখের সম্মেলনে আলোচনা। তবে সম্মেলনে যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কথা বলতে যান, তখন হাওয়া বদলে যায়। গাজায় ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য একত্র হওয়া ঘরভর্তি বিশ্বনেতার সামনে তিনি যা বললেন, তা কূটনৈতিক কিছু নয়, বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসার ফুলঝুরি।
ভাষণে ট্রাম্পকে ‘শান্তির মানুষ’ তকমা দেন শাহবাজ শরিফ। তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা তোলেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য কৃতিত্বও দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।
এসব শুনে ট্রাম্প যখন আত্মতৃপ্তির হাসি হাসছিলেন, সম্মেলনকক্ষের বাকিদের দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা অবিশ্বাস ও বিস্ময়ের মধ্যে আটকে গেছেন। তাঁরা করতালি দিয়েছিলেন, তবে তাতে সংকোচ ছিল। ট্রাম্পকে নিয়ে শাহবাজের প্রশংসাও অতি দ্রুত খবরের শিরোনাম হয়।
কূটনীতির যেসব প্রচলিত রীতিনীতি মেনে চলা হয়, তার ভিত্তিতে মিসরের সম্মেলনে শাহবাজ শরিফের বক্তব্য ছিল অযৌক্তিক। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান—সম্মেলনে যোগ দেওয়া কোনো নেতাই এমন অনিয়ন্ত্রিত তোষামোদের সুরে কথা বলেননি।
তাই গুরুগম্ভীর এই সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নাটকীয়ভাবে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, যা প্রায় হাস্যরসের শামিল। যদিও এই প্রশংসা কাজে লেগেছে, অন্তত যাঁকে উদ্দেশ করে এই প্রশংসা, সেই ট্রাম্পের ক্ষেত্রে হলেও।
ট্রাম্প এমন একজন মানুষ, যাঁর কাছে আদর্শের চেয়ে নিজের ভাবমূর্তিটা বড়। তাই শাহবাজের বক্তব্যের পর তিনি রাষ্ট্রনায়কের মতো নয়, বরং একজন তারকার মতো আচরণ করেছেন।অপমানজনক নাকি বিরল কৌশল
ট্রাম্পের রাজনীতি চলে আনুগত্যের ওপর। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে শাহবাজের বক্তব্য মোটেও লজ্জাজনক ছিল না। সেগুলো ছিল ট্রাম্পকে উদ্দীপ্ত করার জন্য। ট্রাম্পের কূটনীতির লেনদেনের মঞ্চে তোষামোদ কোনো চাতুরী নয়, বরং অর্থের মতো।
নীতিকথার চেয়ে এক লাইনের অতিপ্রশংসার মাধ্যমে ট্রাম্পের কাছ থেকে বেশি সুনাম কামিয়ে নেওয়া যাবে। কারণ, আত্মকেন্দ্রিক একজন মানুষের কানে আনুগত্যই কূটনীতির মতো শোনায়।
রাজনৈতিক মনোবিদেরা একে ‘নার্সিসিসটিক রিওয়ার্ড লুপ’ বা ‘আত্মকেন্দ্রিক পুরস্কারচক্র’ বলে উল্লেখ করেছেন। এটি এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়ার চক্র, যেখানে বাস্তব কোনো না কোনো প্রশংসার মাধ্যমে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করা যায়।
মিসরের সম্মেলনে শাহবাজ শরিফ হয়তো পাকিস্তানের কৌশলগত স্বার্থগুলো তুলে ধরেননি, তবে একই গুরুত্বের অন্য কিছু অর্জন করেছেন। তিনি নিজেকে এবং আরও বড় পরিসরে বলতে গেলে পাকিস্তানকে ট্রাম্পের শান্তির বয়ানে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। এর ফলে ভাষণের অযৌক্তিকতাই সাফল্যে পরিণত হয়েছে।
সম্মেলনে ট্রাম্পের প্রশংসা করে বক্তব্য দেন শাহবাজ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক টন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
গাজীপুরের শ্রীপুরে সাফারি পার্ক থেকে বিরল প্রজাতির বন্য প্রাণী লেমুর চুরির ঘটনায় পাচার চক্রের সদস্য অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার মজনু মিয়া (৫৫) পাচার চক্রের একজন সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে কাজ করছিলেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কালাইপাড়া এলাকায় স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়। পরে আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, চুরি হওয়া তিনটি রিংটেইল লেমুরের মধ্যে একটি উদ্ধার করা গেছে। অন্য দুটির খোঁজ নেই। সেগুলো উদ্ধারে অভিযান চলছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে যে, চক্রটি গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে চুরি করা বিরল প্রাণীগুলো বিদেশে পাচারের পরিকল্পনা করেছিলেন। মজনু মিয়া ছিলেন এই প্রক্রিয়ার মূল সহযোগী।
গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে পার্কের নিরাপত্তাবেষ্টনী কেটে তিনটি রিংটেইল লেমুর চুরি করা হয়। পরদিন পার্কের কর্মীরা বিষয়টি জানতে পেরে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।
২০১৮ সালে মাদাগাস্কার থেকে পাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু প্রাণী উদ্ধার করে। সেগুলোর মধ্যে চারটি লেমুর গাজীপুর সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। একটি মারা যায়, তিনটি জীবিত ছিল। এই তিন লেমুরই গত মার্চে চুরি হয়। ফলে লেমুর বেষ্টনী এখন খালি।